দেখতে দেখতে চলেই এলো বড়দিন! আনন্দ উৎসব আর আয়োজনের বর্ণিল একটি দিন কাটাবে সবাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বড়দিনকে ঘিরে নানা আয়োজন করা হয়। ক্রিসমাস ট্রি, ক্রিসমাস কেক, নানা ধরনের আনন্দ আয়োজন করা হয় এই দিনে। তবে বড়দিনে বাচ্চাদের কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে সান্তা দাদু, যাকে আমরা সান্তা ক্লজ হিসেবেই চিনি। আপাদমস্তক লাল পোষাক, শ্বেতশুভ্র দাড়ি, কাঁধে বিরাট ঝোলা নিয়ে সান্তা দাদু হাজির হন। সাথে থাকে তার সঙ্গী। বাচ্চাদের জন্য নানা ধরনের খেলনা এবং মজার মজার উপহার সামগ্রী নিয়ে দিনটির আনন্দ আরো বাড়িয়ে তুলতে সান্তার জুড়ি নেই। কিছু কিছু পরিবারে রাতের বেলায় ক্রিসমাস গাছের নিচে রঙিন কাগজে মোড়ানো উপহার জমা হয়ে থাকে। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে আধো আধো চোখে বাচ্চারা গাছের কাছে আসতেই খুশি হয়ে যায়। সান্তা দাদু কি তাহলে দিয়ে গেল উপহার?
আসুন পাঠক, প্রিয়লেখার পাতায় আজ জেনে নিই ক্রিসমাসের প্রধান আকর্ষন সান্তা দাদু ও উপহার প্রথার পেছনের কাহিনীঃ
সান্তা ক্লজঃ
আমেরিকান ভার্সনে আজকে আমরা যাকে চিনি, সে সান্তা ক্লজ মূলত এসেছেন ডাচ ভার্সন সিন্ট নিকোলাস বা সিন্তারক্লাস থেকে। নিউ ইয়র্কে (তৎকালীন নিউ আমস্টারডাম) বসবাসকারী ডাচ অধিবাসীরা তাদের এই প্রথাকে আমেরিকায় নিয়ে আসেন। অনেকে আবার সোৎসাহে এটিকে এক ধরনের কাল্টও বলে থাকেন।
ডাচদের সিন্ট নিকোলাস হুবহু একই ঘরের পোষাকে হাজির হলেন আমেরিকানদের সামনে। হাসিমুখো লাল সাদা কাপড়ে জড়ানো বৃদ্ধ, আটটি উড়ন্ত হরিণ (পরবর্তীতে এই দলে লাল নাকওয়ালা হরিণ রুডলফ যোগ দেয়)।
উত্তর মেরুর কাছাকাছি কোথাও সান্তা ক্লজের বসবাস তবে ঠিক কোথায়, তা কেউ জানেন না।
ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ রাতেই এক মোজা ভর্তি করে উপহার সান্তা দাদু বাড়ির চিমনি দিয়ে রেখে যান। (এই মোজার ইতিহাসে একটু পর আসছি)
ক্লেমেন্ট সি মুরের আ ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস নামক কবিতাটিই আজকের সান্তা দাদুর জলজ্যান্ত সাক্ষ্য বহন করছে। ১৮২৩ সালে এই কবিতাটি ক্লেমেন্ট লেখেন তার বাচ্চাদের জন্য, মূলত এটি একটি পারিবারিক কবিতা ছিল। পরবর্তীতে এই পারিবারিক কবিতাটিই লোকসম্মুখে প্রকাশ করা হয় ও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
সান্তা দাদুর মোজাঃ
মাঝে মাঝে খেয়াল করলে আপনি দেখতে পাবেন, খ্রিস্টান ঘরে লাল রঙের মজা ঝুলছে। আকারে বেশ বড় এই মোজাটি পায়ে দেয়া যায় না। তাহলে এই মোজার প্রয়োজনীয়তা কি?
মোজার ভেতরে রয়েছে জাদু! চমৎকার সব উপহার এবং আকর্ষনীয় চমকে ভরা থাকে এই বিশেষ “ক্রিসমাস মোজা”। ঘরে যদি কোন পোষা প্রাণী থাকে, তাহলে এটিও এই মোজাপ্রাপ্তির আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় না। এবার এই মোজার কিভাবে এলো, সে ইতিহাস থেকে একটু ঘুরে আসা যাক।
প্রথমেই বলে রাখছি, মোজার কিভাবে এলো বা এর পেছনে যুক্তি কি, তার কোন ইতিহাস লিখিত আকারে পাওয়া যায় না। তবে অনেক পুরাকাহিনীতে এই মোজা সম্পর্কে বলা রয়েছে। এদের মাঝে কিছু কিছু বিশ্বাস করা যায়, কিছু কিছু আবার একেবারেই অবিশ্বাস্য। এমনই একটি গল্প বলছি, যেটিকে অধিকাংশ খ্রিস্টানরা মেনে থাকেন।
এক বৃদ্ধ একবার এতোটাই গরীব হয়ে পড়লেন যে তিন মেয়ের ভরণ পোষণ ঠিকভাবে করতে পারছিলেন না। মেয়েরা এদিকে বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। বিয়ে দেবার দরকার কিন্তু পাত্রপক্ষ বেশ বড় আকারের যৌতুক দাবি করে বসেছে। কি উপায়?
সেন্ট নিকোলাস এই বৃদ্ধের সম্পর্কে জানতে পারলেন। তিনি ঠিক করলেন যে যৌতুকের টাকা দিয়ে বৃদ্ধকে সাহায্য করবেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। রাতের বেলা তিন ব্যাগ সোনার মোহর নিয়ে ছুটলেন বৃদ্ধের বাড়ি। চিমনি দিয়ে প্রবেশ করবার পর দেখলেন বৃদ্ধের মেয়েরা তাদের মোজা শুঁকোতে দিয়েছে ম্যান্টেলপিসের পাশে। নিকোলাস তিন ব্যাগ সোনার মোহর ঐ মোজার সাথেই রেখে দিয়ে আসলেন।
গল্পটা আস্তে আস্তে চাউর হয়ে পড়ল। বাচ্চারা উপহার লাভের আশায় নিজেদের মোজা ক্রিসমাস ইভের আগে আগে রাতের বেলা ম্যান্টেলপিসের পাশে রেখে দিত। শুরু হলো এক কিংবদন্তী। পরবর্তীতে উপহার পাবার জন্য আলাদা করে মোজা তৈরি করা হতো। নানাভাবে নানা রঙে সাজিয়ে অশেষ প্রতীক্ষায় বাচ্চারা অপেক্ষা করতে থাকে সান্তা দাদুর উপহারের জন্য।
বড়দিনে কেবল আনন্দ বা হাসি ঠাট্টার মাঝে থাকলেই চলবে না। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে অনুভব করতে হবে আমরা বেঁচে আছি এবং এটি ঈশ্বরের উপহার। সুতরাং, মহান বড়দিন সবার জন্য আনন্দ আর মঙ্গল নিয়ে আসুক। জগতের প্রতিটি প্রাণী যেন পরমানন্দে নিরাপদে বেঁচে থাকতে পারে, এটিই হোক আমাদের প্রার্থনা।
(ফিচারটি লিখতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটের)