একটি একটি করে সেকেন্ড পার হচ্ছিল, আর আর্জেন্টিনা সমর্থকদের বিষাদ আরও গভীরতর হচ্ছিল। তবে কি আশঙ্কাই সত্যি হবে? বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হবে লিওনেল মেসিকে? বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন প্রথম রাউন্ডেই মুখ থুবড়ে পড়বে ক্ষুদে ম্যাজিশিয়ানের?
একটু একটু করে আশার প্রদীপ নিভতে বসেছিল কোটি আর্জেন্টিনা সমর্থকের। ৮৬ মিনিটে সেই প্রদীপ আচমকাই দপ করে জ্বালিয়ে দিলেন মার্কোস রোহো। সেই মার্কোস রোহো, চার বছর আগে যার গোলেই নাইজেরিয়াকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেই মার্কোস রোহো, যাকে ঠিক আগের ম্যাচেই বাদ দিয়েছিলেন সাম্পাওলি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই ডিফেন্ডারই শেষ পর্যন্ত শত কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকের চোখের মণি হয়ে রইলেন। তাঁর শেষ মুহূর্তের অসাধারণ ফিনিশিংয়েই যে বিশ্বকাপে টিকে রইলেন লিওনেল মেসি!
মেসির নিজেরও কি বেশিরভাগ কৃতিত্ব প্রাপ্য না? আগের দুই ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন বললেও কম বলা হবে। এক কথায় বলতে গেলে দলে কোন অবদানই রাখতে পারেননি। তার চেয়েও বড় কথা, তাঁর শরীরী ভাষায় যেন প্রতিদ্বন্দিতার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই মেসিই আজ শুরু থেকে কি চনমনে! শুরু থেকেই বক্সে ঢুকেছেন, গোলে শট নিয়েছেন। যেন বুঝে গিয়েছিলেন, তিনি ছাড়া এই দলের হাল ধরার আর কেউ নেই।
হালটা বেশ শক্ত করেই ধরেছেন তিনি। ১৪ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে এভার বানেগার দুর্দান্ত লং বল তার চেয়েও বেশি দুর্দান্তভাবে নিয়ন্ত্রণে নিলেন, তারপর সেটিকে নামিয়ে এনে নিখুঁত শটে পরাস্ত করলেন নাইজেরিয়া গোলকিপারকে। সেটিও কি না ডান পায়ে, যেটি তাঁর তুলনামূলক দুর্বল পা। মেসির সেই গোলেই আশা পেলো আর্জেন্টিনা, প্রথমার্ধের বাকি সময়টা সেই লিড ধরে রাখলো বেশ ভালোভাবেই।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই পাল্টে গেলো ম্যাচের চিত্র। এই বিশ্বকাপ যেন পরতে পরতে সাজিয়ে বসেছে চমকের ডালা, সেটি থেকে বঞ্চিত হলো না আজকের ম্যাচও। প্রথমে নিজের ভুলে কর্ণার উপহার দিলেন নাইজেরিয়াকে, তারপর সেই কর্ণারের সময়ই নাইজেরিয়ার এক খেলোয়াড়কে টেনে ধরার অপরাধে নাইজেরিয়াকে পেনাল্টি উপহার দিলেন হাভিয়ের মাশচেরানো। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই পেয়ে যাওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করেননি ভিক্টর মোসেস।
আর্জেন্টিনা তখন মরিয়া হয়ে গোল খুঁজছে। গোলের নেশায় সাম্পাওলি মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন পাভন-আগুয়েরোকেও। সুযোগ এসেও গিয়েছিল একবার। ডি বক্সে একেবারেই ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়েও বক্সের উপর দিয়ে মেরে আরও একবার আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে নিজের গোল মিসের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। শেষ মুহূর্তে রোহোর অমন গোল না হলে হয়তো আজও অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারতো তাঁকে।
তবে এখন আর সেসব ভাবার সময় নেই আর্জেন্টিনা ভক্তদের। শেষ ষোলো যে নিশ্চিত হয়ে গেছে!