অধিনায়কত্ব নাকি অনেক সময় বাড়তি বোঝা মনে হয় অনেকের কাছে। অধিনায়কত্বের বাড়তি দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে অনেকে ভুলে যান নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিংই, যার প্রতিফলন পরে পরিসংখ্যানেও। কিন্তু স্টিভেন স্মিথ আর বিরাট কোহলির দিকে তাকালে মনে হতে বাধ্য, অধিনায়কত্বই বোধহয় বের করে আনে ব্যাটিংয়ের সেরাটা! অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে দুজনের ব্যাটেই যে চলছে রানের ফল্গুধারা!
আগের দিন অসম্ভব মনঃসংযোগের উদাহরণ দিয়ে অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেছিলেন স্টিভ স্মিথ। বিরাট কোহলিই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন! পরের দিন তিনিও খেললেন অসাধারণ আরেকটি অধিনায়কোচিত ইনিংস। দুজনে যেন একে অপরকে তাড়া করার খেলায় মেতেছেন! অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে রান করা আর সেঞ্চুরি করাকে একপ্রকার শিল্পের রূপ দিয়ে ফেলছেন এই দুজন মিলে।
দুজনের মিলটাও কিন্তু দারুণ। অধিনায়ক হিসেবে দুজনেরই যাত্রা শুরু ২০১৪-১৫ তে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর দিয়ে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ইনিংসে দুজনেই পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা। কোহলি তো অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম তিন ইনিংসেই করেছিলেন সেঞ্চুরি! পিছিয়ে থাকেননি স্মিথও, নেতৃত্ব দেয়া প্রথম পাঁচ টেস্টের মধ্যেই পেয়ে গিয়েছিলেন তিন সেঞ্চুরি। সেই যে শুরু, এরপর রান করায় কোন ক্লান্তির ছাপ দেখা যায়নি দুজনের ব্যাটিংয়ে। দুজনে মিলে যেন ‘রান-ফেস্ট’ এ নেমেছেন!
গ্যাবা টেস্ট নিয়ে এই পর্যন্ত ২৭ টেস্টে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্মিথ, এই ২৭ টেস্টেই করে ফেলেছেন ১৩ টি সেঞ্চুরি! দারুণ আকর্ষণীয় ৭২.৪৬ গড়ে রান করেছেন ২৯৭১। খুব বেশি পিছিয়ে নেই কোহলিও। নেতৃত্ব দেয়া ৩১ টেস্টে কোহলি করেছেন ১২ টি সেঞ্চুরি, ৬৩.৯৩ গড়ে রান ২৮৭৭। দুজনেই অধিনায়ক অবস্থায় জিতেছেন চারটি করে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ।
অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটিংয়ে সেরা গড় (অন্তত ৫০০ রান)-
নাম | ম্যাচ | রান | গড় | সেঞ্চুরি |
স্যার ডন ব্র্যাডম্যান | ২৪ | ৩১৪৭ | ১০১.৫১ | ১৪ |
স্টিভেন স্মিথ | ২৭ | ২৯৭১ | ৭২.৪৬ | ১৩ |
কুমার সাঙ্গাকারা | ১৫ | ১৬০১ | ৬৯.৬০ | ০৭ |
বিরাট কোহলি | ৩১ | ২৮৭৭ | ৬৩.৯৩ | ১২ |
কেন উইলিয়ামসন | ১৩ | ১০৭৯ | ৫৯.৯৪ | ০৪ |
এই তালিকায় স্মিথের পেছনে থাকলেও হিসাবটা যদি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করা হয়, তাহলে সেখানে স্মিথকে পেছনে ফেলে দিচ্ছেন কোহলি। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে অন্তত ১০০০ রান করেছেন এমন সব ব্যাটসম্যানদের মধ্যেই কোহলির গড় সেরা। ২১ ম্যাচে ৭০.৭৫ গড়ে ও ৮ সেঞ্চুরিতে কোহলির রান ১৯৮১। দ্বিতীয় অবস্থানে কে আছেন তা বোধহয় আর বলে না দিলেও চলবে, স্টিভেন স্মিথ! ১৯ টেস্টে ৬৮.৬০ গড়ে তাঁর রান কোহলির চেয়ে মাত্র ৬০ কম, সেঞ্চুরি সমান ৮টিই।
তবে অধিনায়কত্বের আরেক জায়গায় শুধু স্মিথ না, ইতিহাসের সব অধিনায়ককেই পেছনে ফেলে নতুন চূড়ায় বসেছেন বিরাট কোহলি। নাগপুর টেস্টে ২১৩ রানের যে ইনিংসটি খেলেছেন, সেটি ২০১৭ সালে কোহলির চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি, আর সব ফরম্যাট মিলিয়ে দশম। আর এতেই নতুন রেকর্ডের মালিক হয়েছেন তিনি। এক পঞ্জিকাবর্ষে ১০ টি সেঞ্চুরি করতে পারেননি ইতিহাসের আর কোন অধিনায়ক, আগের সর্বোচ্চ ৯ টি করে ছিল রিকি পন্টিং (২০০৫ ও ২০০৬) ও গ্রায়েম স্মিথের (২০০৫)।
কোহলির রেকর্ড আছে আরও। অধিনায়ক হিসেবে করা ১২ টি সেঞ্চুরির মধ্যে ৫টিকে রূপ দিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরিতে। ব্রায়ান লারা ছাড়া আর কোন অধিনায়কের ৫ টি ডাবল সেঞ্চুরি নেই। ৪ টি করে আছে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, মাইকেল ক্লার্ক ও গ্রায়েম স্মিথের।
কোহলির কনভার্শন রেট দেখেও অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই। অধিনায়ক হিসেবে যে ১৬ বার টেস্টে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন তিনি, তার ১২ টিকেই পরিণত করেছেন সেঞ্চুরিতে! টেস্টে অন্তত ১০ টি সেঞ্চুরি করেছেন যে ১৮ জন অধিনায়ক, তাদের মধ্যে কোহলির কনভার্শন রেটই সর্বোচ্চ (৭৫%)। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও মাইকেল ক্লার্কের কনভার্শন রেট ৬৭%।
নিজ নিজ দলের সেরা ব্যাটসম্যান তাঁরা, দুজনেই আছেন জীবনের সেরা ফর্মেও। বিরাট কোহলি ও স্টিভ স্মিথের জমজমাট এই লড়াই তাই আরও বেশ কিছুদিন উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা!
ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে