এমন অবস্থায় যে পড়তে হতে পারে, পেরু ম্যাচের আগেই সেটা জানা ছিল। নিজেদের মাঠে পেরুর বিপক্ষে তাই যেকোনো মূল্যে জিততে চেয়েছিল আর্জেন্টিনা। জয় চেয়েছিল আর্জেন্টিনা ভক্তরাও। কাজ হয়নি, আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এই ম্যাচেও জয় আদায় করতে ব্যর্থ মেসি বাহিনী। ফলাফল, সরাসরি তো বটেই, প্লে অফ খেলে বিশ্বকাপে যাওয়াটাও এখন ঘোর অনিশ্চিত আর্জেন্টিনার জন্য। রাশিয়ায় যেতে হলে অনেকগুলো কঠিন সমীকরণের মারপ্যাঁচ কেটে আসতে হবে আলবিসেলেস্তেদের। নিজেদের ভাগ্য আর তাই এখন নিজেদের হাতে নেই তাদের!
সব দলেরই খেলা বাকি এক রাউন্ড করে। ব্রাজিলের শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপে যাওয়া নিয়ে কোন সংশয় নেই। দ্বিতীয় স্থানে থাকা উরুগুয়ের শেষ ম্যাচ বলিভিয়ার বিপক্ষে। খেলা হবে উরুগুয়ের নিজের মাঠে, যেখানে সর্বশেষ ৭ ম্যাচেই হেরেছে বলিভিয়া। শেষ ম্যাচে হারলেও গোল ব্যবধানে অনেকটাই এগিয়ে থাকায় উরুগুয়েও বিশ্বকাপে যাচ্ছে, এমনটা ধরে নেয়াই যায়।
খেলা জমবে পরের তিনটি স্থানের জন্য, যার জন্য লড়াই করছে ৫ টি দল। তিনে আর চারে থাকা দল সরাসরি যাবে রাশিয়ায়, পঞ্চম স্থানে থাকা দলকে প্লে অফ খেলতে হবে নিউজিল্যান্ডের সাথে। আর্জেন্টিনার এখন এমনই অবস্থা, ওই পঞ্চম স্থানে থাকা নিয়েও টানাটানি!
আর্জেন্টিনার ভাগ্য নিজেদের ম্যাচ ছাড়াও মূলত নির্ভর করবে দুইটি ম্যাচের উপর। তার মধ্যে একটি হল ব্রাজিল-চিলি ম্যাচ। গত দুই কোপায় আর্জেন্টিনার কপাল পুড়িয়েছে যেই চিলি, সেই চিলির অমঙ্গল আবারো কামনা করতে হবে আর্জেন্টিনা ফ্যানদের। চিলি জিতে গেলে আর্জেন্টিনার জন্য কাজটা অনেকটাই কঠিন হয়ে যাবে।
তবে আর্জেন্টিনার আশার আলো হয়ে আছে কিছু তথ্য। ম্যাচটা হবে ব্রাজিলের মাটিতে, যেখানে শেষ ১৪ ম্যাচে কোন জয় পায়নি চিলি। ড্র করেছে ২ টি ম্যাচ, বাকি ১২ টিতেই পরাজয়। চিলির সাম্প্রতিক ফর্মেও খুব একটা ধারাবাহিকতা নেই। বাছাইপর্বে শেষ ৫ ম্যাচে জিতেছে ২ টিতে, হেরেছে ৩ টিতে। তারপরেও কোনরকমে ব্রাজিলের বিপক্ষে জিতে গেলে চিলির পয়েন্ট হয়ে যাবে ২৯, যেখানে আর্জেন্টিনা নিজেদের শেষ ম্যাচ জিতলেও পয়েন্ট হবে ২৮। শেষ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের জয় কামনা করা ছাড়া তাই উপায় নেই আর্জেন্টিনার।
আর্জেন্টিনার ভাগ্য নির্ধারণী আরেকটি ম্যাচ হল পেরু-কলম্বিয়া ম্যাচ। পয়েন্ট টেবিলে দুই দলই আর্জেন্টিনার উপরে, পেরুর পয়েন্ট ২৫, কলম্বিয়ার ২৬। যেকোনো এক দলের জয় মানেই সেই দলের বিশ্বকাপে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। চিলি ব্রাজিলের সাথে না জিতলেই এই ম্যাচে জয়ী দল উঠে যাবে পয়েন্ট টেবিলের তিনে। তবে আর্জেন্টিনার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ফল হবে ম্যাচটি ড্র হলে। চিলি যদি ব্রাজিলের বিপক্ষে না যেতে, আর পেরু-কলম্বিয়া ম্যাচ যদি ড্র হয়, আর আর্জেন্টিনা যদি শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে যেতে, তাহলে এদের সবাইকে টপকে তিনে উঠে যাবে আর্জেন্টিনা। তবে পেরু-কলম্বিয়া ম্যাচ যদি ড্র হয়, আর চিলি এবং আর্জেন্টিনা যদি নিজ নিজ ম্যাচ যেতে, তাহলে আর্জেন্টিনা চারে উঠতে পারবে। ভাবুন একবার, কত যদি কিন্তুর হিসাব মাথায় নিয়ে খেলতে হবে সাম্পাওলি শিষ্যদের!
তবে এই যে এতক্ষণ এতসব হিসাব নিকাশ পড়লেন, এর কোনটিরই কোন দাম থাকবে না যদি না নিজেদের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনা জয়ের দেখা পায়। শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ পয়েন্ট টেবিলের আটে থাকা ইকুয়েডর, বাছাইপর্বে নিজেদের শেষ ৫ টি ম্যাচেই হেরেছে যারা। তবে এসবের কোন কিছুই আশা হয়ে আসতে পারছে না আর্জেন্টিনার জন্য, কারণ খেলাটা হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯,৩৫০ ফুট উঁচুতে কিটোর স্টেডিয়ামে। যেখানে সর্বশেষ ৫ ম্যাচে ২ হার ও ২ ড্রয়ের বিপরীতে আর্জেন্টিনার জয় মাত্র ১ টি। বাড়তি তথ্য হিসেবে এটিও জানিয়ে রাখা যায়, এই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেই আর্জেন্টিনার মাঠে এসে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারিয়ে গিয়েছিল ইকুয়েডর।
কি হবে যদি আর্জেন্টিনা জিততে না পারে?:
বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি আসলে ‘মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন’। জাতীয় দলের সাম্প্রতিক যে ফর্ম, তাতে অনেক আর্জেন্টিনা ফ্যানই সন্দিহান, শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের মাঠে গিয়ে জয় নিয়ে ফিরতে পারবে কিনা মেসিরা। কি হবে যদি আর্জেন্টিনা ড্র করে বা হেরে যায়? একেবারেই কি বাদ পরে যাবে তাহলে?
সেক্ষেত্রে আর্জেন্টিনাকে তাকিয়ে থাকতে হবে প্যারাগুয়ে-ভেনেজুয়েলা ম্যাচের দিকে। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে প্যারাগুয়ের বর্তমান অবস্থান আর্জেন্টিনার ঠিক পরের স্থানেই। আর্জেন্টিনা যদি হেরে যায় বা ড্র করে, আর প্যারাগুয়ে যদি জিতে যায়, তাহলে প্লে-অফ খেলার সুযোগটুকুও পাবেন না লিওনেল মেসিরা। যার অর্থ, ২০১৮ বিশ্বকাপে যাওয়ার আর কোন সম্ভাবনাই থাকবে না মেসিদের।
এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার জন্য আশাজনক খবর, ম্যাচটি প্যারাগুয়ের মাটিতে হলেও সেখানে ভেনেজুয়েলার রেকর্ড যথেষ্টই ভালো। প্যারাগুয়ের মাঠে খেলা শেষ ৫ ম্যাচের মাত্র ১ টিতেই হেরেছে ভেনেজুয়েলা। আবার বাছাইপর্বে শেষ তিন ম্যাচেও হারের মুখ দেখেনি তারা।
কি ভাবছেন, সমীকরণ এখানেই শেষ? দম নিন একটু, সমীকরণ বাকি আছে আরও! প্যারাগুয়ে জিতলে আর আর্জেন্টিনা ড্র/হারলে তো আর কোন কথাই নেই, প্যারাগুয়ে জয়বঞ্চিত থাকলেও আর্জেন্টিনার হিসাব শেষ হচ্ছে না। তখন আবার তাকাতে হবে পেরু-কলম্বিয়ার ম্যাচে। পেরু যদি কলম্বিয়ার বিপক্ষে হেরে যায়, তাহলে নিজেদের ম্যাচে হারলেও আর্জেন্টিনার সামনে ক্ষীণ একটা সুযোগ থাকবে প্লে অফ খেলার। সেক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে গোল ব্যবধান। পেরু এবং আর্জেন্টিনা দুই দলের গোল ব্যবধানই এখন সমান সমান। শেষ ম্যাচে যেই দল কম ব্যবধানে হারবে, প্লে-অফে খেলার সুযোগ পাবে তারাই!
আর পেরু যদি জিতে যায়, সেক্ষেত্রে প্লে-অফ খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে অন্তত ড্র করতেই হবে আর্জেন্টিনাকে। সেক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা আর কলম্বিয়া দুই দলের পয়েন্টই হবে ২৬, গোল ব্যবধান বিবেচনায় নির্ধারিত হবে প্লে-অফে কারা খেলবে।
আগামী বুধবার ভোর ৫.৩০ এ শুরু হবে শেষ রাউন্ডের ৫ টি ম্যাচই। আর্জেন্টিনা কি পারবে এতসব হিসাবের জাল কেটে নিজেদের বের করে আনতে? না পারলে লিওনেল মেসিকে ছাড়াই দেখতে হবে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ!