আজ সারাদিন অনেকের ফেসবুকের নিউজফীড জুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে একটি জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা- ‘শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ’। অনেকে আবার সেটিতে লাইক কমেন্ট ও করেছেন। কিন্তু আসলেই কি ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জন্মদিন? ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত যেই স্বাধীন দেশ, তার জন্মদিন নিয়ে কেন এর অধিবাসীদের মধ্যে থাকবে এত বিতর্ক, এত দ্বিধা? মহান বিজয় দিবসের এই দিনে তাই সকলে জেনে নিন বাংলাদেশের প্রকৃত জন্মদিন কবে, ২৬ মার্চ নাকি ১৬ ডিসেম্বর।
একটি দেশের শাসনতন্ত্রের মূল ভিত্তি তার সংবিধান। যারা ১৬ ডিসেম্বরকে আমাদের জন্মদিন বলছেন, আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় কি লেখা আছে তা যদি একবার পড়তেন, তাহলে এ নিয়ে অন্তত কোন বিতর্ক করার সুযোগ পেতেন না। সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্পষ্টভাবে লেখা আছে,
“আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া [জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের] মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি”। এরপর নিশ্চয়ই আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, ১৬ ডিসেম্বর না, ২৬ মার্চই বাংলাদেশের জন্মদিন।
অনেকে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের গর্ভাবস্থায় আগমন, আর ১৬ ডিসেম্বর জন্ম। তাদের কাছে প্রশ্ন, ২৬ মার্চ যাদের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়, ১০ এপ্রিল যেই দেশের সরকার গঠিত হয়, ১৭ এপ্রিল যেই সরকার শপথ গ্রহণ করে, সেই দেশের জন্ম তাহলে ১৬ ডিসেম্বর হয় কিভাবে? তাহলে কি জন্মের আগেই দেশের সরকার গঠিত হয়ে গিয়েছিল?
উত্তর হল, না। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুপক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হয়। দেশের মাটিকে সেই শত্রুপক্ষের হাত থেকে মুক্ত করে বিজয় লাভের জন্যই আমাদের এই নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর তাই আমাদের জন্মদিবস নয়, বরং বিজয় দিবস। আমাদের জন্মদিবস ২৬ মার্চ, যেদিন আমাদের স্বাধীনতা দিবস।
অনেকেই বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ বাইরের কোন দেশের স্বীকৃতি পায়নি। তাদের জন্য বলা, ভুটান এবং ভারতের স্বীকৃতি বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বরের আগেই পেয়েছে। ১৯৭১ সালের ০১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশঙ্করের নেতৃত্বে যে কনসার্টটি হয়েছিল, সেটির নাম মনে করে দেখুন তো একবার? কি, মনে পড়ল? জি হ্যাঁ, কনসার্টটির নাম ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ ই ছিল। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশের জন্যই বাদ্যযন্ত্র হাতে লড়াই করছিল। ২৬ মার্চ যদি বাংলাদেশের জন্মই না হয়, তাহলে এই লড়াই কাদের জন্য? পূর্ব পাকিস্তানের জন্য? না, আমাদের এই বাংলাদেশের জন্য।
সুতরাং, তরুণ প্রজন্ম, নিজের মাতৃভূমির জন্মদিবস নিয়ে অন্তত দ্বিধাবিভক্ত হয়ো না! নিজের দেশের জন্মদিবস সম্পর্কে ভুল জ্ঞান অর্জন করো না। ৩০ লাখ মুক্তিযোদ্ধার তাজা গরম রক্ত ও অগণিত মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে যে দেশ, সেই দেশের জন্মদিবসকে ভুল লিখে তুমি সেই দেশকে অপমান করো না, দেশের সবচেয়ে বড় গর্বের জায়গা, মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করো না! চলুন আমরা সবাই জানি দেশের সঠিক ইতিহাস, অন্যকেও জানতে উদ্বুদ্ধ করি।