ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ
এই কথাটি আমরা সকলেই জানি। ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়েছে পড়াশোনার বাইরে আমাদের আর কোন কাজ নেই। “পড়াশোনা করে যে, হাতিঘোড়া চড়ে সে”- এই ছোট মজার কবিতাটির মাধ্যমে আমাদের মাঝে একধরণের মাইন্ডসেট তৈরি করে দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে, পড়াশোনা ছাড়া জীবনে উন্নতি লাভ করা সম্ভব নয়। পড়াশোনার মাধ্যমেই একজন হয়ে উঠতে পারে সত্যিকারের লাভবান।
কথাটি পুরো শতভাগ সত্য। শিক্ষিত মানুষ গড়ে তুলতে পারে একটি শিক্ষিত জাতিকে। তবে এর সাথে সাথে আরো কিছু কথাও যে জরুরী।
আমাদের পল্লীকবি জসীমউদদীনের একটি ছোটগল্পের কথা মনে পরে যাচ্ছে। বিদেশ বিভূঁইতে জসীমউদদীন লিখেছিলেন একজন ছাত্রের গল্প। রেস্তোরাঁয় কাজ করত ছেলেটি। পয়সা জমিয়ে যার স্বপ্ন দেশে বিদেশে ঘুরবে, নানা মানুষের সাথে পরিচয় হবে। জসীমউদদীন মনে করেছিলেন ছেলেটির বাড়ির অবস্থা হয়ত খুব খারাপ। তাই তিনি সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন সামান্য কিছু রুটি। তবে বাড়িতে যাবার পরই তার চোখ ভাঙল। বেশ অবস্থাসম্পন্ন একটি ঘরে এসে পৌঁছেছেন তিনি। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এত অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের একটি ছেলে হয়েও সে রেস্তোরাঁয় কাজ করে পয়সা জমাচ্ছে।
তিনি বলেছিলেন পাশ্চাত্যের এসব ছাত্রদের মননের কথা। পড়ালেখার পাশাপাশি তারা পয়সা জমাছে। তাদের মনের ইচ্ছেগুলো তারা কাজের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে চায়। একইসাথে পড়াশোনার পাশাপাশি মননশীল কাজ করা এবং তার সাথে যদি পকেটে দুটো পয়সা আসে, তাহলে এর চাইতে আনন্দের আর গর্বের আর কিছুই হতে পারে না। কারণ, উপার্জন করার মাঝে কত আনন্দ রয়েছে, তা একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই জানেন।
এবার আসা যাক আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। টিউশনি বা ছাত্রদের পড়ানো একটি খুব ভালো কাজ। একইসাথে অনেক বিষয় সম্পর্কে জানা যায় এবং পড়াশোনাও একটি চর্চার মাঝে থাকে। তবে সবার পক্ষে ছাত্রদের পড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না কারণ, কেউ হয়ত খুব ভালো ছাত্র কিন্তু সে ভালো বোঝাতে পারে না। যথারীতি টিউশনির কাজটি সে এড়িয়ে যায়। আবার কেউ কেউ ছাত্র পড়ানোকে খুবই কঠিন কাজ হিসেবে দেখে থাকেন। একইসাথে চলে আসে এখানে যোগাযোগ এবং বোঝাতে পারার ক্ষমতার সম্মিলন, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না।
পকেটে কিছু টাকা থাকাটাও যে জরুরী। আসুন, আজ তাহলে জেনে নেয়া যাক, টিউশনির বাইরে কি ধরণের কাজ করে টাকা আয় করা সম্ভবঃ
১) ছোটখাট শখের ব্যবসাঃ
অনেক বড় ধরণের পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করবার কথা বলা হচ্ছে না। ধরুন, কাগজের সাহায্যে নানা ধরণের খেলনা তৈরি করতে আপনি পছন্দ করেন। একে বলা হয় অরিগ্যামী।
তার সাথে যদি কাগজের এই খেলনাগুলোকে নানা রঙে রাঙানো যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এখন এটিকে শুধুমাত্র শখের মাঝে না রেখে আপনি বেশ ভালো ব্যবসা করতে পারেন। আজকাল অনলাইনে বেশ ভালো ভালো কাজের সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে আপনি নিজের প্রচারণা করতে পারেন। মানুষকে জানান আপনার মাঝে সৃষ্টিশীল কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে। আপনার কাজ পছন্দ হলে মানুষ আপনার কাছে জিনিস চাইবে, অর্ডার করবে। নানা ধরণের অনুষ্ঠানে অরিগ্যামীর সাহায্যে তৈরি খেলনার বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। শখের করা কাজটির মাধ্যমেই আপনি আয় করতে পারেন বেশ ভালো অর্থ।
শুধুমাত্র অরিগ্যামীই না, সৃষ্টিশীল আরো নানা কাজের মাধ্যমে আপনি নিজের পরিচিতি মানুষের কাছে জানান দিতে পারেন ও অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
২) লেখালেখিঃ
জীবনের লেখা প্রথম কবিতা কিংবা গল্পটি পড়ে বাবা কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মুগ্ধ হয়েছিল। বন্ধুরা পিঠ চাপড়ে বলেছিল “সাবাশ!”
আপনার মাঝে লেখার অসামান্য ক্ষমতা রয়েছে। লেখায় আপনি ফুটিয়ে তুলতে পারেন আবেগ, বাস্তবতা। এটিও অর্থ উপার্জন করার বেশ ভালো মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। আজকাল বিভিন্ন ম্যাগাজিন, অনলাইন পোর্টাল, ব্লগ সাইটে লেখক চাওয়া হয় নানা বিষয়ে। আপনার প্রতিভার কথা জানান দিন তাদের। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লিখুন। এই লেখালেখির মাধ্যমে আপনার পরিচিতিও হবে, সে সাথে পকেটে আসবে বেশ ভালো পরিমাণের অর্থ।
৩) ইউটিউবে ভিডিও তৈরিঃ
ক্রমবর্ধমান এই যুগে বলা হয়ে থাকে যে, ইউটিউব অচিরেই বেশ বড় একটি জায়গা দখল করে নেবে বিনোদন ও শিক্ষার ক্ষেত্রে। অনেকে নানা ধরণের ভিডিও তৈরি করছে ইউটিউবে এবং তা হাজারো লাখো মানুষ দেখছে। হতে পারে ভিডিওটি শিক্ষনীয়, আবার নেহায়েতই মজার উদ্দেশ্যে বানানো।তবে এই ভিডিওটির মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারেন টাকা। আপনাকে ভাবতে হবে কন্টেন্ট নিয়ে, মানুষ আজকাল যা পছন্দ করে তা নিয়ে করতে হবে রিসার্চ। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ ও পরিধি বিস্তার করতে হবে আপনাকে।
এছাড়াও নিজের শখ, আগ্রহ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে মানুষকে জানান ভিডিওর মাধ্যমে। যদি আপনি ভ্রমণপিয়াসু হয়ে থাকেন, তৈরি করে ফেলুন বিভিন্ন ট্রাভেল ভ্লগ। ব্যাস! উপার্জন করা কেবলই সময়ের ব্যাপার।
৪) ফ্রিল্যান্সিংঃ
আজকাল ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমেও বেশ ভালো পরিমাণের টাকা আয় করতে পারেন আপনি ছাত্রাবস্থায় থাকতে। যদি উদাহরণ চান, তাহলে বলব সালাহউদ্দীন এশাদের কথা। বাংলাদেশের এই রত্নটি কিছুদিন আগেই তো বিশ্বের সেরা ২৫ জন ফ্রিল্যান্সারদের মাঝে চলে এসেছেন। দেখুন, জানুন, কোর্স করুন। আগ্রহ বাড়ান। এ পেশায়ও আয় করতে পারেন সম্মানজনক অর্থ।
নানা ধরণের কাজের মাধ্যমে আপনি বাড়িয়ে তুলতে পারেন আপনার সৃজনশীলতা। পড়াশোনার পাশাপাশি এসব কাজ করে যেমন অর্থ উপার্জন করা যায়, ঠিক তেমনি পরিচিতি বাড়ানো যায় অন্যান্যদের কাছে। নেটওয়ার্কিং তৈরি ও কাজের বিস্তৃতিতে এসব খুবই জরুরী, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগে।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন। অর্থের পেছনে এমনভাবে কখনোই ছুটবেন না, যা আপনার পড়াশোনার সময় নষ্ট করে।শিক্ষার বিকল্প কোন কিছুই নেই।
আজ আর নয়। প্রিয়লেখার পাশেই থাকুন। সকলের প্রিয় হয়ে থাকুন।