চেকা, জিপিইউ, এন কেভিডি, এমজিবি এবং কেজিবি। এই সবই একই ধরণের সংগঠনের অস্তিত্বের নাম যা প্রকাশ করে হাজারো গোপনীয় বিভীষিকা যার মূল চাবিকাঠি একটি প্রতিষ্ঠানের হাতেই, যার নাম- সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশ; সোভিয়েত ইউনিয়নের ভয়ঙ্করতম গোপন পুলিশ প্রশাসন। রাষ্ট্রের ও রাষ্ট্রপ্রধানদের হয়ে দমন-পীড়নের এক ভয়ানক মানব অস্ত্র। ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের পর, রাশিয়ার কমিউনিস্টরা রাজনৈতিক প্রতিরোধের যে কোন প্রতীকি আন্দোলন বাতিল করার জন্য যাদের মাধ্যমে দমনমূলক সহিংসতা ব্যবহার করেছিল, যাদের নামে আজও কেঁপে উঠে অনেকের বুক, তারা সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশ।
সেই ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের রাজত্বকালে, ইউনাইটেড স্টেটস অব সোভিয়েত রাশিয়া (ইউএসএসআর) এর অধীন বিভিন্ন গোপনীয় পুলিশ সংস্থাগুলি লক্ষ লক্ষ সোভিয়েত নাগরিকদের হত্যা করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়। একমাত্র জোসেফ স্ট্যালিনের শাসনামলেই, ২৯ মিলিয়ন মানুষকে বাধ্যতামূলক কৃষক পুনর্বাসনের নামে ভয়ানক কাজের চাপে সোভিয়েত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে (যা গুলাগ নামে পরিচিত) হত্যা করা হয়। অন্যরা বলছেন যে স্ট্যালিনের শাসনামলে যে হত্যা পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ রয়েছে তার চেয়েও ঢের বেশি মানুষ রক্তাক্ত সংঘর্ষে নিহত হয়। আর সেই ধারণাকে সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে।
যাই হোক, অনেক মানুষই স্ট্যালিনের অপরাধ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু, সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশ দ্বারা সংঘটিত গর্হিত ও নৃশংস অপরাধগুলো সম্পর্কে খুব কম লোকই জানেন। দুঃখজনক হলেও সত্য বিভিন্ন সোভিয়েত সংস্থার নেতৃত্বে অনেক পুরুষই ছিলেন লেনিন বা স্ট্যালিনের চেয়েও অধিক রক্ত পিপাসু ও একনায়কত্বে বিশ্বাসী। নিচে এমন কিছু নৃশংস সোভিয়েত ক্ষমতাশালী অপরাধীর কথা তুলে ধরা হলো।
ইয়াকোভ পিটারঃ একজন ব্যাংক ডাকাত এবং নৃশংস খুনী
ইয়াকোভ পিটার- নাম টি তেমন সুপরিচিত নয়। পিটার জাতিগত ভাবে একজন লাটভীয় ছিলো। সে বেড়ে উঠেছিলো রাশিয়ান রাজতন্ত্র , বা আরও ভালোভাবে বললে জারদের শাসনামলে। লাটভিয়া সরাসরি ছিল রাজতন্ত্রের অধীনে। সেই সময়ে, লাটভিয়া (তারপর কুল্যান্ড এবং লিভোনিয়া বলা হয়) আনুষ্ঠানিকভাবে মস্কো দ্বারা শাসিত। তখন বাল্টিক জার্মানরা সত্যিই ভীষণভাবে শোষিত। পিটারের বাবার মত চাষিরা তখন কম মজুরীতে জার্মান আর্যদের (উচ্চবংশীয়) খামারে কাজ করতো। জার্মান উচ্চবংশীয়রা তখন সর্বোচ্চ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করত। যখন পিটার প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠেন, তখন পিটার লাটভীয় সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দেন। যা ছিলো রিগা শহরের একটি বিপ্লবী রাজনৈতিক দল।
১৯০৫ সালে অনুষ্ঠিত রাশিয়ান বিপ্লবের অংশ নেওয়ার পর, পিটার লন্ডনে স্থানান্তরিত হন যেখানে তিনি সহকারী ল্যাটিন কমিউনিস্টদের সাথে যোগদান করেন। ১৯১০ সালের শেষের দিকে, পিটার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক সমমনা সমর্থক, “পিটার দ্য পেইন্টার” নামের এক কুখ্যাত ডাকাতের সাহচর্যে, বিভিন্ন দোকানে লুটপাট শুরু করে এবং এমনকি লন্ডনের হাউন্ডডাইচের একটি ট্রেনেও তারা ডাকাতি করে। এই সকল অপরাধের মাঝে দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগও উত্থাপিত হয়। উভয় হত্যাকান্ডের জন্য লেখক ডোনাল্ড রামব্লিউ, পিটারকে দায়ী করেছেন।
লাটভীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের দরুন পহেলা জানুয়ারি ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথে সম্মিলিত হয়ে লন্ডনের পুলিশ অফিসার এবং রাইফেলম্যানরা “পিটার দ্য পেইন্টার” এবং তার সহকর্মীদের “সিডনি স্ট্রীটের অ্যাপার্টমেন্ট” অবরুদ্ধ করে। দুই পক্ষের মধ্যে বিকেল পর্যন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা বন্দুক যুদ্ধ হয়। বন্দুক যুদ্ধে ঘটনা স্থলেই দুইজন সন্ত্রাসী নিহত হয় ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা গুলি বিদ্ধ হয়। আহত পুলিশ কর্মকর্তা এক মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে পরিশেষে হার মেনে মৃত্যুর কোলেই ঢলে পড়ে।
পিটার বিন্দুমাত্র ক্ষতির শিকার না হয়ে লন্ডনে অপ্রত্যাশিতভাবে নিরাপদে লুকিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি লাটভিয়াতে ফিরে আসেন এবং তারপর ১৯১৭ সালের বিপ্লবের সময় লাটভিয়া থেকে রাশিয়ায় চলে যান। রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমে সোভিয়েত বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর, পিটারকে সোভিয়েত স্টেট সিকিউরিটি ওরফে চেকা’র প্রথম ডেপুটি চীফ হিসেবে মনোনীত করা হয়। এই পদে আসীন হবার পর ক্ষমতার বলে পিটার ককেশাস অঞ্চলে বিরোধী-বলশেভিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বহু রক্তাক্ত সংঘর্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে প্যান-তুর্কী ও প্যান-ইসলামিক বাসমাশি আন্দোলনের বিরুদ্ধেও পিটার যুদ্ধ ঘোষণা করে।
দ্য পোলিশ অপারেশনঃ
পোল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে যে ইতিহাস রচিত তার প্রতি পৃষ্ঠায় খুঁজে পাওয়া যায় কোন না কোন রক্তাক্ত অধ্যায়। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই পরিস্থিতি যাকে বলে অগ্নি গর্ভ রূপ ধারণ করেছিলো। ১৯৩৯ হতে ১৯৪১ সালের মধ্যে, যখন সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে নাৎসি জার্মানির অসহযোগ চুক্তির মেয়াদ চলছিলো, তখন সোভিয়েত রেড আর্মি পোল্যান্ডের অর্ধেকের বেশি একরকম শাসন-শোষণ- দমন-নিষ্পেষণে গুড়িয়ে দিয়েছিলো। সোভিয়েতদের দ্বারা পরিচালিত পোলিশ-বিরোধী অভিযানের সবচেয়ে কুখ্যাত উদাহরণটি ছিল ১৯৪০ সালে সংঘটিত কাতিন গণহত্যা। এই গণহত্যায় সোভিয়েত বাহিনী পোলিশ সেনাবাহিনীর অফিসার ও নিয়মিত বাহিনীর প্রায় ২২,000 সদস্যকে হত্যা করেছিলো।
এর আগে এন কেভিডি, স্ট্যালিন এর খুনী রাজত্বের সময় ব্যবহৃত গোপনীয় পুলিশ সংস্থাটি “পোলিশ অপারেশন” পরিচালনা করেছিলো। এই অপারেশনটি ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এই অপারেশন ছিল আরও বড় এক রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের পূর্ব প্রস্তুতি। পরবর্তীতে সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশ গণ আন্দোলন প্রতিরোধের নামে বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস রাখা প্রায় এক মিলিয়ন ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন দেখিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
“পোলিশ অপারেশন” আনুষ্ঠানিকভাবে এন কেভিডি অর্ডার নম্বর ০০৪৮৫ দ্বারা অনুমোদন করা হয়। অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহের পিপলস কমিসারের অধিদপ্তরের এই অফিশিয়াল অনুমতিপত্র এনকেভিডিকে “পোলিশ গুপ্তচরদের” দমন করার অনুমতি দেয়। এই নির্দেশটি উদারভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থানরত প্রায় সকল জাতিগত পোলিস মৃত্যুদন্ড বা কারাবাসের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল।
পোলিশ নাগরিক, পোলিশ সমাজতান্ত্রিক, পোলিশ কমিউনিস্ট এমনকি ১৯১৯-১৯২২ সালের পোলিশ-সোভিয়েত যুদ্ধের যুদ্ধ বন্দীদের ঐ অনুমতিপত্রের বাহানায় হত্যা করা হয়। এই পাইকারি গণহত্যায় মৃতের সংখ্যা ১,১১,০০০ জন এর বেশি বলে মনে করা হয়। আরও ২৮,০০০- জন এর ও বেশি পোলিস সাইবেরিয়ার গুলাগের শ্রম ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে পরিবেশ, অপুষ্টি ও মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে, হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছিল।
পোলিশ ইতিহাসবিদ মিচেল জ্যাসিনস্কি লিখেছেন যে এন কেভিডি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পোলিশ পুরুষদেরকে পরিবারের সম্মুখে হত্যা করে, তাদের স্ত্রী, বোন এবং অন্যান্য পোলিশ নারীকে কাজাখস্তানে নির্বাসিত করা হয়।
ভিনিসিয়া গণ হত্যাঃ
জাতিগত ভাবে পোলিসরাই যে শুধুমাত্র সোভিয়েত রাষ্ট্রের উন্মত্ত ক্রোধের শিকার হয়েছিলেন ব্যপারটি ঠিক তা নয়। জাতিগত ভাবে ইউক্রেনীয়রা প্রায়ই গণবিদ্রোহ এবং গণ সহিংসতার জন্য সোভিয়েতদের লক্ষ্যবস্তু ছিল। ১৯৩৭ ও ১৯৩৮ সালের রক্তাক্ত বছরে ইউক্রেনীয় শহর, ভিনিসিয়ার নাগরিকদের ইতিহাসের পাতা থেকে প্রায় মুছে ফেলে সোভিয়েতরা।
১৯৪৩ সালে যখন প্রথম গণহত্যার ঘটনা ঘটে তখন মোট ৯,৪৩৯টি লাশ পাওয়া যায়, যাদের প্রত্যেক কে হত্যা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল .২২ ক্যালিবারের বন্দুক। খুঁজে পাওয়া মৃতদেহগুলির মধ্যে ১৬৯ জন কে নারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া বেশিরভাগ মানুষকে ইউক্রেনের বিভিন্ন কারাগারে ও লেবার ক্যাম্পে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে খুব দ্রুতই সকলে উপলব্ধি করেন যে ক্যাম্পগুলি এন কেভিডি দ্বারা পরিচালিত, সেই অর্থে এই হত্যাকান্ড এন কেভিডির মদদে ঘটানো হয়।
ভিনিসিয়া গণহত্যা, কাতিনের মত খুব বিতর্কিত হয়ে ওঠে কারণ গণ কবরগুলোর সন্ধান পেয়েছিল জার্মান সেনাবাহিনী। সোভিয়েতরা এই ঘটনায় মহা বিড়ম্বনায় পরে যায় কারণ জার্মানদের উপর এই দোষ চাপানো সম্ভব নয় যে তারা নিজেরাই সোভিয়েতদের ফাঁসাতে হত্যাযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে । যাইহোক, ইতিহাসবিদরা আজ প্রায় সবাই একমতভাবে সম্মত হন যে, এন কেভিডি ভিনিসিয়া নাগরিকদের গণ হত্যার জন্য দায়ী।
জেলতোখসনের গণহত্যা:
সোভিয়েত রাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ গোপনীয় পুলিশ সংস্থা হল কেজিবি। এটি প্রথম গঠিত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে, স্ট্যালিনের মৃত্যুর ঠিক এক বছর পর । কেজিবি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল এন কে ভিডি এর কলঙ্কিত অপরাধসমূহের দাগ মুছে দেওয়া যার দায় স্ট্যালিন পরবর্তী কমিউনিস্ট নেতাদের বইতে হচ্ছিল। কিন্তু মানুষ ভাবে এক তো হয় আরেক। কারণ, কেজিবিও খুব শীঘ্রই অত্যাচারের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর-এ, কেজিবি এবং ওমন (বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত পুলিশ ইউনিট) কে কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়া সোভিয়েত বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনকে দমন করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। দ্বন্দ্বের প্রকৃত উত্থান তখন শুরু হয় যখন মস্কো সাবেক কাজাখ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের নেতা দ্বীনমুহাম্মদ কুনায়েভ এর স্থলে নেতৃত্বে গেননাডি কোলবিন কে বসিয়ে দেয়।
কোলবিন জাতিগত রাশিয়ান ছিল তবে কাজাখস্তান বা এখানে বসবাসরত লোকেদের সাথে তার দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কোন সম্পর্ক ছিল না। দুর্নীতি তদন্তের অংশ হিসাবে কুনায়েভ কে অপসারণ করা হয়েছে এমনটি ছিল রাশিয়ার দাবী। কিন্তু এটি ছিল পুরোপুরি ভাবে বিতর্কিত এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত । যে সিদ্ধান্ত প্রতিহত করার জন্য হাজার হাজার মানুষ আলমাটির রাস্তায় আন্দোলনে নামে। ডিসেম্বর মাসে ঘটে যাওয়া এই আন্দোলনটি ইতিহাসের পাতায় “জেলতোখসন” (“ডিসেম্বর” মাসের কাজাখ প্রতিশব্দ) নামে পরিচিত।
যদিও কাজাখাস্তানিরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছিল কিন্তু রাশিয়ানরা একে গণ বিক্ষোভ বলে অভিহিত করে। ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ থামানোর নামে, কেজিবি এবং ওমোন সহিংস তৎপরতা চালায়। বিদ্রোহ দমন করার নামে শত শত কাজাখাস্তানিকে গ্রেপ্তার করা হয়। কথিত রয়েছে, অপারেশন চলাকালীন প্রায় ২৫০ জন কাজাখ কে হত্যা করা হয়েছিল এবং অন্য ১০০০ জনকে কারাদন্ডে দন্ডিত করে শ্রম শিবির (লেবার ক্যাম্প)- এ পাঠানো হয়েছিল।
‘আয়রন ফেলিক্স’
সোভিয়েত রাশিয়ার ইতিহাসে আরেক নিন্দিত চরিত্রের নাম ফেলিক্স সের্জিনজস্কি। শীর্ষ অনেক সোভিয়েত কর্মকর্তার মতই ফেলিক্স জাতিগতভাবে পুরোপুরি রাশিয়ান ছিলেন না। তিনি ছিলেন পোলিশ-বেলারুশীয় বংশোদ্ভুত এবং প্রথম জীবনে হতে চেয়েছিলেন একজন ক্যাথলিক পুরোহিত। তবে পরবর্তীতে, তার স্বপ্ন বদলে যায় যখন সের্জিনজস্কি সেন্ট পিটার্সবার্গে কলেজ ছাত্র থাকাকালীন মার্কসবাদে আগ্রহী হয়ে পড়েন।
১৯১৭ সালের রাশিয়ান বিপ্লব এর সময়, সের্জিনজস্কি-কে ‘চেকা’র (রাশিয়ান গুপ্ত পুলিশ) প্রথম প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। লেনিনের অধীনে এই ভয়ঙ্কর গোপন পুলিশ বাহিনীর পদচারনা ছিল। ১৯১৮ সালের ৩০ আগস্ট সংঘটিত গণহত্যার পিছে দায়ী “আয়রন ফেলিক্স” নামটি আজ অবধি ত্রাসের সাথে স্মরণ করা হয়। ইতিহাসের এই দিনে নিষ্ক্রিয় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সদস্য ফ্যানি কাপলান মস্কো কারখানার বাইরে লেনিন কে হত্যার চেষ্টা করেছিল। কাপলান তার সহযোগীদের নাম বলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায়, চেকা- ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৮ সালে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে।
পরবর্তীকালে, সের্জিনজস্কি দেশটিতে সোভিয়েত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের জন্য সন্ত্রাসের ব্যবহার সম্পর্কে প্রিন্ট মিডিয়ায় তর্ক শুরু করেন। দৈনিক নোভোয়াজ্জিন্সের পাতায়, সের্জিনজস্কি লিখেন যে চেকা “সংগঠিত সন্ত্রাসের দমনে প্রতিষ্ঠিত”। তিনি সোভিয়েত নাগরিকদের একে অপরের প্রতি গুপ্তচরবৃত্তি করার এবং যতক্ষণ সম্ভব সম্ভাব্য প্রতিবিপ্লবী কার্যকলাপ সম্পর্কে চেকাকে অবহিত করার আহবান জানান। সের্জিনজস্কি মতামত থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট ছিল যে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে চেকা’ যাদেরকেই বিপ্লবী হিসেবে সন্দেহ করেছে তাকেই হত্যা করেছে।
সের্জিনজস্কি’র অধীনে “লাল সন্ত্রাস” নামক এক প্রচারাভিযান চালানো হয় যার ফলে ৮০০ লোককে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। চেকা হাজার হাজার শ্বেত রাশিয়ান সৈন্যও হত্যা করেছিল, বিশেষত রাশিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় সোভিয়েত রেড আর্মি যাদের গ্রেপ্তার করেছিল। এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে যে “আয়রন ফেলিক্স” সোভিয়েত রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের নীল নকশা তৈরি করেছিল।
দ্য আরদাখঃ
অনেকেই বলেন যে রাশিয়ান-চেচেন সংঘাতের শিকড় খুঁজে পেতে উনিশ শতকের দিকে ফিরে যেতে হবে। সংঘর্ষের সূত্রপাত যা নিয়েই ঘটুক না কেন তা কখনোই থেমে থাকে নি। ১৯৪০-এর দশকে রাশান-চেচেন সংঘর্ষের আরেকটি উৎস হচ্ছে “আরদাখ” যার মানে চেচেন ও ইঙ্গুশ মুসলমানদের অভিবাসনে বাধ্য করা।
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েও সোভিয়েত রাষ্ট্র জোরপূর্বক অর্ধ মিলিয়ন চেচেন এবং ইঙ্গুশ নাগরিকদের তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার সময় খুঁজে পেয়েছিলো। এই পুরো অপারেশনটির তত্ত্বাবধানে ছিলো এন কেভিডি। চেচেনরা বিশেষ করে ককেশীয় মুসলমানরা জার্মান নাজীদের সহায়তা করছে এই অভিযোগ তুলে শাস্তি স্বরূপ চেচেন ও ইঙ্গুশ নাগরিকদের বিতারন করা হয়।
যদিও এই তথ্যটি অনেকাংশেই সত্যি ছিল যে যে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক সংখ্যালঘু ইউক্রেনীয়, লাটভিয়ান, এস্টোনীয় এবং ককেশীয় মুসলিম -জার্মান ওয়াফেন-এসএস-এর সৈন্য হিসেবে কাজ করেছিল। সোভিয়েতরা এই ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে সমগ্র চেচেনের এক-তৃতীয়াংশ ককেশীয় ও ইঙ্গুশ মুসলিম নাগরিককে মধ্য এশিয়ায় বিতাড়িত করে।
সোভিয়েত রেকর্ড হতে জানা যায় ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই শুধু ৪০৭৬৯০ জন চেচেন এবং ৯২০৭৪ ইঙ্গুশ মুসলমানকে কাজাখাস্তান ও কিরঘিজিস্তানে বিতাড়িত করা হয়। অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির মতই ভলগা’র জার্মান, ক্রিমিয়ার তাতারসহ চেচেন ও ইঙ্গুস’রা ১৯৮০ সালের পূর্ব পর্যন্ত তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাবার সুযোগ পান নি।
মধ্য এশিয়ায় যাওয়ার পথে ঠিক কতজন লোক মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়ে তা সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়। ইতিহাসবিদ নিকোলায় বুয়েগে উল্লেখ করেন কাজাখিস্তানে যাওয়ার পথেই ১,০০,০০০ এর উপর মানুষ মারা যায়, আর উজবেকিস্তানে যাওয়ার পথে ১৬000 এর উপর মানুষ অনাহারে ও রোগে ভুগে মারা যান। আরেকটি উৎস থেকে জানা যায় প্রায় ২,০০,০০০ মানুষ শ্রম শিবিরে মারা যায়।
“আয়রন লাযার”
স্ট্যালিনের শাসনামলে মৃত্যুদাতা জল্লাদ হিসেবে যে মানুষটির নাম বারে বারে উঠে আসে তার নাম ‘আয়রন লাযার বা লাযার কাগারোভিচ।‘ তিনি ১৮৯৩ সালে ইউক্রেনের এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। তরুণ বয়সেই তিনি বলশেভিকদের দলে যোগ দেন যা সে সময়ের জার শাসকদের চোখে অফিসিয়ালি অপরাধি হিসেবে স্বীকৃত ছিল।
রাশিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় কাগারোভিচ প্রথম ক্ষমতার স্বাদ পান যখন তিনি একটি প্রচার অভিযানের মূল দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু তার রক্ত পিপাসা প্রথম আলোর মুখ দেখে ১৯৩০ সালে স্ট্যালিনের হাতে ঘটে যাওয়া গণহত্যায়। সে সময় কাগানোভিচ সম্পর্কে কথিত ছিল –“সে স্ট্যালিনের স্টালিনত্ব কে হার মানিয়েছিলেন।”
ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম মহাসচিব হিসাবে, কাগানোভিচ ১৯২৫ এবং ১৯২৯ সালের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে জোরপূর্বক খামারের ফসল দখল করে নেয়। পরবর্তীতে, ১৯৩৫ হতে এবং ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত তিনি পরিবহন, ভারী শিল্প, এবং জ্বালানী শিল্পের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এই ক্ষমতার বলে, কাগানোভিচ বাধ্যতামূলক শ্রম শিবিরের সহায়তায় শিল্পায়নে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এবং সোভিয়েত অর্থনীতির ব্যপক উন্নয়ন ঘটায়। তাদের প্রকল্পের ভারে শত শত হাজার হাজার শ্রমিক মারা গিয়েছিল এবং আরও অনেককে গুলাগে পাঠানো হয়েছিল। অনেককেই “স্যাবোটার” হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। কাগানোভিচ স্ট্যালিন পরবর্তী সময়েও নির্দ্বিধায় জীবন যাপন করেন ও ১৯৯১ সালে ৯৭ বছর বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেন।
লেভেরেন্তি বারিয়ার রাজনৈতিক হত্যাকান্ডঃ
১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকে এন কেভিডির প্রধান ছিলেন লেভেন্টি বেরিয়া। মানুষ হিসেবে তিনি অত্যন্ত ভয়াবহ ছিলেন। শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেই নন বরং তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও বহু অপরাধে লিপ্ত ছিলেন। আবার, সোভিয়েত যুগের বেশীরভাগ কুখ্যাত শীর্ষ কর্মকর্তার (মতভেদে কশাইয়ের মতো) বারিয়াও জন্মগত ভাবে পুরোপুরি রাশিয়ান ছিলেন না।
জর্জিয়ান অর্থোডক্স নিষ্কাশন এর সময়, বারিয়াও তার সমসাময়িক কাগানোভিচের ন্যায় স্ট্যালিনের ছত্রছায়ায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে নিজের নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার প্রমাণ দিয়ে তিনি স্ট্যালিনকে খুশি করে তোলেন এবং স্ট্যালিন কর্তৃক একজন নির্মম হত্যাকারীর ক্ষমতা লাভ করেন।
এনকেভিডির শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে ১৫ বছরের রাজত্বের সময় বারিয়া লক্ষ লক্ষ রাশিয়ানদের মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করেন, যার মধ্যে অজ্ঞাত সংখ্যক কিছু লোককে কুখ্যাত লুবিয়াঙ্কা কারাগারে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। তার অধীনে, এন কে ভিডি পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনে গনহত্যা ও ত্রাসের ধ্বংস লীলা কায়েম করে। কাতিন গণহত্যায় ও তার হাত ছিল।
বারিয়ার ভয়ঙ্কর নৃশংসতা ছিল কিংবদন্তিতুল্য, স্ট্যালিনের নিকটতম রাজনৈতিক সঙ্গীরাও তাকে “রক্ত পিপাসু বামন” বলে ডাকতো। জীবদ্দশায় এই ডাক নামের সার্থকতা তিনি পুরোপুরি দেখিয়েছেন। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন তার এন কে ভিডি এজেন্টরা অনেক রাশিয়ান নাগরিককে গুলাগে পাঠিয়েছিল অথবা কাজের চাপে শ্রম শিবিরে তাদের মৃত্যু নিষেধ করেছিল। জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েতরা জিতবে তা নিশ্চিত করতেই চলে মৃত্যুর এই তান্ডব লীলা।
লেভেন্টি বেরিয়া-যৌন শিকারিঃ
বেশ কয়েকটি গণঅভ্যুত্থান ও হত্যাকান্ডের নায়ক ল্যাভেন্টি বেরিয়া’ ছিলেন একজন সুপরিচিত ধর্ষক ও যৌন শিকারি; যিনি অনাহুত সংখ্যক নারী ও মেয়েকে নিজের লালসার শিকার বানিয়েছিলেন। আর নিজের নিরাপত্তা রক্ষার্থে নিজের সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ১৯৫০ এর দশকে তাঁর বিচারের সময় অনেক এনকেভিডি অফিসার সাক্ষ্য প্রদান করেছিলেন যে বেরিয়া মস্কোতে যুবতীদের রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার জন্য নিয়মিত তার প্যাকার্ড লিমোজিন ব্যবহার করত। এই একই সাক্ষ্যপ্রমাণ দাবি করে যে বেরিয়া তার শব্দহীন অফিসে ধর্ষণের আগে বন্দীদের ওয়াইন এবং খাবার খাওয়াতেন।
পরবর্তীতে মস্কোতে বেরিয়া কার্যালয়ের পরিদর্শন প্রকাশ করে যে এন কেভিড অফিসিয়াল তার অফিস ডেস্কে অশ্লীল সরঞ্জাম সংগ্রহে রাখতো। বিখ্যাত অভিনেত্রী এমন কি সদ্য মা হওয়া নারীরাও তার লালসার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতেন না।
এই সকল অপরাধ সহ আরও অনেক অপরাধের জন্য, সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ১৯৫৩ সালে বেরিয়াকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করায়। তিনি অবশেষে দেশদ্রোহী সহ (বেরিয়াকে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার অভিযোগে), সোভিয়েত বিরোধী কার্যকলাপ ও সহিংস অপরাধের সাথে জড়িত বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন (তিনি ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে বিভেদ সৃষ্টিতে আজারবাইজান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকের জন্য কাজ করেন, এবং ১৯৪১ সালে সোভিয়েত আর্মির ফিনল্যান্ডের হাতে পরাজয়ের পর, লাল বাহিনীর মদদে সন্ত্রাসবাদ ঘটনায় অনেকগুলি জেনারেলকে অপহরণ ও হত্যা করে)।
কথিত রয়েছে বেরিয়ার বিচারকার্যের সময় তার সমর্থনে কেউ এগিয়ে আসেন নি।
জেনেরিক ইয়্যাগোডাঃ
জেনেরিক গ্রিগোরিভিচ ইয়্যাগোডা ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত এন কেভিডের শীর্ষ ব্যক্তি ছিলেন। মাঝারি আকারের রাশিয়ান শহরের একজন ইহুদি জহুরীর (জুয়েলারের) পুত্র, ইয়্যাগোডা যুব বয়সেই নাস্তিক্যবাদে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯০৭ সালে বলশেভিকদের সাথে যোগ দেন।
১৯২০এবং ১৯৩৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে, ইয়্যাগোডা সোভিয়েত গোপনীয় পুলিশের হয়ে গুলাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করে। এই জোরপূর্বক কাজ করানো শ্রম শিবিরে লক্ষ লক্ষ সোভিয়েত নাগরিককে হত্যা করা হয়, যাদের অধিকাংশই পানিশূন্যতা, ক্লান্তি, রোগ বা ক্ষুধার কারণে মারা গিয়েছিল। এই সকল ঘটনা ইয়্যাগোডা ‘র কর্মজীবন এর সম্ভাবনাকে বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ করেনি, এবং ১৯৩৪ সালে, তিনি নতুন ভাবে সৃষ্ট এন কে ভিডি এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৩৭ সালে, ইয়্যাগোডা নাটকীয়ভাবে রাষ্ট্রপক্ষের সুদৃষ্টি হারা। সেই সময়ে, চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছিল এবং জোসেফ স্ট্যালিনের পরিবর্তে লিওন ট্রটস্কির সমর্থনে সন্দেহভাজন যে কাউকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছিল এবং তার পরপরই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল। একই ঘটনা ইয়্যাগোডা’র ক্ষেত্রেও ঘটেছে, যার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল ১৫ মার্চ, ১৯৩৮।
একজন গুরুত্বপূর্ণ সোভিয়েত কর্মকর্তা হিসাবে তাঁর সংক্ষিপ্ত কর্মকাণ্ডের সময়, ইয়্যাগোডা লাল বাহিনীর বিশুদ্ধতা (একটি অনুমিত নাৎসি বিশুদ্ধতা যেখানে ৩০,০০০ অফিসারকে গ্রেফতার করা হয় এবং হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করা হয়) অভিযান চালান। তিনি এবং কাগরোভিচ ইউক্রেনে জোরপূর্বক দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে যা “হোলোদোমোর” নামে পরিচিত।
১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে, সোভিয়েত খামারগুলিকে সরকারিকরনের জন্য স্ট্যালিন নানা ধ্বংসাত্বক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মূল লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদকে নষ্ট করে দেয়া। এর ফলশ্রুতিতে শস্য দানা, শস্য, বীজ প্রভৃতি -স্বাধীন ইউক্রেনীয় এবং মধ্য এশিয়ার কৃষকদের কাছ থেকে জোর পূর্বক জব্দ করা হয়। শস্য সংগ্রহ করার সময়ে অনেক কৃষককে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। এই কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে ছয় থেকে সাত মিলিয়ন ইউক্রেনীয় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
“হোলোদোমোর” নামক কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সমগ্র পৃথিবীতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। অনেক রাশিয়ানরা এমনকি তার অস্তিত্ব স্বীকার করতেও অস্বীকার করে। যদিও এই ঘটনা অনেক জাতির কাছে গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃত, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতামত এই ক্ষেত্রে পরিস্কার নয়। এর মূল কারণ হতে পারে যে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক-সম্মানিত সাংবাদিক ওয়াল্টার ডুরান্টি ইচ্ছাকৃতভাবে সোভিয়েত কর্মকর্তাদের অনুগ্রহ পেতে ভিন্নভাবে ঘটনাটি ‘ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে’ রিপোর্ট করে।
যুদ্ধাপরাধ নিয়ে রয়েছে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা। অনেক অপরাধের ঘটনা রয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারাধীন। আজ এই পর্যন্তই। ভবিষ্যতে আপনাদের সামনে হাজির হবো নতুন ভাবে নতুন কোন লেখা নিয়ে। ততদিন ‘প্রিয়লেখার’ সাথেই থাকুন।