২০১৬ সালটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো চাইলেও বোধহয় ভুলতে পারবেন না। ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন, পাঁচ বছর পর ক্লাবের হয়ে লিগ শিরোপা জিতেছেন, দেশের হয়ে ইউরো শিরোপাও জিতেছেন।
শুধু দলগত সাফল্য না, ব্যক্তিগত সাফল্যের দিক থেকেও ২০১৬ সালটা অনন্য ছিল রোনালদোর জন্য। নিজের চতুর্থ ব্যালন ডি অর জিতেছেন, ক্যারিয়ারে ৬০০ গোলের মাইলফলক পেরিয়েছেন, চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ১০০ গোল করা ১ম ফুটবলার হয়েছেন।
আর রোনালদোর এইসব সাফল্যের কারণে বড় দাও টা মেরেছে রোনালদোর স্পন্সরেরা। সোশ্যাল ও ডিজিটাল মিডিয়ায় স্পন্সরশিপ ভ্যালু নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান ‘হুকিট’ এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ এর জুন থেকে ২০১৭ এর জুন এই বারো মাসে রোনালদোর সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট থেকেই তাঁর স্পন্সরেরা আয় করেছে ৯৩৬ মিলিয়ন ডলার!
সোশ্যাল মিডিয়ায় রোনালদোর আবেদন বরাবরই আকর্ষণীয়। এই বারো মাসে স্পন্সরদের মেনশন করে কিংবা তাদের লোগো ব্যবহার করে রোনালদো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন ৫৮০ বার। স্পন্সরদের লোগো ব্যবহার করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোস্ট করেছেন সদ্য বার্সেলোনা ছেড়ে যাওয়া নেইমার, ২৫৫ বার। সোশ্যাল মিডিয়ায় রোনালদোর ফলোয়ার প্রায় ২৭৭ মিলিয়ন, নেইমারের চেয়ে যা প্রায় ৬৮% বেশি! ১৬৫ মিলিয়ন ফলোয়ার নিয়ে রোনালদোর পরের অবস্থানে আছেন নেইমার।
এই বারো মাসে রোনালদোর ফলোয়ার সংখ্যা কত বেড়েছে জানেন? ৬২ মিলিয়ন! অর্থাৎ প্রতি মাসে নতুন ৫ লাখেরও বেশি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলো করেছেন রোনালদোকে! রোনালদোর একার ফেসবুক ফ্যানই প্রায় ১২২ মিলিয়ন, পৃথিবীতে এত বেশি ফেসবুক ফলোয়ার নেই অন্য কোন মানুষেরই!
রোনালদোর করা পোস্টগুলোতে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পরেছে ৯২৭ মিলিয়ন! হুকিট এর তথ্যমতে, রোনালদো তাঁর স্পন্সরদের যেসব ভিডিও শেয়ার করেছেন, সেগুলোর একেকটি ভিডিও থেকে তাঁর স্পন্সরদের গড় আয় হয়েছে ১.৬ মিলিয়ন ডলার!
এই বারো মাসে রোনালদো একা আয় করেছেন ৯৩ মিলিয়ন ডলার, টানা দ্বিতীয় বারের মত হয়েছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ আয় করা অ্যাথলেট। এই ৯৩ মিলিয়নের মধ্যে ৩৫ মিলিয়নই তিনি আয় করেছেন স্পন্সরশিপ চুক্তি থেকে। যার এক পোস্ট থেকেই প্রায় দেড় মিলিয়ন আয় করে স্পন্সরেরা, তাঁকে তো খুশি রাখতেই হবে! রোনালদোর মূল স্পন্সর নাইকিও সেটাই করেছে, ২০১৬ এর শেষ দিকে রোনালদোর সাথে লাইফটাইম চুক্তি করেছে নাইকি, যার মূল্যমান ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বলে গুঞ্জন গণমাধ্যমে।
মাঠে রোনালদোর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি অবশ্য এক্ষেত্রে বেশ অনেকটাই পেছনে পরেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় রোনালদোর ফলোয়ার যেখানে ২৭৭ মিলিয়ন, মেসির সেখানে ‘মাত্র’ ১৬৩.৭ মিলিয়ন। রোনালদো যেখানে স্পন্সরদের মেনশন করে পোস্ট দিয়েছেন ৫৮০ টি, মেসি সেখানে দিয়েছেন মাত্র ১৪৬ টি। রোনালদোর সোশ্যাল মিডিয়া ভ্যালু যেখানে প্রায় ৯৩৬ মিলিয়ন ডলার, মেসির সেখানে মাত্র ৫৬ মিলিয়ন ডলার! মাঠের খেলায় কাছাকাছি থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তায় একেবারেই রোনালদোর ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেননি মেসি।
এই তালিকায় রোনালদো ও মেসির মাঝে আছেন আরও তিনজন অ্যাথলেট, যার দুইজনই ফুটবলার। রোনালদোর পর ২য় স্থানটি দখল করেছেন নেইমার। এই ২৫ বছর বয়সেই নাইকি, জিলেট, রেড বুল, প্যানাসোনিক, বীটস এর মত প্রতিষ্ঠানের দূত নেইমার। ২০১৬ অলিম্পিক জয়ের পর নেইমারের চাহিদা বেড়েছে আরও। এই ব্রাজিলিয়ান পোস্টারবয়ের মোট আয়কৃত মিডিয়া ভ্যালু ১২৪.৫ মিলিয়ন ডলার।
রোনালদো, নেইমারের পর তালিকার তৃতীয় অ্যাথলেট সদ্য অবসরে যাওয়া উসাইন বোল্ট। পিউমা, গ্যাটোরেড, নিশান মোটরস, হাবলটের মত প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ বোল্টের মোট আয়কৃত মিডিয়া ভ্যালু ৬৮ মিলিয়ন ডলার। আর চতুর্থ স্থানে থাকা গ্যারেথ বেলের মিডিয়া ভ্যালু প্রায় ৬৫ মিলিয়ন ডলার।
তথ্যসূত্র- ফোর্বস, হুকিট