লক্ষ লক্ষ লোকের অনুপ্রেরণা তিনি। ব্যাট হাতে বছরের পর বছর কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশার ভার পূরণ করে এসেছেন। তাঁর অবসরে অশ্রুসিক্ত হয়েছে অগণিত চোখ। সেই শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে নিয়েই বানানো হয়েছে তাঁর বায়োপিক, ‘শচীন: অ্যা বিলিয়ন ড্রিমস’। ক্রিকেট মাঠের শচীন কেন রুপালি পর্দায়, কেন বায়োপিক বানানো, এসব নিয়েই কথা বলেছেন মাস্টার ব্লাস্টার।
বায়োপিক বানানোর পেছনে আপনার অনুপ্রেরণা কি ছিল?
শচীন: আমি নিভৃতচারী মানুষ। প্রযোজক রবি ভাগচান্দকা যখন প্রথম বায়োপিকের প্রস্তাব নিয়ে আমার কাছে এল, আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘না, আমি অভিনয় করতে পারি না’। আমি একজন স্পোর্টসম্যান, এবং সবসময় তাই থাকব। আমি তাকে বলেছিলাম, আমি অভিনয় করতে চাই না। আমাকে রাজি করাতে তাদের বেশ সময় লেগেছে। আমার ভক্তরা আমার অনেক দিক সম্পর্কেই জানেন না, এই গল্পগুলো তাই বলার দরকার ছিল।
ফিল্মটি বানাতে গিয়ে কোন কোন চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হয়েছে?
শচীন: একজন স্পোর্টসপার্সন কিন্তু সর্বদা একজন স্পোর্টসপার্সনই থাকে। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমি আমার জীবন ও ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তগুলো আরও একবার জীবন্ত করে তুলতে পেরেছি। প্রযোজক, পরিচালক থেকে শুরু করে গোটা ইউনিট অসম্ভব পরিশ্রম করেছে ছবিটির জন্য। তারা তাদের কাজের জাদু দেখিয়েছে এই সিনেমায়। আমার গোটা ক্যারিয়ারের একটা প্রতিবিম্ব আছে সিনেমাটিতে। কিছু ফ্যাক্টস আছে, যা কখনোই বদলাবে না। কিন্তু আমরা দর্শকদের শুধু ফ্যাক্টস না, আরও কিছু দিতে চেয়েছি। আবার কতটুকু অংশ দর্শকদের সাথে সহজে ভাগাভাগি করা যাবে, সেটা নিয়েও ভাবতে হয়েছে আমাদের। কতটুকু অংশ সহজেই শেয়ার করা যাবে, সেটা আমরা একটা পরিবারের মত মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিনেমাটিতে যা দেখানো হয়েছে, তার বেশিরভাগই আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের ও কঠিন সময়গুলোতে আমার মানসিক অবস্থা বোঝানোর জন্য। এমন কিছু জানাতে চেয়েছি, যা আমি ছাড়া বাইরের কেউ জানে না।
সুখের ও কঠিন সময়ের কথা বললেন। কি সেগুলো?
শচীন: সুখের সময় তো অবশ্যই ২০১১ বিশ্বকাপ জয়। দীর্ঘ ২৮ টি বছর লেগেছে এটা আসতে! খারাপ সময়ের মধ্যে আছে আগের আসরগুলোতে জিততে না পারা।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে আপনার বাবার মৃত্যুর পর কেনিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচটি খেলার সময় আপনার মানসিক অবস্থার কথা যদি একটু বলতেন…
শচীন: আমার মনে শুধু একটা কথাই ঘুরেফিরে আসছিল, আমার বাবা নিশ্চয়ই উপরে বসে কোথাও না কোথাও থেকে আমাকে দেখছেন। তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন, আমি যেন আমার কাজটা চালিয়ে যাই। এই একটি চিন্তা, সাথে কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশা, এই দুইটি জিনিসই আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।
নিজের ব্যক্তিগত হতাশার ছাপ খেলার উপর পড়তে না দেয়া, জিনিসটা কি আসলেই এতটা সহজ?
শচীন: মোটেও না। খুবই কঠিন। এই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যে যায়, শুধু সেই বুঝতে পারে। এটাই জীবন। জীবন যখন কঠিন হয়ে যায়, তখনো ঘুরে দাঁড়াতে হবে- জীবনের এই শিক্ষাটাও একজন স্পোর্টসপার্সন খেলার মধ্য দিয়েই পায়। আপনাকে চালিয়ে যেতেই হবে।
কি এমন জিনিস যা একজন দর্শক এই ফিল্ম থেকে গ্রহণ করতে পারে?
শচীন: সিনেমাটা আমার জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে, আমার স্বপ্নগুলোকে তাড়া করার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে। দর্শকেরা তাই এই বার্তাটা তো নিতেই পারেন, বড় স্বপ্ন দেখ, নিজের স্বপ্নকে তাড়া কর!
এই যে আজকের শচীন টেন্ডুলকার হয়ে উঠা, এর পেছনে আপনার স্ত্রী অঞ্জলির ভূমিকা…
শচীন: অঞ্জলি ও আমার পরিবারের সাহায্য ছাড়া আমি এতদিন খেলে যেতে পারতাম না, নিজের স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে পারতাম না।
নিজের জীবনকে কম কথায় বর্ণনা করবেন কিভাবে?
শচীন: আমার প্রথম স্বপ্ন ছিল ভারতের হয়ে খেলা, তারপর বিশ্বকাপ জেতা। ২২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাকে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য। আমার জীবনে যা কিছু হয়েছে, তার জন্য আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে সত্যিই খুব কৃতজ্ঞ। আমার অবসর টাও ছিল খুব স্পেশাল। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি চাইতে পারতাম না। ২৪ টা বছর ধরে আমি সারা দেশের মানুষের নিঃস্বার্থ ভালবাসা ও সমর্থন পেয়ে গেছি। খেলোয়াড়ি জীবন যেমন উপভোগ করেছি, অবসর পরবর্তী জীবনও আমি উপভোগ করছি।
আপনি তো অনেকের হিরো, আপনার হিরো কে?
শচীন: ক্রিকেটে বলতে গেলে সুনীল গাভাস্কার আর ভিভ রিচার্ডস। আর ক্রিকেটের বাইরে আমার বাবা।
ছবি ও সাক্ষাৎকার- ফিল্মফেয়ার ডট কম থেকে সংগৃহীত