আমাদের অনেকের নানা রকমের শখ থাকে। কেউ বই পড়তে ভালোবাসে, কেউ গান গাইতে, কেউ গীটার বাজাতে, কেউ আঁকিবুঁকি করতে। এদের মাঝে আবার কারো কারো শখ থাকে শরীরে ট্যাটু তৈরি করা। হাতে পিঠে পেটে গলায় নানা ধরণের ট্যাটু তৈরি করেন এসব ট্যাটুপিয়াসীরা। উদ্দেশ্যঃ অন্যের কাছে নিজেকে একটু ব্যতিক্রম করে তুলতে। তবে শখের তোলা আশি টাকা বলেও একটা কথা আছে। এদের মাঝেই কেউ কেউ শখটাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যান যে নানা ধরণের বিপত্তি ঘটতে পারে।
যেমন, এই কানাডিয়ান মডেলের কথাই ধরুন না! “আইবল ট্যাটু” করাতে গিয়ে নিজের চোখটাই হারাতে বসেছেন ইনি! বিজ্ঞানীরা বলছেন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি তার চোখও হারাতে পারেন চিরতরে।
আমাদের চোখের যে সাদা অংশ রয়েছে, একে বলা হয়ে থাকে স্ক্লেরা। সিবিএস নিউজের মতে, ক্যাট গ্যালিংগার নামের এক মডেল প্রায় চার সপ্তাহ আগে নিজের চোখের স্ক্লেরার অংশে ‘ট্যাটু ইংক’ (ট্যাটু বসানোর জন্য যে কালি বসাতে হয়) দ্বারা একটু ট্যাটু আঁকান। প্রথমে তাকে বলা হয়েছিল কোন ধরণের সমস্যা হবে না। কিছুদিন পরেই তিনি চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন এবং চোখে জ্বলুনি শুরু হয়। ভয়ের ব্যপার হচ্ছে, তার চোখ দিয়ে বেগুনি রঙের তরল পদার্থ ঝরতে শুরু করে।
ক্যাট তার ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস আপলোড দিয়ে বলেন,
“আমার খুব শীঘ্রই একজন বিশেষজ্ঞের কাছে দেখানো উচিত। হয়ত কিছুদিনের মাঝেই আমি অন্ধ হয়ে যাব।”
গত দশক থেকেই চোখের আইবলে ট্যাটু আঁকানো একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে। আমেরিকান একাডেমী অব অপথ্যালমোলজি তাদের দেয়া একটি রিপোর্টে বলেছে, একজন ট্যাটু আর্টিস্ট তার চোখের কনজাংক্টিভার নিচে ট্যাটু ইংক ইনজেক্ট করে এবং এর ফলে চোখের সাদা অংশটিকে যে পর্দা আচ্ছাদিত করে রাখে, সেটি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে চোখের নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয় এবং আস্তে আস্তে চোখটি বিনষ্ট হতে শুরু করে। তবে গবেষকরা বলছেন এই প্রক্রিয়ায় ট্যাটু তৈরি করা নিরাপদ হলেও হতে পারত, কিন্তু যারা ট্যাটু তৈরি করেন, তাদের কারণে সেটি সম্ভব নয়। বিবিসি তাদের একটি রিপোর্টে প্রকাশ করেছে একজন ট্যাটু আর্টিস্ট ট্যাটু তৈরি করবার সময় পিগমেন্ট বেশি গভীরে প্রবেশ করান, যে সুঁই প্রয়োগ করা হয়, সেটি হয়ত বেশি বড় ব্যবহার করা হয়, আবার অনেকে ভুল কালিও ব্যবহার করে থাকেন। এই ট্যাটু তৈরি করবার সময় বেশ সময় নিয়ে করতে হয় বলে তারা তাদের রিপোর্টে প্রকাশ করেছে। যারা ট্যাটু আঁকান, তারা চোখের সমস্ত সাদা অংশটি জুড়ে আঁকিয়ে থাকেন। এটি নিতান্তই অনুচিত। একটি নির্দিষ্ট অংশ জুড়ে যদি এই ট্যাটু তৈরি করা হয়, তাহলে শখটিও পূরণ হয়ে থাকে এবং চোখেরও কোন ধরণের ক্ষতি হয় না।
এ বছরেরই শুরুর দিকে নিউ ইয়র্ক শহরের ২৭ বছর বয়সী এক যুবকের আইবল সার্জারীর মাধ্যমে খুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন ডাক্তাররা। তার চোখের বেশ গভীরে ট্যাটু ইংক প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এটি এমন একটি পর্যায়ে চলে যায় যে ঐ যুবক ভয়াবহ ব্যথার শিকার হয়। ডাক্তাররা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন যাতে সার্জারীর মাধ্যমে চোখটি রক্ষা করা যায়, কিন্তু সম্ভব হয় নি। বেশ গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল চোখটিতে। আইবল বের করবার পর তারা রেটিনার দেখা পান। সেটি ভরাট হয়ে ছিল ট্যাটু ইংকে!
আমেরিকান একাডেমী অব অপথ্যালমোলজি তাদের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেন, এই ধরণের ট্যাটু যারা তৈরি করে, তারা এখনো রপ্ত হয় নি কাজটি করার ব্যাপারে। তাই এ ধরণের ট্যাটু আঁকিয়েদের কাছ থেকে বিরত থাকা উচিত। ডাক্তাররাও এখনো যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন নি এই রোগের চিকিৎসা ভালোভাবে করবার জন্য। তাই এই শখ থেকে বিরত থাকতেই বলেছেন তারা।
সবশেষে এটিই বলব, শখ ছাড়া মানুষ পূর্ণতা পায় না। প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু শখ থাকা উচিত। তবে এমন কোন শখ অবশ্যই পালন করা উচিত নয়, যেটি পালন করতে গিয়ে শরীরের ক্ষতি হয়। ভালো থাকবেন, নিজেকে সুস্থ রাখবেন।
প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন
(এই ফিচারটি তৈরি করতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটটির)