‘এভারেস্টে’ প্রথম পা রেখেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। প্রথম না হওয়ার আক্ষেপ তো আর ঘুচানো সম্ভব নয়, তাই আরেকদিক থেকেই রোনালদোকে পেছনে ফেলে দিলেন লিওনেল মেসি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে দ্বিতীয় কিন্তু দ্রুততম ফুটবলার হিসেবে ১০০ গোলের মাইলফলক পেরিয়েছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর।
অথচ একটা সময় পর্যন্ত দুজনের ‘গোল দৌড়ে’ মেসিই এগিয়ে ছিলেন। ৭৫ গোল পর্যন্তও মেসিই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু এরপর হঠাৎই অনেকটা এগিয়ে গেলেন রোনালদো। যে কারণেই রোনালদোর চেয়ে প্রায় ১১ মাস দেরিতে গোলের সেঞ্চুরিতে পৌঁছালেন তিনি।
কিন্তু তাতেও রেকর্ড থেকে বঞ্চিত করা যায়নি রেকর্ডের বরপুত্র মেসিকে। প্রথম হতে না পারলেও দ্রুততম ঠিকই হয়েছেন। ১০০ গোল করতে রোনালদোর লেগেছিল ১৩৭ ম্যাচ, মেসি খেললেন ১৪ ম্যাচ কম। ১২৩ ম্যাচ খেলেই করে ফেলেছেন ‘সেঞ্চুরি’। ম্যাচপ্রতি গোলের অনুপাতেও তাই এখনো মেসিই এগিয়ে। ১৫৪ ম্যাচে ১১৮ গোল নিয়ে রোনালদোর গোল গড় আপাতত ০.৭৭, মেসির সেখানে ০.৮১। রোনালদোর চেয়ে অনেক কম সময় মাঠে থেকেই এই রেকর্ড করে ফেলেছেন মেসি। ১০০ গোল করতে রোনালদোর লেগেছিল ১১ হাজার ৮৪৮ মিনিট, মেসির লেগেছে ১০ হাজার ৯০ মিনিট। গোলে শটও নিতে হয়েছে অনেক কম। ১০০ গোল করতে রোনালদো গোলপোস্ট অভিমুখে শট নিয়েছেন ৭৯০ টি, মেসির নিতে হয়েছে মাত্র ৫২৪ টি।
১০০ গোলের মধ্যে নিজের শক্তিশালী পা বাম পায়ে করেছেন ৮১ গোল, ডান পায়ে ১৫ গোল, আর বাকি চারটি করেছেন হেডে, যার মধ্যে ২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে করা বিখ্যাত গোলটিও আছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রোনালদোর সমান হ্যাটট্রিক আছে ৭ টি, তবে অন্যদিক থেকে মেসি অনন্য। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এক ম্যাচে ৫ গোল করার বিরল রেকর্ড আছে তাঁর দখলে, একবিংশ শতাব্দীতে যা করতে পেরেছেন মাত্র দুইজন ফুটবলার। ২০১২ সালের ০৭ মার্চ জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে ৭-১ গোলের জয়ে একাই ৫ গোল করেন মেসি। মেসি ছাড়া এই শতকে এক ম্যাচে ৫ গোল করা আরেক ফুটবলার লুইজ আদ্রিয়ানো।
ম্যাচে ৪ গোল করার নজিরও আছে মেসির। ২০১০ সালে আর্সেনালের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ে সবকয়টি গোলই করেছিলেন তিনি। যেই ম্যাচের পর আর্সেন ওয়েঙ্গার তাঁকে ‘প্লে স্টেশনের খেলোয়াড়’ বলেও অভিহিত করেছিলেন। রোনালদোরও অবশ্য ম্যাচে চার গোল করার নজির আছে। তিনি করেছিলেন ২০১৫ সালে মালমোর বিপক্ষে রিয়ালের ৮-০ গোলের জয়ে।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগে মেসির প্রিয় প্রতিপক্ষও ওই আর্সেনাল। লন্ডনের ক্লাবটির বিপক্ষেই সর্বোচ্চ ৯ গোল করেছেন তিনি। ৮ গোল করে করেছেন ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান ও স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকের বিপক্ষে। লেভারকুসেনের বিপক্ষে আছে ৭ গোল, আর ডাচ ক্লাব আয়াক্সের বিপক্ষে করেছেন ৬ গোল।
ম্যাচের মত বয়সের দিক থেকেও রোনালদোর থেকে ঢের এগিয়ে মেসি। শততম গোল করার দিন রোনালদোর বয়স ছিল ৩২ বছর ৭২ দিন, আর চেলসির বিপক্ষে জোড়া গোল করে মাইলফলক ছোঁওয়ার দিন মেসির বয়স ছিল ৩০ বছর ২৬৩ দিন।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ম্যাচে মেসি গোল করা মানেই যেন বার্সার জয় নিশ্চিত। মেসি গোল পেয়েছেন এমন মাত্র ৩ টি ম্যাচে হেরেছে বার্সেলোনা। বার্সা সমর্থকেরা তাই মনে মনে প্রার্থনাই করবেন, এবারের মৌসুমে যেন সব ম্যাচেই গোল পান মেসি। তাহলেই যে ৩ মৌসুম পরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের স্বপ্নটা আরও উজ্জ্বল হবে কাতালান ক্লাবটির!