কথা বলবার সময় আমরা অনেকেই মুখ দিয়ে ‘অ্যা’, ‘উম’ ইত্যাদি আওয়াজ নিঃসরণ করে থাকি। এর কারণ কী?
বিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে অনেকদিন ধরে খেয়াল করে চমৎকার একটি গবেষণা করেছেন। তাদের দেয়া তথ্য মতে, কোনো ব্যক্তি যখন এইধরনের শব্দ করে কথা বলে, তখন একটি বিশেষ্য উচ্চারিত হয়। অর্থাৎ, কথা বলবার সময় যদি কোনো বিশেষ্য শব্দ বলতে হয়, তবে তার আগে মুখ দিয়ে অ্যা, উম এইজাতীয় আওয়াজ নিঃসরণ ঘটে থাকে।
গবেষকরা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে একজন ব্যক্তি কোনো কথা বলতে গিয়ে বাক্যের মাঝামাঝি অবস্থানে গিয়ে একটু আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করে। বাক্যটি যখন এরপর শুরু হয়, তখন সেখানে একটি বিশেষ্য এবং ক্রিয়াবাচক শব্দ চলে আসে। এর কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছেন যে একটি বিশেষ্যবাচক শব্দ বলবার সময় আমরা সেটিকে দৃশ্যের মাধ্যমে ভিজুয়ালাইজ করবার চেষ্টা করি। যেমন কোনো কিছু “দেখা” বলবার সময় আমরা সেটিকে মনের মাঝে আসলেই দেখতে চেষ্টা করে থাকি, ঠিক তেমন।
মানুষ যখন কথা বলে, তখন নানা ধরনের বাক্য ও কঠিন কঠিন শব্দ উচ্চারণ করে থাকে। তবে পরিচিত ও সহজ শব্দ উচ্চারণ করবার সময় নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নেবার কারণে সে একটু সময় নিয়ে থাকে।
ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারড্যামের ভাষাতত্ত্ববিদ ফ্র্যাঙ্ক সিফার্ট বলছেন যে একজন ব্যক্তি যখন বিশেষ কিছু বলতে যায় বা অপরিচিত একটি শব্দ ব্যবহার করতে যায়, তখন তাকে কিছুটা সময় নিতে হয়। এই সময় নেবার কারণে তাকে এর মাঝেই পরিকল্পনা করে নিতে হয় যে শব্দটি সে কীভাবে উচ্চারণ করবে। ফলে দেখা যায় যে তার মুখ দিয়ে অ্যা, উম এমন শব্দ বেরিয়ে আসে। নতুন এই গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের শব্দ ও বাচনভঙ্গি রেকর্ড করে পরীক্ষা করেছেন। এই পরীক্ষাগুলোর ফলাফলের মাধ্যমে একটি ফলাফল সাধারণভাবে বেরিয়ে এসেছে। আর তা হচ্ছে, জটিল শব্দ উচ্চারণ করবার সময় মানুষকে একটু সময় নিতে হয় এবং এই পরিকল্পনার মাঝে তার মুখ দিয়ে নানা ধরনের বিজাতীয় শব্দ নিঃসৃত হয়ে থাকে।
এই পরীক্ষাটি করতে গিয়ে গবেষকেরা ৯টি ভাষার সাহায্য নিয়েছেন এবং দেখেছেন যে বিশেষ্য ও ক্রিয়াবাচক শব্দ উচ্চারণ করবার সময় মানুষ এইজাতীয় শব্দ ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে কয়েকটি নতুন জিনিষ বেরিয়ে এসেছে।
১) নতুন এবং অপরিচিত শব্দ উচ্চারণ করবার সময় মানুষ সময় একটু বেশি নিয়ে থাকে।
২) বিশেষ্যবাচক শব্দ ব্যবহার করবার সময় মানুষ নিজেদের মানসপটে শব্দটি ভিজুয়ালাইজ করবার চেষ্টা করে কিন্তু এই সময়ে সে চুপ করে থাকতে পারেনা, যার ফলে নিরার্থক নানা ধ্বনি নিঃসৃত হয়।
৩) বিশেষ্য ও ক্রিয়াবাচক শব্দ ব্যবহার করবার সময় মানুষ একটু থেমে উচ্চারণ করে।
৪) থেমে কথা বলবার সময় মানুষের যে সময়টি প্রয়োজন হয়, সে সময়টি সে অপ্রয়োজনে ব্যয় করে থাকে যার কোনো অর্থ নেই।
(সূত্রঃ লাইভ সাইন্স)