সমুদ্রের গল্প শুনতে আমরা সবাই ভালোবাসি। আর তাতে যদি মিশে থাকে কিছুটা বাস্তব জীবনের রহস্যের ছোঁয়া, তাহলে তো কথাই নেই। জগতের অনেক কিছুই তো আমরা জানি না। তবে এই না জানার মাঝেও যেন খানিকটা তৃপ্তি আছে, কৌতুহল আছে। জগতের সবকিছু যদি আমরা জেনে ফেলতাম, তাহলে রহস্যেরই যে সৃষ্টি হতো না! প্রিয়লেখার পাতায় পড়ুন আজ তিনটে অদ্ভুত জাহাজের গল্প। ভূত নাকি অদ্ভুত, সেটা বিচার করবার ভার বরং আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
ওশন ওয়েভস (Ocean Wave)
ওশেন ওয়েভ জাহাজটির গল্প যেন অনেক বেশি উষ্ণ আর জীবন্ত। শিল্পী ব্যাস জান অ্যাডারের তিনটি গানে পারফর্ম করে ইংল্যান্ডে ফিরবার কথা ছিলো। প্রথমে জাহাজে ছাত্রদের গাওয়া গানের সাথে একটি পিয়ানো বাজানো, এরপর কেইপ কোড থেকে ফালমাউথে একটি ৪ মিটার ক্র্যাফটে করে যাওয়া (এটি বেশ ছোট ছিলো আকারে)। ৮-১০ হপ্তা পর শেষ গানের সাথে গেয়ে কাজটি শেষ করবার কথা ছিল অ্যাডারের। সমস্যা হলো, অ্যাডার কখনো ইংল্যান্ডে আসেনই নি!
অ্যাডারের জাহাজটি (তার চেয়ে বরং নৌকোই বলা যাক) একা ভাসতে দেখা যায়। সেখানে মানুষের কোন চিহ্নই ছিলো না। মানুষ ধরে নিয়েছে রোগে শোকে ভুগে কিংবা বড় ধরনের কোন সমুদ্রঝড়ে অ্যাডার মারা গিয়েছেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ঝড়ে সম্পূর্ণ মানুষ বেমালুম গায়েব হয়ে যায়, কিন্তু নৌকোর কোনো ক্ষতি হয় না, এটি কিভাবে সম্ভব? আবার কেউ কেউ বলেন, অ্যাডার তার এই গায়কী জীবন থেকে মুক্তি পাবার জন্য নিজের নৌকো ছেড়ে দিয়ে বড় জাহাজে উঠেছিলেন।
সে যাই হোক না কেন, অ্যাডারের খোঁজ আর কখনো পাওয়া যায় নি।
দ্য হাই এইম সিক্স (The High Aim 6)
২০০২ সালে চৈনিক জাহাজ দ্য হাই এইম সিক্স তাইওয়ানের বন্দর ছেড়ে নিজ দেশে ফিরছিল। ২০০৩ সালে এটি অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছায় কিন্তু জাহাজে কোন মানুষের চিহ্ন ছিলো না। খাবার, রসদ, লাইফবোট, বয়া সবকিছুই এখানে ছিলো। তাহলে মানুষ না থাকার কারণ কি? এছাড়া এই জাহাজে অবৈধভাবে কোনো যাত্রীও আনা নেয়া করা হয় নি।
কিছুদিন পর জাহাজের আসল সত্য বেরিয়ে পড়ে যখন এই জাহাজেরই একজন ক্রুকে পাওয়া যায়। সে তার বয়ানে বলে যে জাহাজের বাকি সব ক্রুরা এর কাপ্তান ও প্রকৌশলীদের হত্যা করে নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়েছে। কেনই বা তারা হত্যা করেছিল, কেনই বা নিজ দেশে ফিরে গিয়েছিল, কীভাবে গিয়েছিল- এসব প্রশ্নের উত্তর অজানাই রয়ে গিয়েছে। এছাড়া কোন খুনীকেও আজ পর্যন্ত ধরা হয় নি, যে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলো।
মেরি চেলেস্তে (Mary Celeste)
১৮৭২ সালের নভেম্বর মাসে বেঞ্জামিন ব্রিগস মেরি চেলেস্তের কাপ্তান হিসেবে নিযুক্ত হন। তার সাথে এই জাহাজে ওঠে স্ত্রী, কন্যা এবং আটজন জাহাজের কর্মী। তাদের লক্ষ্য ছিলো ইতালি থেকে নিউ ইয়র্ক অভিমুখে কিন্তু সেটা হয়ে ওঠে নি। এক মাসের বেশি এই জাহাজ সমুদ্রে ছিলো । এরপরই এটি বিরান হয়ে পড়ে। জাহাজে লাইফবোট গুলো পাওয়া যায় নি কিন্তু সেখানে অন্তত ছয় মাস ভালোভাবে টিকে থাকবার রসদ ছিলো। এছাড়াও কোনো ধরনের ঝগড়া কিংবা রক্তপাতের নিশানা পাওয়া যায় নি এই জাহাজে।
জাহাজের ভাগ্যে কী ঘটেছিলো, সেটি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন জলদস্যুরা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে, কেউ বলেছেন সবকিছুই সাগরদানোর কাণ্ড, আবার কেউ বলেছেন জাদুটোনা করে স্রেফ হাওয়ায় মিশে গিয়েছেন এই মানুষগুলো। তবে যে যাই বলুক না কেন, মেরি চেলেস্তে সমুদ্রের বুকে ভেসে চলা রহস্যগুলোর মাঝে অন্যতম।