রাধানাথ শিকদার একজন বাঙালি গণিতবিদ
মাউন্ট এভারেস্টের নাম শুনেছেন তো? পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যেটির উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফিট)। এর নেপালি নাম সাগরমাথা, তিব্বতী নাম চোমোলাংমা । সুন্দর সফেদ রাজকীয় এই শৃঙ্গের নামের সাথে স্বভাবতই জর্জ এভারেস্টের নাম চলে আসে। তবে এর পেছনে যে এক বাঙ্গালির ভূমিকা রয়েছে, তা কি আমরা জানি? তিনি না থাকলে যে সুউচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গ মানুষের অগোচরেই থেকে যেত!
মানুষটির নাম রাধানাথ শিকদার । আজ প্রিয়লেখার পাতায় এই মানুষটি সম্পর্কেই কিছু জানব।
রাধানাথ শিকদার ছিলেন একজন বাঙালি গণিতবিদ। ১৮১৩ সালে তার জন্ম। বাবার নাম তিতুরাম শিকদার। ১৮৫৫ সালে হিমালয় পর্বতমালার চূড়াগুলোর উচ্চতা নিরুপণ করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন ১৫ নম্বর চূড়াটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এই পর্বত শৃঙ্গটিকেই ১৮৬৫ সালে তৎকালীন ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল অ্যান্ড্রিউ স্কট ওয়াহর সুপারিশে রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে নাম রাখে মাউন্ট এভারেস্ট। ইতিহাসের পাতায় বাঙালি গণিতবিদ ও সার্ভেয়ার রাধানাথ শিকদারকে খুব মনে রাখে নি। তাই বলে কি তার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানব না?
কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে রাধানাথ হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। এখানে ডিরোজিওর প্রভাব তার ওপর বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। ডক্টর টাইটলারের প্রিয়ছাত্র রাধানাথ শিকদারের পছন্দের বিষয় ছিল গণিত। খুব শীঘ্রই উচ্চতর গণিতে বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন তিনি।
তখন ছিল এই উপমহাদেশে ব্রিটিশদের রাজত্ব। রাধানাথ ব্রিটিশ প্রশাসনের জরিপ বিভাগ সার্ভেয়ার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার দপ্তরে কাজ করতেন। ১৮৪০ সালে মহা ত্রিকোনোমিতিক জরিপ কাজে অংশ নেন। ১৮৫১ সালে প্রকাশিত হয় ম্যানুয়াল অব সার্ভেয়িং নামের একটি সমীক্ষা পুস্তিকা। এই পুস্তিকায় কেমন করে জরিপ কাজে বিশেষ সুবিধা অর্জন করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত লেখা ছিল। পুস্তিকাটিতে বৈজ্ঞানিক যে অংশগুলো ছিল, সেগুলো রাধানাথ শিকদারের লেখা।
৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইট (০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) ব্যারোমিটারে পাঠ কমাবার জন্য রাধানাথ একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন। এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল জার্নালে তিনি একটি গবেষণা পত্রে সূত্রটি উপস্থাপন করেন।
১৮৫৪ সালে তিনি ও প্যারীচাদ মিত্র নারীদের শিক্ষাবিষয়ক একটি পত্রিকা চালু করেন। এর নাম ছিল “মাসিক পত্রিকা”। রাধানাথের লেখার হাত ছিল সহজ, বিশৃঙ্খলমুক্ত এবং বোধগম্য। তৎকালীন প্রথাগত লেখনীর ভাষা ছেড়ে সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় তিনি লেখা শুরু করেন।
১৮৫৭ সাল থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগের আবহবিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞান কমিটিতে সদস্য ছিলেন। ১৮৬২ সালে চাকরি থেকে অবসর নেবার পর তিনি জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ) কলেজে গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৮৭০ সালের ১৭ মে মহান এই গণিতবিদ মৃত্যুবরণ করেন।
২০০৪ সালের ২৭ জুন তারিখে ভারতের ডাক বিভাগ চেন্নাইয়ে ভারতের ত্রিকোণমিতিক জরীপের প্রতিষ্ঠার স্মরণে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে, যাতে রাধানাথ শিকদার ও নইন সিং এর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে।