প্রথমে আসি “খুম” কি?
খুম একটি মারমা শব্দ। যার মূল অর্থ জলপ্রপাত বা খুম হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে উপর থেকে অনেক পানি এসে পড়ে বিশাল গর্তের সৃষ্টি করছে আর সবসময়ই সেখানে পানি থাকে। ঝর্না সাধারণত শুকিয়ে যায়।খুমের পানি কমতে বা বাড়তে পারে কিন্তু একেবারে শুকায় না। আর সব খুমেই মাছ পাওয়া যায়।
নাফাখুমঃ
পাহাড়ি খরস্রোতা পাথুরে খাল রেমাক্রি তার চলার পথে অসংখ্য খুমের সৃষ্টি করে গেছে বিভিন্ন স্থানে। একেকটা খুমের একেকটা নাম আছে। যেমনঃ আমিয়াখুম, নাফাখুম, রেমাক্রিখুম, সাতভাইখুম, নাইক্ষ্যাংখুম সহ আরো অনেকে খুম আছে বান্দরবানের গহীনে। তার মধ্যে নাফাখুম অন্যতম এবং যাকে অনেকে আবার “বাংলার নায়াগ্রা” বলে। নাফাখুম নামটাও মূলত মারমা ভাষার। যার ভাঙ্গলে, নাফা অর্থ দাঁড়ায় মাছ আর “খুম” অর্থ জলপ্রপাত। বুজাই যায় নাফাখুমে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এবং তা নিজ চোখেও প্রমাণ দেখেছি।
যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে যে প্রথমে যেকোন বাসে বান্দরবান চলে যান। লোকসংখ্যা বেশি হলে একটা চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করে থানচি চলে যান। খরচ কমাতে বাসেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে থানচি পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে মাত্র ২০০ টাকা। তারপর গাইড নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে নাম লিখিয়ে ট্রলারে উঠবেন। যা খরস্রোতা সাঙ্গু বা শাঙ্খ নদী ধরে আপনাকে রেমাক্রি পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। পথে তিন্দুর দিকে দেখবেন রাজা পাথরের অঞ্চল। এখানে আপনি দেখবেন বিশাল বিশাল পাথরের বোল্ডার। রেমাক্রি পৌঁছে দেখতে পাবেন রেমাক্রি ক্যাসকেড। সুন্দর্য বিচারে এটিও কোন দিকে কম নয়। তবে আমার কাছে বর্ষায়কাল থেকে শীতকালের রুপটাই ভালো লাগে। আসলে খুমে যাওয়ার মূখ্যম সময়টাই শীতকাল। তখন আপনি খুমগুলো বা ক্যাসকেডগুলোতে ধাপে ধাপে পানি পড়ার সৌন্দর্যটা দেখতে পাবেন, যা বর্ষাকালে পানির অভারফ্লোর কারনে বুজাও যায় না। ওইদিন আপনি রেমাক্রিতেই কোন একটা গেস্ট হাউজে থেকে জান। আর উপভোগ করুন শাঙ্খ নদীর পাড়ে আপনার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সকাল।
তারপর, খাওয়াদাওয়া শেষ করে সকাল ৬ টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ুন নাফাখুম দর্শনে। তবে সেজন্য আপনাকে পূর্ব থেকে ট্রেকিং এর প্রস্তুতি নিয়ে বান্দরবান আসতে হবে। অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংক, ট্রাকিং উপযোগী গ্রীপের স্যান্ডেল(স্পোর্টসের জুতা) আর কাপড়চোপড় সাথে নিতে হবে। এইবার ব্যাগ গেস্ট হাউজে রেখে ট্যাকিং সু বা স্যান্ডেল পড়ে বেরিয়ে পড়ুন। রেমাক্রী বাজার হতে জোরে হাটলে ২ ঘন্টা এবং ধীর পায়ে হাঁটার ক্ষেত্রে নাফাখুম ঝর্নায় পৌছতে ৩ ঘন্টার মতো সময় লেগে যায়। তারপরে একি ভাবে ওইদিন বান্দরবন পৌঁছে রাতে ঢাকার গাড়িতে করে ঢাকা রওনা দিতে পারবেন।
কখন যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ
বর্ষার সময় ঝর্নার আকার বড় হয় আর পানির অভারফ্লোর কারনে মূল সৌন্দর্য পাওয়া যায় না। আর শীতের দিনে তা ক্ষীন হয়ে যায়। তবে সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে নাফাখুমের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায়।
খরচঃ
সব মিলিয়ে ৪/৫ জনের একটা টিমের ৫০০০ এর মধ্যে হয়ে যাবে আশা করি।
কিছু কথাঃ
১. যারা সাতার জানে না তারা অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাবেন। অথবা বিজিবি ক্যাম্প থেকে দিন হিসাব করে ভাড়া নিবেন। তবে সবসময় পর্যাপ্ত থাকে না। তাই নিয়ে যাওয়া ভালো।
২. অবশ্যই গ্রিপের স্পোর্টস জুতা বা স্যান্ডেলগুলো পড়বেন।
৩. এইটা ৩ নাম্বার হলেও সবার আগে এইটাই মূল বিষয়… অবশ্যই জাতীয় পরিচিয় পত্র বা স্টুডেন্ট আইডি কার্ড সাথে রাখবেন।
৪. থানচির পর থেকে আর কোন মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই। তাই অবশ্যই ফ্যামিলি মেম্বারদের জানিয়ে যাবেন যে দুইদিন আপনাকে মোবাইলে পাবে না।