আমরা যারা সভ্য সমাজে বাস করি, কখনো কি আদিমতার ছোঁয়া পেয়েছি? কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে এই ঝাঁ চকচকে শহুরে জীবনের বাইরেও একটি জীবন আছে, যা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে? যেখানে একটি দিন ওয়াই ফাই কিংবা ইন্টারনেটের সংস্পর্শে না থাকলে আমরা পাগলপারা হয়ে উঠি, সেখানে এই সমাজের মানুষগুলো কম্পিউটার কি, তা জানে না। অবাক হবেন না মোটেও। গবেষকদের ধারণা, আমাদের জানা পৃথিবীর বাইরেও একটি আদিম জগত আছে, যেখানে সভ্য মানুষের পা পড়ে নি। আসুন, আজ প্রিয়লেখার পাতায় এমনই সব রহস্যময় আদিম গোত্রের সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাকঃ
১) দ্য সুরমা পিপলঃ
ইথিওপিয়ার সুরমা ট্রাইব বা গোত্র বসবাস করে সভ্য মানুষদের কোন সংস্পর্শ ছাড়াই। পশ্চিমাদের কাছে তারা পরিচিত বিশালাকার ঠোঁটের কারণে। বলা হয়ে থাকে, প্রমাণ সাইজের একটি ফ্রিসবী (খেলনা চাকতি) অনায়াসেই তারা মুখে ধরতে পারে। সুরমার লোকেরা মূলত দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে পছন্দ করে। শত বছরের আধিপত্য, শোষণ, বঞ্চনা- ইত্যাদি সহ্য করবার পর আধুনিক মানুষদের সাথে এরা থাকতে আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে নি। ১৯৮০ সালে রাশিয়ান কিছু ডাক্তার তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সুরমা গোত্রের ব্যক্তিরা ভেবেছিলেন তারা কোন ধরণের ভূত কিংবা জোম্বি। কারণ, তাদের গায়ের চামড়ার রঙ অদ্ভূত!
২) পেরুভিয়ান ট্রাইবঃ
পেরুর জঙ্গলে চলতে চলতে কয়েকজন অভিযাত্রীর দেখা হয়ে গিয়েছিল অদ্ভুত কিছু মানুষের সাথে। এই গোত্র কিংবা এমন মানুষের সাথে পরিচিত নন তারা। বইয়ের পাতায় কখনো এদের ছবিও দেখেন নি। এই গোত্রের মানুষেরা সে অভিযাত্রীকদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু ইংরেজী বা স্প্যানিশ না জানার কারণে যোগাযোগ সম্ভব হয় না। ফলে দ্রুতই হাল ছেড়ে দেয় তারা। তবে অভিযাত্রীকেরা একটি কাজ করেছিলেন। তারা যা কিছু দেখেছেন, সবকিছুই ভিডিওর মাধ্যমে ধারণ করেছেন। পেরু সরকার যখন এই ভিডিও দেখেন, বুঝতে পারেন যে প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে পেরুর এই গোত্রের কথা কখনো তাদের জানা হয়ে ওঠে নি।
৩) একাকী এক ব্রাজিলিয়ানঃ
নিচের ছবিতে তীর ধনুক হাতে উদ্যত যে মানুষটিকে দেখতে পাচ্ছেন, তাকে বলা হয় “পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ”। আমাজনের গভীরে একটি গোত্র আছে, যেটি গঠিত হয়েছে সম্পূর্ণ একাকী একজন মানুষ নিয়ে কিংবা বলা যায় ঐ মানুষটি নিজেই গড়ে তুলেছে তার সাম্রাজ্য। বিগফুটের মতই রহস্যময় এই মানুষটি হারিয়ে যায় যখন বিজ্ঞানীরা তাকে খোঁজার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানীদের মাথায় একটি বিষয় অনেকদিন ধরেই ঘুরছে। নানা গবেষণাও হয়েছে। একাকী থাকবার মাধ্যমে এই মানুষটি এমন কি শান্তি খুজে পায়? আমাজনের অভ্যন্তরে বাস করা এই একাকী মানুষটি তার গোত্রের সর্বশেষ ব্যক্তি। যত্নে সংরক্ষণ করছেন গোত্রীয় নানা তথ্য, ইতিহাস এমনকি মূল্যবান সম্পদও। এতকাল কেমন করে তিনি বেঁচে রইলেন, সেটি বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বিস্ময়।
৪) দ্য ভিয়েতনামিজ রুখঃ
ভিয়েতনাম ও আমেরিকার মাঝে যুদ্ধ দেশটির মাঝে অনেক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছিল। একদিন আমেরিকার মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণে ভিয়েতনামিজ সৈন্যরা অবাক হয়ে দেখলেন যে, জঙ্গল থেকে আস্তে আস্তে করে কিছু মানুষ বেরিয়ে আসছে। এই গোত্রের সম্পর্কে না আছে তাদের কাছে কোন তথ্য, না এদের আগে কখনো দেখেছেন তারা।
সভ্যতার সাথে রুখদের সাথে সেটিই প্রথম যোগাযোগ। নিজেদের আবাস ধ্বংস হয়ে যাবার কারণে তারা মূলধারার মানুষের সাথে বসবাস করতে শুরু করে কিন্তু শত বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এখনো নিজেদের মাঝে লালন করে চলেছে তারা।
৫) দ্য সেন্টিনেলিজঃ
ভারত ও থাইল্যান্ডের মাঝামাঝি একটি দ্বীপ রয়েছে, যেটির নাম উত্তর সেন্টিনেল আইল্যান্ড। এই দ্বীপের জনবসতি গঠিত হয়েছে মাত্র ২৫০ জন মানুষের দ্বারা। এদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় নি কারণ, যে কেউ এদের সাথে দেখা করতে গেলেই বিষাক্ত তীরের মাধ্যমে তারা স্বাগত জানায়! ১৯৬০ সালের দিকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সাথে সাক্ষাত করা একটি ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাদের নারকেল দেয়া হয় আবাদ করে নিজেদের খাদ্য সমস্যা মেটাবার জন্য। কিন্তু দেয়া সব নারকেল তারা খেয়ে ফেলে। বীজ হিসেবে কোন কিছুই অবশিষ্ট রাখে না। শূকর প্রদান করা হলে সেটিকে তীরবিদ্ধ করে হত্যা করে। এরপর তা মাটিতে পুঁতে কবর দেয়। যে জিনিসটি তারা সাদরে গ্রহণ করেছিল, তা হচ্ছে লাল রঙের কিছু বালতি। তবে একই আকার বিশিষ্ট সবুজ রঙের বালতি গ্রহণ করতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির একটি দল তাদের সাথে দেখা করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে জখম হয়েছিল। তাই অনেকে মজা করে বলেন, সেন্টিনেলদের সাথে দেখা করতে যেতে হলে নিজের সম্পত্তি আগে উইল করে যেতে হবে। প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়, প্রতিকূল পরিবেশ, খাদ্যের সমস্যা- ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যা থাকার পরেও এতোদিন তারা কিভাবে টিকে আছে, সেটা বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বিস্ময়।
আমাদের চেনা জগতের বাইরেও একটি জগত আছে, যেটি অনেক রহস্যময়, অনেক দূর্বোধ্য। তবুও অকুতোভয় মানুষ জানতে চায় সভ্যতা থেকে দূরে থাকা এসব মানুষের সম্পর্কে, পেতে চায় তাদের সান্নিধ্য। এজন্য অনেক সময় তাদের পাড়ি দিতে হয় নানা বিপদসংকুল পরিবেশ।
(ফিচারটি তৈরি করতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটের)