“একদিন চলচ্চিত্র নির্মাতারা আমার ছেলের বাড়ির দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকবে তার সময় নেবার জন্য”– বলেছিলেন ইদাপ্পাল পুন্নামকুঝি ভিত্তিল সুকুমারান নাইয়ার, যাকে মলিউডে সংক্ষেপে বলা হয় “সুকুমারান” নামেই। সেদিন তিনি ছিলেন একজন গর্বিত বাবা। আর আজ? শুধু তিনিই নন, সমগ্র মালায়ালাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তার ছেলের অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে আছেন।
আপনি ইউটিউবে তার ছেলের কোন ছবির ট্রেইলার যদি দেখতে যান, তাহলে একটি সংলাপ পরীক্ষায় কমন পাবেনই পাবেন। জানেন তা কি?
“দেখো, এই হচ্ছে আমাদের পৃথ্বীরাজ, আমাদের মলিউডের রাজপুত্র। মলিউডের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে তিনি সর্বক্ষণ চেষ্টা করছেন।”
পাঠক, আমাদের আজকের আলোচনায় আছেন মলিউডের এক অবিসংবাদিত যোদ্ধা, পৃথ্বীরাজ সুকুমারান। ৩৪ বছরের এই টগবগে যুবকের অভিনয় আপনাকে রুপালী পর্দার সামনে মোহাবিষ্ট করে রাখবে, কথা দিচ্ছি। মুম্বাই পুলিশ, ইভিদে, এন্নু নিন্তে মইদেন কিংবা হরর ছবি এযরা, তার ছবিগুলো এক একটি মাস্টারপিস। কখনো পুলিশ অফিসার, কখনো পরিবারকে প্রাণপণে রক্ষা করে যাওয়া কর্তা, কখনো প্রেমিক কিংবা কখনো ভূতে পাওয়া স্বামী- সবগুলো চরিত্রেই পৃথ্বীরাজ মানিয়ে যান বেশ। প্রযোজক, পরিচালক, প্লেব্যাক সিঙ্গার, ন্যারেটর সবকিছু মিলিয়েই পৃথ্বীরাজ সত্যিই মলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতিদিন এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন।
পৃথ্বীরাজের মলিউডে অভিষেক ঘটেছিল নান্দানাম ছবির মাধ্যমে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ছবির পরিচালক রাঞ্জিথ তাকে বলে দাড়ি রাখতে, যাকে তাকে একটু বয়স্ক দেখায়। ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি তার ডেব্যু হলেও ছবিটি মুক্তি পায় নক্ষত্রককান্নুলা রাজাকুমারান আভানানদরু রাজকুমারী ছবি মুক্তি পাবার পর। ২০০৬ সালে পৃথ্বীরাজ কেরালা স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড জেতেন তার “ভাস্তাভাম” ছবির জন্য। এরপর ২০১২ সালে দু দুটো ছবির জন্য তিনি আরো একবার এই পুরস্কার পান। ছবিদুটো হচ্ছে সেলুলয়েড এবং আয়ালাম জানুম থাম্মিল। ১৯৮২ সালের ১৬ অক্টোবর জন্ম নেয়া অসামান্য এই অভিনেতা স্ক্রল.ইন পত্রিকাকে তার ছবি “তিয়ান”(২০১৭) নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। তারই চুম্বক কিছু অংশ দেয়া হল আজকের প্রিয়লেখার আয়োজনেঃ
স্ক্রলঃ তিয়ান ছবিটি নিয়ে এখনই বেশ হুল্লোড় উঠে গিয়েছে-
পৃথ্বীরাজঃ ছবিটি মুক্তির আগেই বেশ কিছু দর্শকের মাঝে সাড়া ফেলতে পেরেছে। এই ছবিতে আমরা কিছু কিছু জিনিস প্রথমবারের মত দর্শকদের সামনে নিয়ে আসছি। কুম্ভ মেলার একটি লাইভ ফুটেজ এখানে দেখানো হয়েছে। হরিদ্বারে প্রায় ১০০০ মানুষের সাহায্যে একটি দৃশ্য ধারণ করা হয় ২০১৫ সালে। এটাই একমাত্র ছবি, যেটি হায়দ্রাবাদের রামুজি রাও ফিল্ম সিটিতে প্রায় ১০০দিন ধরে শ্যুটিং করা হয়েছে। ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি একই সাথে সামাজিক, রাজনৈতিক ও আত্মিক। আবার একই সাথে এটি পুরোমাত্রায় বিনোদনধর্মী একটি ছবি।
স্ক্রলঃ ‘লুসিফার’ ছবির মাধ্যমে আপনি মোহনলালের সাথে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন। এ সম্পর্কে কিছু বলুন-
পৃথ্বীরাজঃ আমি সবসময়ই একটি ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলাম। ২০১০ সালে প্রায় তৈরিও শুরু করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু এমন সময়ে মনি রত্নমের “রাভানান” ছবির কাজ শুরু হয়ে যায় ও আমি সেখানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তিয়ান ছবিতে কাজ করার সময় মুরালি গোপির সাথে আমার নানা বিষয়ে কথা হয়। আমরা ছবি নিয়েই আলোচনা করতাম ও ভাবতাম একসাথে আরো কি কি করতে পারি। ঠিক তখনই মোহনলাল তার লুসিফার ছবির আইডিয়া নিয়ে এলেন।
পুরো প্রক্রিয়াটিতে মোহনলালই ছিলেন একজন শক্তিশালী প্রভাবক। ছবিটি নিয়ে তিনি বেশ আগ্রহীও ছিলেন। আমাদের সকলকে তিনি একত্রিত করেছেন এবং দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালে এটি মুক্তি পাবার কথা।
স্ক্রলঃ সকল জনরার ছবিতেই আপনি কাজ করেছেন। সুপার ন্যাচারাল থ্রিলার এযরা, কমেডি পাভাদা, বায়োগ্রাফিকাল ড্রামা এন্নু নিন্তে মইদেন, অ্যাকশনধর্মী আর্জুনান সাক্ষী। আপনি আর কি কি করতে চান?
পৃথ্বীরাজঃ আমি যখন ছবির সেটে থাকি, তখন জনরা নিয়ে ভাবি না। আমি পূর্বে কি কি ধরণের ছবির কাজ করেছি, সে লিস্টের দিকে যখন তাকাই, তখন দেখি যে পূর্ব থেকেই ঠিক করা কোন ছবিতে আমি কাজ করি নি। কখনোই এটা আমার ইনটেনশনাল ছিল না। একটা ভালো ছবির স্ক্রিপ্টই ছিল আমার কাছে যথেষ্ট। আমার কোন পছন্দসই জনরাও নেই। আমি একজন ভাগ্যবান ব্যক্তি যার অভিনীত সব ছবিগুলো মানুষ পছন্দ করেছে।
স্ক্রলঃ আপনি নাজিবের চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন বেনিয়ামিনের প্রশংসিত নোভেল আড়ু জিভিথাম-এ। আপনি নিজেকে একজন দাস রাখাল চরিত্রে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন সৌদি আরবের মত দেশে?
পৃথ্বীরাজঃ আমি এমন একজন অভিনেতা যে কঠোরভাবে স্ক্রিপ্ট অনুসরণ করে। তবে একজন চরিত্রকে আমি যখন নিজের মত উপস্থাপন করতে যাই, তখন আমি চরিত্রটাকে আমার মাথার ভেতর নিয়ে নিই। একজন অভিনেতার কাছে এই চরিত্রের ধারণাটি সবসময় থাকে। আশা করছি, আমি ভালোভাবেই করতে পারব। আমার মাথায় আমি নাজিবকে নিয়ে নেব, তার সাথে কথা বলব। আমার কাছে কোন মেথডিক্যাল এপ্রোচ নেই তবে আমি আমার অনুভূতি দিয়েই কাজটা করব।
স্ক্রলঃ অভিনেতা না হলে আপনি কি করতেন?
পৃথ্বীরাজঃ আমাকে একজন দূর্ঘটনাবশত হয়ে যাওয়া অভিনেতা বলতে পারেন। আমি ছুটি কাটানোর ছলে আমার প্রথম ছবি নান্দানাম করেছিলাম। আমি ভেবেছি, ওহ ঠিক আছে! এটা করলে কিছু পকেট মানি পাব। প্রায় তিন চারটি ছবি করবার পর আমার ধারণা হয় যে আমি একজন অভিনেতা হতে পারব। যদি আমি অভিনেতা না হতাম, তাহলে এমন কিছু হতাম যেটি ভ্রমণ সম্পর্কিত।
স্ক্রলঃ আপনি তিনটি হিন্দী ছবিতে কাজ করেছেন। আইয়া (২০১২), আওরঙ্গজেব (২০১৩) ও নাম শাবানা (২০১৭)। আপনাকে হিন্দী ছবিতে নিয়মিত না দেখার কারণ কি?
পৃথ্বীরাজঃ আসলে বলিউডে যেভাবে কাজ হয়, তা লক্ষ্য করলে দেখবেন যে স্ক্রিপ্ট হাতে কেউ না কেউ সবসময়ই আপনাকে কল করছে। আমি প্রতিদিনই বলতে গেলে একটা ছবির অফার পাই। তবে এখন আমি শুধু মালায়ালাম ছবি নিয়েই ব্যস্ত আছি, যে ইন্ডাস্ট্রি তার সেরা সময়টি কাটাচ্ছে প্রায় অনেকদিন পর। আমাকে মুম্বাই নিয়ে যেতে হলে অসাধারণ একটি ছবির স্ক্রিপ্ট দেখাতে হবে, তবেই আমি কাজ করব। তাই এ মুহুর্তে, আমি কোন ছবিকেই হ্যাঁ বলছি না।
(ঈষৎ সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত)
সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি চাইলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে
আজ আর নয়। প্রিয়লেখার সাথেই থাকুন।