ঐতিহাসিক জয়ের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অনেকেই। প্রখ্যাত ক্রিকেটারেরাও অভিনন্দন জানানোর মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন টুইটারকে। তবে সকলের অভিনন্দনের মাঝেও আলাদা করে আলোচনায় এসেছে কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকারের টুইটটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত এই জয়টিকে ‘আপসেট’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন শচীন। জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো ব্যাখ্যা করেছে, কেন এই জয়টি আপসেট নয়।
ঘরের মাঠে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স:
গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের কথা মনে পরে? প্রায় একই রকম পরিস্থিতিতেই সেবারো ম্যাচ বের করে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংসে বিনা উইকেটে শত রান তুলে ফেলার পরেও ২৭৩ তাড়া করতে গিয়ে ১০৮ রান আগেই থেমে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টেও অল্পের জন্য জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এই টেস্টেও ওয়ার্নার-স্মিথ যখন জয়ের পথে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনো বোলাররা মিলে দাপটের সাথে ফিরে এসেছেন। ২০১৫ সালে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টেও প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে তো বহুদিন ধরেই বাংলাদেশ শক্ত প্রতিপক্ষ, এখন টেস্টেও ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে টিম টাইগার্স।
এশিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার দৈন্যদশা:
এই বছরই নিজেদের সর্বশেষ ভারত সফরে পুনেতে প্রথম টেস্টে ভারতকে বিধ্বস্ত করে অস্ট্রেলিয়া হয়তো বার্তা দিতে চেয়েছিল, নিজেদের দুর্দশাগ্রস্ত রেকর্ড ঘুচাতে এবার বদ্ধপরিকর তারা। কিন্তু কিসের কি, পরের তিন টেস্টেই ফেরত এল সেই ভগ্নদশার অস্ট্রেলিয়া। বুঝিয়ে দিয়েছিল, ওই এক জয় টাকে ব্যতিক্রম হিসেবেই ধরতে হবে। গত পাঁচ বছরে এশিয়ার মাটিতে খেলা ১৪ টেস্টের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার জয় বলতে ওই এক পুনে টেস্ট জয়ই, বাকি ১২ টি টেস্টই হারতে হয়েছে অজিদের। ২০১৬ তে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে খর্বশক্তির শ্রীলঙ্কা দলের কাছে, ২০১৪ তে পাকিস্তানের কাছে, ২০১৩ তে ভারতের কাছে। সময়সীমাটা বাড়িয়ে যদি এই শতাব্দী করা হয়, তাহলেও ফুটে উঠছে অস্ট্রেলিয়ার দুর্বল পরিসংখ্যান। একবিংশ শতাব্দীতে এশিয়ায় ১৯ টি টেস্ট খেলে অস্ট্রেলিয়ার জয় মাত্র দুইটি, ২০১১ তে গল টেস্ট ও ২০১৭ তে পুনে টেস্ট। জয় পরাজয়ের হার ০.১৪২, জিম্বাবুয়ের পর যা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।
অস্ট্রেলিয়ার অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন-আপ:
টপ অর্ডারে অভিজ্ঞতার অভাবেই সাকিব-তাইজুল-মিরাজদের স্পিনের সামনে এভাবে ভেঙ্গে পরেছে অজিদের ব্যাটিং লাইন-আপ। বাংলাদেশের টপ সিক্স ব্যাটসম্যান তামিম, সৌম্য, ইমরুল, সাব্বির, সাকিব, মুশফিক মিলে যেখানে খেলেছেন ১৯৯ টেস্ট, অস্ট্রেলিয়ার টপ সিক্স ওয়ার্নার, রেনশ, খাজা, স্মিথ, হ্যান্ডসকম্ব ও ম্যাক্সওয়েল মিলে সেখানে খেলেছেন ১৬৮ টেস্ট। এই ১৬৮ টির মধ্যে ওয়ার্নার ও স্মিথই খেলেছেন ১২০ টি, বাকি চারজন মিলে খেলেছেন মাত্র ৪৮ টেস্ট। এশিয়ার মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতাও খুব বেশি নেই এই অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটসম্যানদের। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং লাইনআপে ৫০ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে কেবল ওয়ার্নার ও স্মিথেরই, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই অভিজ্ঞতা আছে সাকিব, তামিম ও মুশফিকের।
টস ফ্যাক্টর:
গত পাঁচ বছরে টস জিতেছে এমন ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে মাত্র দুইবার। টস জিতে আগে ব্যাটিং করেছে এমন টেস্টে বাংলাদেশের জয় আছে চারটি। টস জয়ী দলের দিকে যে জয়ের পাল্লা কিছুটা হলেও ঝুঁকে যায়, সেটা অস্বীকার করার উপায় কই!