টি-২০ ক্রিকেটের কথা শুনলেই মাথায় আসে ধুন্ধুমার ব্যাটিং, আর মারকাটারি ব্যাটিং মানেই চোখে ভেসে ওঠে সেরা দুই টি-২০ ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নাম। কিন্তু অকল্যান্ডে রেকর্ড গড়া টি-২০ ম্যাচে এই দুজনকে পেছনে ফেলেই একটা জায়গায় শীর্ষে উঠে গেছেন ম্যাককালামেরই সাবেক সতীর্থ, কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল। আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে গেইল-ম্যাককালামদের ছাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক যে এখন গাপটিলই !
২০০৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন গাপটিল। অভিজ্ঞতা অবশ্য সুখকর হয়নি, মাত্র ২ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেছিলেন সাজঘরে। সেই গাপটিলই আজ আন্তর্জাতিক টি-২০ এর সর্বোচ্চ রানের মালিক!
ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে এখনো পর্যন্ত ৭৪ টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন গাপটিল, তাতে রান করেছেন ২২৫০। গড় ৩৪.৬১, টি-২০ ক্রিকেটে যা যথেষ্ট ভালো গড় হিসেবে বিবেচিত। এই ফরম্যাটে গড়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় যেটি, সেই স্ট্রাইক রেটও দুর্দান্ত, ১৩২.৮২। পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন ১৪ টি, আর সেটিকে তিন অঙ্ক পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পেরেছেন ২ বার। দ্বিতীয়টি তো অস্ট্রেলিয়ার সাথে কয়দিন আগেই পেলেন, প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন ৩৮ তম ইনিংসে, ইস্ট লন্ডনে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন অপরাজিত ১০১ রান।
নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করার পথেই সাবেক সতীর্থ ম্যাককালামকে পেছনে ফেলেছেন গাপটিল। ৭১ ম্যাচে ২১৪০ রান নিয়ে এতদিন আন্তর্জাতিক টি-২০ তে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক ছিলেন ম্যাককালাম, যেই রেকর্ডটি এখন গাপটিলের দখলে। ম্যাককালাম অবশ্য গড় এবং স্ট্রাইক রেট, দুই দিক থেকেই এখনো গাপটিলের চেয়ে এগিয়ে। গাপটিলের গড় যেখানে ৩৪.৬১, ম্যাককালামের সেখানে ৩৫.৬৬। আর গাপটিলের স্ট্রাইক রেট ১৩২.৮২, ম্যাককালামের সেটি ১৩৬.২১।
ম্যাককালামকে পেছনে ফেলা ইনিংস দিয়ে আরেকটি ছোট্ট তালিকাতেও নিজের নাম উঠিয়েছেন ডানহাতি এই ওপেনার। আন্তর্জাতিক টি-২০ তে একের অধিক সেঞ্চুরি করা মাত্র সপ্তম ব্যাটসম্যান তিনি। এই তালিকায় অবশ্য তার দেশেরই আছেন আরও দুইজন, ৩ সেঞ্চুরি নিয়ে শীর্ষে আছেন তার বর্তমান ওপেনিং সঙ্গী কলিন মানরোই। এছাড়া ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও রোহিত শর্মার আছে দুইটি করে সেঞ্চুরি। এবার সেই তালিকায় উঠল গাপটিলের নামও।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, টি-২০ বলতেই যার নাম সবার আগে চোখে ভেসে ওঠে, সেই ক্রিস গেইল কিন্তু এই তালিকায় বেশ পেছনে। আন্তর্জাতিক টি-২০তে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ক্যারিবীয় এই ‘দানব’ আছেন ১৪ নম্বরে! ৫৫ ম্যাচে ৩৩.৮০ গড় ও ১৪৫.১১ স্ট্রাইক রেটে ১৫৮৯ রান গেইলের। বোর্ডের সাথে বিরোধিতায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন বহুদিন, এটি ছাড়া গেইলের পিছিয়ে পড়ার আর কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
নাম | রান | গড় | স্ট্রাইক রেট | সর্বোচ্চ ইনিংস |
মার্টিন গাপটিল | ২২৫০ | ৩৪.৬১ | ১৩২.৮২ | ১০৫ |
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম | ২১৪০ | ৩৫.৬৬ | ১৩৬.২১ | ১২৩ |
বিরাট কোহলি | ১৯৮২ | ৫২.১৫ | ১৩৭.৭৩ | ৯০* |
তিলকারত্নে দিলশান | ১৮৮৯ | ২৮.১৯ | ১২০.৫৪ | ১০৪* |
শোয়েব মালিক | ১৮২১ | ২৯.৩৭ | ১১৭.৬৩ | ৭৫ |
তবে গাপটিলকে বোধহয় বেশিদিন শান্তিতে থাকতে দেবেন না রঙ্গিন পোশাকের ক্রিকেটে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার খেলায় নামা বিরাট কোহলি। মাত্র ৫৬ ইনিংসেই ১৯৮২ রান নিয়ে তালিকায় গাপটিল-ম্যাককালামের পরের স্থানটিই ভারত অধিনায়কের। আন্তর্জাতিক টি-২০ ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলির গড় ৫০ এর উপরে! স্ট্রাইক রেট ও গাপটিল-ম্যাককালাম দুজনের থেকেই ভালো, ১৩৭.৭৩। মাত্র ৫২ ইনিংসে ব্যাট করেই পঞ্চাশ ছাড়িয়েছেন ১৮ বার, গড়ে প্রায় ৩ ইনিংসে একটি করে ফিফটি! আন্তর্জাতিক টি-২০ তে তার চেয়ে বেশি ফিফটি নেই আর কারোর। কোহলি-গাপটিল লড়াই যে তাই ভালোই জমবে এতে সন্দেহের খুব বেশি কিছু নেই।
ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ থেকে ছিটকে যাওয়া সময়ের আরেক মহাতারকা এবিডি ভিলিয়ার্স ও এই তালিকায় বেশ পেছনে। বিশ্বজুড়ে টি-২০ লীগে মাতিয়ে বেড়ালেও আন্তর্জাতিক টি-২০ তে কেন যেন নিজের সেরা রূপে এখনো দেখা দিতে পারেননি এবি। তালিকায় তার অবস্থান গেইলের ঠিক ৩ ধাপ ওপরে, ১১ নম্বরে। ৭৫ ইনিংসে ১০ ফিফটিতে ১৬৭২ রান তার। স্ট্রাইক রেট ১৩৫.১৬ হলেও গড়টা ঠিক তার মাপের ব্যাটসম্যানের সাথে মানানসই নয়, ২৬.১২।
তালিকায় সেরা পঞ্চাশে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান আছেন তিনজন, তামিম ইকবাল , সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ । ৬০ ম্যাচে ২৩.৩৮ গড় ও ১১৫.৪৩ স্ট্রাইক রেটে ১২৮৬ রান নিয়ে তামিম আছেন ২৭ নম্বরে। তার চেয়ে ঠিক দুই ধাপ পেছনে আছেন সাকিব। ৬১ ইনিংসে ২৩.০৭ গড় ও ১২১.২০ স্ট্রাইক রেটে ১২২৩ রান নিয়ে ২৯ নম্বরে সাকিব। আর ৫৫ ইনিংসে ২০.৯৩ গড় ও ১১৭.১৭ স্ট্রাইক রেটে ৯২১ রান নিয়ে ৪৭ তম অবস্থানে আছেন মাহমুদউল্লাহ।
ক্রিকইনফো অবলম্বনে