-শুভ আপনি এখন কোথায়?
-স্যার আমি তো সন্দ্বীপ। এখানে নেটওয়ার্কের অবস্থা খুব খারাপ? তাই আপনাকে জানাতে পারি নি। আমি দুইদিন পরে ফিরছি।
পাঠক উপরের ঘটনাটি কিন্তু উদাহরণ হলেও কিছুদিন আগে পর্যন্ত সত্য ছিল। কিন্তু আজ থেকে আপনি যেমন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলার সুযোগ পাচ্ছেন না আপনি নেটওয়ার্কের বাইরে, তেমনি দেনাদার হোক কিংবা শিক্ষার্থী কেউ আর বলতে পারবে না সে নেটওয়ার্কের বাইরে। কারন আজ থেকে দেশে চালু হল এমএনপি বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টেবিলিটি।
দেশে প্রথমবারের মত এই সুবিধা চালু করতে চলেছে ” ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড” নামক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ও স্নোভেনিয়ার যৌথ উদ্যােগে গঠিত। এমএনপি বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টেবিলিটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে গ্রাহক তার মোবাইল নাম্বার অপরিবর্তিত রেখে মোবাইল অপারেটর পরিবরতন করতে পারবেন। এবং এতে গ্রাহকের খরচ হবে শুধু মাত্র ৩০ টাকা। এমএনপি বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টেবিলিটি সুবিধা পেতে আবেদন করার সময় আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে একবার মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন করার ৯০ দিনের মধ্যে আপনি আর পুনরায় এই সুবিধা গ্রহন করতে পারবেন না।
এতদিন যারা নাম্বার পরিবর্তনের ভয়ে মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান পাল্টাতে পারছিলেন না, নিতে পারছিলেন না পছন্দসই অফার তারা এবার নিতে পারবেন পছন্দসই অপারেটরের প্যাকেজ এমএনপি সুবিধা গ্রহন করে। বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন এবার মোবাইল অপারেটররা তাদের গ্রাহক ধরে রাখতে বাড়াবেন সেবার মান একই সাথে বাড়বে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর মাঝে চলবে তীব্র প্রতিযোগিতা।
গতকাল মঙ্গলবার বিটিআরসির কনফারেন্স রুমে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড কাছে মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টেবিলিটির লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ,ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাব্রুর রহমান সহ অন্যরা।
এই লাইসেন্স পেতে ইনফোজিলিয়ান ছাড়াও টেন্ডারের মাধ্যমে আরও আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশ ও লিথুনিয়ার যৌথ কোম্পানি গ্রীন টেক মিডিয়াফোন লিমিটেড, ব্রাজিল বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম, বাংলাদেশ ও পোল্যান্ডের যৌথ কোম্পানি রিভ নম্বর লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ও মিশরের যৌথ কোম্পানি রয়েল গ্রীন লিমিটেড।
লাইসেন্স প্রাপ্তির শর্তে বলা রয়েছে, লাইসেন্স প্রাপ্তি হতে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের মোবাইল গ্রাহকের কমপক্ষে ১ % শতাংশ, ১ বছরের মধ্যে ৫% শতাংশ এবং ৫ বছরের মধ্যে ১০% শতাংশ গ্রাহককে এমএনপি সেবার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড কে লাইসেন্স অ্যাকুইজিশন ফি ১০ কোটি টাকা, বাৎসরিক লাইসেন্স ফি ২৫ লাখ টাকা, রেভিনিউ শেয়ারিং (২য় বছর থেকে) ১৫% শতাংশ হারে, ব্যাংক গ্যারান্টি ১০ কোটি টাকা এবং সিএস আর ফান্ডে ২য় বছর থেকে বাৎসরিক নিরীক্ষাকৃত আয়ের ১% শতাংশ বিটিআরসিকে দিতে হবে।
বিশ্বের ৭২ টি দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টেবিলিটির সুবিধা রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে এশিয়ার ১২টি দেশও। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড এরপর ১৩তম এমএনপি সেবা ভুক্ত দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ।সব ঠিকঠাক চললে আগামী বছরের মার্চে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টেবিলিটি সুবিধা পাব।
এবার আর রইবে না মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক জিম্মি অবস্থান তাই প্রতিটি গ্রাহকের প্রত্যাশা।