গ্রীক ক্লাব অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। তবে এই জয় ছাপিয়েও বড় হয়ে উঠেছে আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসির আরেকটি রেকর্ড। অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে এক গোল করে সবচেয়ে কম ম্যাচে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় একশ গোলের রেকর্ড করলেন এই ম্যাজিশিয়ান। মেসির এই একশ গোলের ব্যবচ্ছেদ নিয়েই প্রিয়লেখার আজকের আয়োজন।
১২২ তম ম্যাচে এসে শততম গোলের দেখা পেলেন মেসি। তিন ম্যাচ বেঞ্চে বসে দেখার পর ২০০৪ সালের ০৭ ডিসেম্বর ১৭ বছর বয়সে শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অভিষেক মেসির। অভিষেক ম্যাচেই অবশ্য জুটেছিল ২-০ গোলের পরাজয়।
এই একশ গোলের মধ্যে তাঁর জাদুকরী বাম পা দিয়ে গোল করেছেন ৮০ টি, যার মধ্যে আছে ৫ টি ফ্রিকিক গোল ও ৯ টি পেনাল্টি গোল। ডান পা থেকে এসেছে ১৬ টি গোল, আর হেডে করেছেন ৪ গোল।
তবে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় গোলের খাতা খুলতে মেসিকে বেশ লম্বা সময়ই অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রথম চার ম্যাচে গোলশূন্য থাকার পর পঞ্চম ম্যাচে এসে প্যানাথিনাইকোসকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করা ম্যাচে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথম গোল পান মেসি। তবে সময়ের হিসাবে ততদিনে কেটে গেছে প্রায় ১ বছর! ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অভিষেকের প্রায় ১১ মাস পর ২০০৫ সালের ০২ নভেম্বর প্রথম গোল পান তিনি। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় গোল পেতে মেসিকে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়নি আর কখনোই। তবে টানা তিন ম্যাচে গোলশূন্য থেকেছেন আরও তিন দফায়, অক্টোবর ২০০৬- মার্চ ২০০৭, মার্চ ২০০৮- সেপ্টেম্বর ২০০৮ ও ফেব্রুয়ারি ২০১৫- এপ্রিল ২০১৫।
প্রথম ২০ গোল পেতে মেসিকে খেলতে হয়েছে ৪২ টি ম্যাচ, এরপর ২০ গোল করতে আর কখনোই এতগুলো ম্যাচ লাগেনি তাঁর। ২১-৪০ এই ২০ গোলের জন্য খেলতে হয়েছে ২১ ম্যাচ, ৪১-৬০ এই ২০ গোলের জন্য ১৮ ম্যাচ, ৬১-৮০ এই ২০ গোলের জন্য ২৩ ম্যাচ এবং ৮১-১০০ এই ২০ গোলের জন্য খেলতে হয়েছে ১৮ ম্যাচ।
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ৭ টি হ্যাটট্রিক করেছেন মেসি, আরেক গোলমেশিন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকও অবশ্য সমান সংখ্যকই। এর মধ্যে ২০১২ সালের ৭ মার্চ লেভারকুসেনের বিপক্ষে ৭-০ গোলের জয়ে একাই ৫ গোল করেন মেসি। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় এক ম্যাচে ৫ গোলের রেকর্ড নেই আর কারোর। এর আগে ২০১০ সালের ০৬ এপ্রিল আর্সেনালের বিপক্ষে করেছেন এক ম্যাচে ৪ গোল, যে ম্যাচের পর আর্সেন ওয়েঙ্গার তাঁকে বলেছিলেন ‘প্লে স্টেশনের খেলোয়াড়’। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সেল্টিক ও ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে করেছেন হ্যাটট্রিক।
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় মেসির সবচেয়ে সুবর্ণ সময় কেটেছে নভেম্বর ২০১১ থেকে মার্চ ২০১২ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে মাত্র ৪ ম্যাচে ১০ গোল করেছিলেন তিনি। সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০১৬ এই সময়ের মধ্যেও ৫ ম্যাচে মেসি করেছেন ১০ গোল।
কার বিপক্ষে কত গোল:
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় এখনো পর্যন্ত মেসির সবচেয়ে ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ আর্সেনাল। একশ গোলের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ টি গোল করেছেন আর্সেন ওয়েঙ্গারের দলের বিপক্ষে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ টি গোল করেছেন এসি মিলান ও সেল্টিকের বিপক্ষে। ৭ গোল করেছেন বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে, ৬ টি করে গোল করেছেন আয়াক্স ও ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে। ৪ টি করে গোল আছে বায়ার্ন মিউনিখ, প্যানাথিনাইকোস, পিএসজি ও স্পার্তাক মস্কোর বিপক্ষে। ৩ গোল করেছেন এপোয়েল, কোপেনহেগেন, লিওঁ, ভিক্টোরিয়া প্লাজেন, শাখতার দোনেৎস্ক ও স্টুটগার্টের বিপক্ষে। ২ গোল করেছেন বাসেল, বাতে বরিসভ, ডায়নামো কিয়েভ, জুভেন্টাস, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, রোমা ও সেভিয়ার বিপক্ষে। আর ১ গোল করে আছে বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখ, অলিম্পিয়াকোস, পোর্তো, রেঞ্জার্স, স্পোর্টিং সিপি ও ওয়ের্ডার ব্রেমেনের বিপক্ষে।
একশ গোলের মধ্যে ৫৫ টি গোল মেসি করেছেন তাঁর প্রিয় ন্যু ক্যাম্পে। ৪০ গোল করেছেন প্রতিপক্ষের মাঠে, আর বাকি ৫ গোল করেছেন নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। এই একশ গোলের ৬০ টি এসেছে গ্রুপ পর্বে, ২১ টি করেছেন রাউন্ড অফ সিক্সটিনে, দুইটিই রেকর্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে করেছেন ১০ গোল, সেমিফাইনালে ৪ গোল আর ফাইনালে ৫ গোল।
মেসি গোল করেছেন এমন ৮৪% ম্যাচে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বার্সেলোনা। ৫২ টি ম্যাচে গোল করে বার্সাকে জয় এনে দিয়েছেন মেসি। মেসি গোল করেছেন অথচ বার্সেলোনা হেরেছে, এমনটা ঘটেছে মাত্র ৩ বার। আর ৭ টি ড্র ম্যাচে গোল করেছেন মেসি।
১৫১ ম্যাচে ১১৩ গোল নিয়ে মেসির সামনে আছেন কেবল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। দুজনই এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এরই মধ্যে গোল পেয়ে গেছেন। আর এই দুজনের গোলের লড়াই উপভোগের চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে!
উয়েফা ডট কম অবলম্বনে