‘বেলাভিস্তা দেল জার্দিন দেল নর্তে নগরীতে আপনাদের সকলকে স্বাগতম। এটা সেই ছোট্ট শহর যাকে আমরা সকলেই চিনি ও ভালোবাসি। বেলাভিস্তা এমন কিছু আকর্ষণীয় জিনিসের ফিউশন ঘটিয়েছে যা আপনাদের অবশ্যই মুগ্ধ করবে। আসুন এবং মুগ্ধ হোন!’
কি ভাবছেন, এমন শহরের নাম কোনদিন শোনেননি, তাই তো? শোনার কথাও না। এমন কোন শহরের নামই যে নেই! উপরে যে শহরটির কথা বলা হল, সেটি আসলে একটি রেস্তোরাঁ। তবে যেনতেন রেস্তোরাঁ নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির রেস্তোরাঁ!
অবাক হয়ে হয়তো ভাবছেন, রেস্তোরাঁ আবার শহর হয় কিভাবে? রেস্তোরাঁটি সম্পর্কে জানলে সেই জিজ্ঞাসার উত্তর আপনারা নিজেরাই পেয়ে যাবেন। ভাই রদ্রিগো ও বোন মারিয়ার সাথে মিলে কাতালান রাজধানী বার্সেলোনায় গত বছর মেসি উদ্বোধন করেছেন তাঁর এই অভিনব রেস্তোরাঁটির।
রেস্তোরাঁ ব্যবসায় এটিই মেসির প্রথম উদ্যোগ। যদিও রেস্তোরাঁটির সামগ্রিক দেখভাল মেসির ভাই রদ্রিগোই করেন, কিন্তু এটির নির্মাণব্যয়ের অধিকাংশই বহন করেছেন মেসি। রেস্তোরাঁটি বানাতে নাকি প্রায় আড়াই মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছে মেসিকে। ইন্টেরিয়র ডিজাইন ফার্ম ‘এল ইকুপো ক্রিয়েটিভো’ এর তত্ত্বাবধানে অভিনব এই রেস্তোরাঁটি বানিয়েছেন মেসি।
বাইরে থেকে দেখলে অনুমান করা অসম্ভব রেস্তোরাঁটির ভেতরে কি আছে। কাচের চার দেয়ালের ভেতরে যেন সম্পূর্ণ অন্য এক জগত বিরাজমান। রেস্তোরাঁয় হাঁটতে হাঁটতে অতিথিরা যেন হারিয়ে যান কল্পনার কোন এক জগতে। কি নেই রেস্তোরাঁর ভেতরে! সংবাদপত্র বিপণি, চুল কাটার সেলুন, বাজার, বার, চার্চ, ঝর্ণা, টাউন স্কয়ার, এবং আছে সুদৃশ্য ও সুবিশাল এক বাগান।
রেস্তোরাঁটিকে এমন একটি আকৃতি দেয়া হয়েছে, যেন এতে ঢোকামাত্রই অতিথিদের মনে হয় তারা তাদের নিজেদের শহরেই আছেন। যারা ভাবছেন মেসি তাঁর জন্মশহর রোজারিওর আদলে রেস্তোরাঁটি বানিয়েছেন, তারা অবশ্য ভুল ভাবছেন। কোন নির্দিষ্ট শহরের আদলে এটি বানানো হয়নি। তবে রোজারিওর নাম রেস্তোরাঁতে ঠিকই ব্যবহার করেছেন মেসি। ঝর্ণার কাছে রোজারিওর নাম ব্যবহার করেছেন মেসি। এই ঝর্ণা থেকে কোন অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই যত খুশি সুপেয় খাবার পানি সংগ্রহ করতে পারবেন অতিথিরা।
সংবাদপত্র বিপণির ডিসপ্লেতে যেসব পেপার কাটিং রাখা তার বেশিরভাগই এফসি বার্সেলোনা সম্পর্কিত। আর বাথরুমে কি রাখা আছে শুনবেন? স্প্যানিশ ও কাতালান কমেডি মনোলোগ! রেস্টুরেন্টের এক স্টাফ নিজেই জানিয়েছেন, একবার এক ভদ্রমহিলা খুব চিন্তিত মুখে ঘুরে বেরাচ্ছিলেন, কারণ তিনি এবং তার স্বামী একসাথে এলেও আধা ঘণ্টা ধরে তিনি তার স্বামীকে দেখতে পাচ্ছেন না। মহিলা ভেবেছিলেন তাকে না জানিয়েই হয়তো তার স্বামী কোন কারণে বেড়িয়ে গেছেন। পরে দেখা গেল, ওই ভদ্রলোক বাথরুমে রাখা মনোলোগের কৌতুক পরে বাথরুমে বসেই আধা ঘণ্টা ধরে হাসছেন!
ডিসপ্লেতে বিখ্যাত ‘এমএসএন’ ত্রয়ী মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমারের সই করা জার্সি ঝুলানো আছে। খেলা দেখার জন্য ব্যবস্থা আছে বড় পর্দারও। অতিথিরা চাইলে আশি নব্বই দশকের ভিডিও গেমও খেলতে পারবেন এখানে। খাবার, পানীয় ছাড়াও অতিথিদের মোহিত করে রাখার মত আরও অনেক কিছুই আছে মেসির রেস্তোরাঁয়।
উপরে উঠলে চারটি বিশেষ ব্যালকনির দেখা পাওয়া যাবে, যেগুলো গ্রুপে ভাড়া নেয়ার ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ব্যালকনিতে ১০ থেকে ১৪ জনের মানুষের জায়গা আছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা খুব সতর্কতার সাথে রক্ষা করা হয়, সাথে বিনোদনের জন্য আছে লার্জ স্ক্রীন টিভি, ক্যাবল, প্লেস্টেশন ৪, নেটফ্লিক্স, এবং গানের বিপুল সমারোহ।
মেসি ও সুয়ারেজ এই রেস্তোরাঁর নিয়মিত কাস্টমার। জেরার্ড পিকেও গত ক্রিসমাসের আগে এক স্টাফ ফাংশনে তাঁর নিজস্ব স্টাফকে নিয়ে এসেছিলেন রেস্তোরাঁয়।
শুরুর দিকে অবশ্য রেস্তোরাঁটি সম্পর্কে প্রতিবেশীরা স্থানীয় মিডিয়ায় অভিযোগ করেছিলেন, তবে এখন আর সেই অভিযোগ নেই। রেস্তোরাঁটিতে ১০০০ স্কয়ার ফিটের যে বিশাল বাগানটি আছে, তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে বসে নিজেদের অবসর সময় উপভোগ করতে পারবেন, এবং সেটার জন্য রেস্তোরাঁর কোন সেবা ক্রয় করারও দরকার হবেনা, বিনামূল্যেই তারা এখানে এসে বসতে পারবেন।
রেস্তোরাঁয় আপনি আইবেরিয়ান, কাতালান ও ঘরে নির্মিত ঠাণ্ডা মাংস, চিজ, ক্যানে বদ্ধ সামুদ্রিক খাবার ও বিভিন্ন ধরণের সবজি ও মিষ্টির আইটেম আছে। বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু ও দামী গরুর মাংস ওয়াগু ও পাওয়া যায় রেস্তোরাঁয়, এছাড়া আছে আরও হরেক রকমের সুস্বাদু ও জিভে জল আনা খাবার। বিশেষ করে সী ফুড যাদের পছন্দ তাদের জন্য অনেক রকমের পদ আছে এই রেস্তোরাঁয়।
বার্সেলোনায় গেলে মেসি ফ্যানেরা একবার ঘুরে আসতে পারেন বেলাভিস্তা দেল জার্দিন দেল নর্তে থেকে!