১১ বছর পর আবার টেস্টে মুখোমুখি বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া। আগামীকাল থেকে মিরপুরে শুরু হচ্ছে সিরিজের প্রথম টেস্ট। আর সিরিজের আগে আলোচনায় সবচেয়ে বেশি আসছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান বনাম বাংলাদেশের স্পিনার- এই লড়াইয়ের কথা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে চার টেস্ট খেলে এখনো পর্যন্ত একটিও হারেনি অজিরা। তিনটি জিতেছে ইনিংস ব্যবধানে, আরেকটিও বড় ব্যবধানে। কিন্তু তার শেষটি সেই ২০০৬ সালে। এই ১১ বছরে অস্ট্রেলিয়ার সোনালি প্রজন্মের পতন যেমন ঘটেছে, তেমনি বিস্ময়কর উত্থান ঘটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরও। এশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ কিছু সিরিজ খেয়াল করলে একটি জিনিস পরিষ্কার, এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও অজিদেরকে স্পিনের বিপক্ষে বড় পরীক্ষাই দিতে হবে।
এক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মত ঠিক একই অবস্থানে ছিল ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের শেষে যখন বাংলাদেশে আসে ইংল্যান্ড, বাংলাদেশের বিপক্ষে তখন তাদের রেকর্ড ছিল ৮-০। কিন্তু ইতিহাস সেবার কোন কাজে লাগেনি। প্রথম টেস্টে কানের পাশ দিয়ে গুলি বের হয়ে গেলেও দ্বিতীয় টেস্টে হার এড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। নিজেদের সেরাটা দিতে না পারলে একই অবস্থা হতে পারে অস্ট্রেলিয়ারও।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সম্ভাব্য ৪০ উইকেটের মধ্যে ৩৮ টিই নিয়েছিল বাংলাদেশের স্পিনারেরা, আর ১ টি নিয়েছিল পেসারের! পেসারদেরই বা দোষ কোথায়, মোট ওভারের ৯০ শতাংশই যে করেছে স্পিনারের!
এশিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের খাবি খাওয়ার দৃশ্যটাও চোখে পড়ার মত। এক স্টিভেন স্মিথ ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা এশিয়ার মাটিতে স্পিনারদের বিপক্ষে একদমই স্বচ্ছন্দ নন। এশিয়ার মাটিতে স্পিনের বিপক্ষে স্মিথের রান ৪৪.১৬ গড়ে ৭৯৫। অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নারের এশিয়ার মাটিতে গড় মাত্র ২৮.১৫। ১৯ বার আউট হয়ে রান করেছেন মাত্র ৫৩৫। স্পিনের বিপক্ষে এই দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মানা হচ্ছে যাকে, সেই পিটার হ্যান্ডসকম্বের এশিয়ার মাটিতে গড় মাত্র ২৪। যেই উসমান খাজার উপর ভরসা রাখছেন স্মিথ, তার এশিয়ার মাটিতে গড় ১৯.২৫।
অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ ভারত সফরে অশ্বিন-জাদেজাদের বিপক্ষে যেভাবে ভুগেছিলেন অজি ব্যাটসম্যানেরা, তাতে আশাবাদী হতেই পারেন সাকিব-মিরাজেরা। চার টেস্টে ২৪.১৩ গড়ে ৫২ উইকেট তুলেছিলেন ভারতের স্পিনারেরা। শুধু সর্বশেষ সিরিজে না, ২০১৩ সিরিজেও ভারতীয় স্পিনারদের বিপক্ষে যথেষ্ট ভুগেছেন অজি ব্যাটসম্যানেরা। ২০১৩ সিরিজে ২২.২৪ গড়ে ৬৫ উইকেট পেয়ছিলেন ভারতীয় স্পিনারেরা।
আরেকটা পরিসংখ্যান থেকেও এশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার দুরবস্থা সম্পর্কে টের পাওয়া যায়। ২০০৭ সালের জানুয়ারির পর থেকে যেসব বিদেশি দল এশিয়ায় সফর করেছে, তাদের মধ্যে জয়-পরাজয়ের হার সবচেয়ে কম অস্ট্রেলিয়ার। এই ১০ বছরে এশিয়ায় ২২ টি ম্যাচ খেলে মাত্র ২ টি টেস্ট জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, হেরেছে ১৫ টি। জয়-পরাজয়ের হার ০.১৩৩। এছাড়া নিউজিল্যান্ড ১৯ টেস্ট খেলে জিতেছে ৩ টি, জয়-পরাজয়ের হার ০.৩০০। ইংল্যান্ড ২৬ টেস্ট খেলে জিতেছে ৬ টিতে, জয় পরাজয়ের হার ০.৪২৮। বাইরের দলগুলোর মধ্যে এশিয়ার মাটিতে সবচেয়ে ভালো রেকর্ড সাউথ আফ্রিকার্। ২১ টেস্ট খেলে ৭ জয়ের বিপরীতে হার ৬ টি, জয়-পরাজয়ের হার ১.১৬৬।
ডেভিড ওয়ার্নার যে এই সময়ের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান, তা মানতে আপত্তি থাকার কথা না কারোরই। কিন্তু সেই ওয়ার্নারেরই এশিয়ার মাটিতে রেকর্ড খুব খারাপ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ার্নারের গড় যেখানে ৫৯.২১, এশিয়ার মাটিতে তা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০.৩৮। এশিয়ায় স্পিনারদের বিপক্ষে গড় আরও কম, ২৮.১৫। আর ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তো ওয়ার্নার ছিলেন একদম ফ্লপ, রান করেছেন মাত্র ১৯.১৬ গড়ে।
সাকিব-মিরাজরা এসব পরিসংখ্যান দেখে উৎফুল্ল হতেই পারেন!