প্রতিটি দেশের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষের মনে সৃষ্টি করেছে আগ্রহ, কৌতূহল এবং জন্ম দিয়েছে হাজারো প্রশ্নের। যেকোনো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে। আর তাদের পেশাটাই এমন যে কাউকে কিছু জানানোর জো নেই। কাজেই তাদের এই গোপনীয়তা মানুষকে করে তোলে সন্ধিৎসু। মাসুদ রানা, জেমস বন্ডের মতো গোয়েন্দা চরিত্রগুলোর মাধ্যমেই আমরা তাদের কর্মক্ষেত্রের একটি ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করি। বিবিসির মতে এ বছরের শীর্ষ পাঁচ গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে সাজানো হলো আমাদের আজকের আয়োজন।
১) আইএসআই, ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স, পাকিস্তান
ইন্টার সার্ভিস, সাধারণ জনগণের কাছে যা আইএসআই নামেই অধিক পরিচিত, পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক বিষয়গুলোর দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করে চলেছে দীর্ঘদিন যাবত। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের সাহসী এবং দুঃসাহসিক সব পদক্ষেপের কারণে এ বছর তারা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত এক নাম-পরিচয় গোপনকারী ব্রিটিশ আর্মি অফিসারের হাত ধরে ১৯৪৮ সালে গড়ে ওঠে আইএসআই। ঐ ব্রিটিশ আর্মি অফিসার ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরত ছিলেন। এর আগে ২০১১ সালেও যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থার খেতাব লাভ করে আইএসআই।
২) সিআইএ, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, যুক্তরাষ্ট্র
দ্য সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা সিআইএ যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, যারা সুদীর্ঘকাল ধরে সুনামের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের পক্ষে কাজ করে চলেছে। মধ্যপ্রাচে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ জনিত যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে সিআইএ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। সারাবিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিরল একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা। আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে, ১৯৪৭ সালের ২৬ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে সিআইএ গঠন করার উদ্যোগ নেন হ্যারি এস. ট্রুম্যান। ৯/১১ এর জঙ্গি হামলার পর থেকে সিআইএ আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
৩) এমআই৬, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স সেকশন ৬, যুক্তরাজ্য
দ্য সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসআইএস) যা আনুষ্ঠানিকভাবে এমআই৬ বা মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স সেকশন ৬ নামেই পরিচিত, বিশ্বের শীর্ষ দশ গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাটি গঠিত হয় ১৯০৯ সালে, তবে গোয়েন্দা সংস্থা আইন ১৯৯৪ জারি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের পক্ষ থেকে এমআই৬ এর কথা গোপন রাখা হয়। ১৯৯৪ সালেই সাধারণ জনগণ জানতে পারে এই নামে একটি গুপ্ত সংস্থা প্রায় ৯৪ বছর ধরে কাজ করে চলেছে! ১৯৯৫ সালে টেমস নদীর দক্ষিণ দিকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা দ্য সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের অফিস স্থাপন করা হয়, এমআই৬ তখনও বহির্বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে হাত মিলিয়ে গোপনে কাজ করেছে। প্রতি বছর এই গোয়েন্দা সংস্থাটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে খরচ হয় প্রায় ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৪) এফএসবি, ফেডারেল সিকিউরিটি ব্যুরো অফ রাশিয়ান ফেডারেশন, রাশিয়া
দ্য ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস অফ রাশিয়ান ফেডারেশন নামটি অনেকের কাছে অপরিচিত মনে হলেও কেজিবির কথা বললে যে কেউ একবারেই চিনে ফেলবে, বিশেষত মাসুদ রানার ভক্তদের কাছে এই নামটি খুব পরিচিত। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এফএসডি নামধারী এই গোয়েন্দা সংস্থাটি সন্ত্রাসবাদ দমন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলো পর্যবেক্ষণের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে গঠিত এই সংস্থাটির সদর দপ্তর মস্কোর কেন্দ্রে অবস্থিত। তবে দেশব্যাপী তাদের আর অগণিত গুপ্ত শাখা-প্রশাখা রয়েছে।
৫) বিএনডি, বুনদেসনাক্রিক্টেন্ডায়েন্সট, জার্মানি
দ্য ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (বিএনডি) জারমানির প্রধান নিরাপত্তা সংস্থা যা সরাসরি চ্যালন্সেলরের অফিসের সাথে সম্পৃক্ত। আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে, ১৯৫৬ সালের ১ এপ্রিল মিউনিখ এবং বার্লিনের কাছে পুলাক শহরে স্থাপন করা হয় বিএনডির সদর দপ্তর। প্রতি বছর এই সংস্থাটির পেছনে প্রায় ৬১৫.৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করে জার্মানি। শহরটিতে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিবাসন, ড্রাগ স্মাগলিং, অর্থ পাচারসহ যাবতীয় অবৈধ কাজের মোকাবিলা করতে সদা তৎপর বিএনডি। নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে তারা শীর্ষ দশ গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে।