প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা জল্পনা কল্পনা এখন শেষের পথে। নেইমার নাটকের শেষ অঙ্ক যে খুব শিগগিরই আসতে চলেছে, তা এখন অনেকটাই নিশ্চিত। রেকর্ড ট্রান্সফারের বিনিময়ে প্যারিসে যাচ্ছেন নেইমার। নেইমারকে পেয়ে তাই ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন আরেকটু জোরেশোরেই দেখবে ফ্রান্সের ক্লাবটি। তা নেইমার আসার পর কেমন হবে পিএসজির মূল একাদশ? নেইমারকে ঘিরেই কি আবর্তিত হবে পিএসজির খেলা? কোচ উনাই এমেরি কি নেইমার কেই বানাবেন কেন্দ্রীয় চরিত্র? চলুন একটু বিশ্লেষণ করা যাক।
ইব্রাহিমোভিচকে জায়গা করে দেয়ার জন্য এডিনসন কাভানিকে লেফট উইংয়ে সরে যেতে হয়েছিল। তবে জনপ্রিয় ফুটবল ওয়েবসাইট গোল ডট কমের বিশ্লেষণ বলছে, এবার আর কাভানিকে নেইমারের জন্য জায়গা ছাড়তে হবে না।
বড় মঞ্চে বড় সুযোগ হাতছাড়া করেন বলে দুর্নাম আছে উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের। কিন্তু গত মৌসুমে এতটা দুরন্ত খেলেছেন যে, কোচ এমেরি কাভানির পজিশন বদলানোর ঝুঁকি নিতে চাইবেন না। গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫০ ম্যাচে ৪৯ গোল করা কাভানিই তাই থাকবেন পিএসজির নাম্বার নাইন।
তাছাড়া নেইমারও নাম্বার নাইন হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বরং একটু ওয়াইডে খেলতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। ব্রাজিল কিংবদন্তি জিকোও বলছেন, ‘বাম দিক থেকে কাট করে ভেতরে ঢোকার ক্ষেত্রে নেইমার অপ্রতিরোধ্য’। সান্তোস, বার্সেলোনা এমনকি ব্রাজিলেও নেইমারকে এই রোলেই সফল হতে দেখা গেছে।
সেক্ষেত্রে পিএসজির অ্যাটাকিং লাইন-আপ এমন হতে পারে, নাম্বার নাইন হিসেবে কাভানি, বামে থাকবেন নেইমার, আর ডানে থাকবেন ডি মারিয়া কিংবা জুলিয়ান ড্র্যাক্সলারের যেকোনো একজন।
অবশ্য নেইমার-কাভানির সাথে ডান সাইডে কে খেলবেন সেটা ট্রান্সফার উইন্ডো শেষের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না, কারণ ডি মারিয়া এবং ড্র্যাক্সলার দুজনকে নিয়েই দলবদলের বাজারে গুঞ্জন আছে। আবার মোনাকোর বিপক্ষে পিএসজির সর্বশেষ ম্যাচে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দানি আলভেজ। নিজে তো এক গোল করেছেনই, বাকি গোলের উৎসও ছিলেন তিনি। মৌসুমের কোন অংশে এসে আলভেজকে রাইট উইংয়ে দেখলেও তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আবার ৪-৩-৩ এর বদলে এমেরি যদি তাঁর পছন্দের ৪-২-৩-১ এও খেলাতে চান, সেক্ষেত্রেও নেইমারের পজিশনের খুব একটা রদবদল হবে না। সেক্ষেত্রে কাভানিকে একক স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়ে নেইমার, ডি মারিয়া ও ড্র্যাক্সলারকে অ্যাটাকিং থার্ডে রাখতে পারেন এমেরি।
তবে গোল ডট কমের বিশ্লেষক মার্ক ডয়েল বলছেন, ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলালে ডিফেন্সে ভুগতে হতে পারে পিএসজিকে। লেফট ব্যাক লেয়ভিন কুরজাওয়া অনেকটাই ব্যাকআপ বিহীন হয়ে পরবেন বলে অভিমত তার। কাউন্টার অ্যাটাকের সময় কুরজাওয়া নেইমারের থেকে খুব বেশি সহায়তা পাবেন না বলে মনে করছেন ডয়েল।
জাতীয় দলে অবশ্য অ্যাটাকিং থার্ডে সবজায়গাতেই খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে নেইমারের। সাবেক কোচ দুঙ্গা, মেনেজেস ও স্কলারির অধীনে সেন্টার ফরোয়ার্ড, ফলস নাইন, ট্রেকোয়ারিস্তা সব পজিশনেই খেলা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। তবে বর্তমান কোচ তিতে নেইমারকে লেফট সাইডেই খেলিয়েছেন।
এছাড়া র্যাবিওট, ভেরাত্তি, মোত্তা, পাস্তোরেদের নিয়ে গড়া মিডফিল্ড এবং আলভেজ, সিলভা, মার্কুইনহোস ও কুরজাওয়াদের গড়া ডিফেন্স লাইন-আপ মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সফল হওয়ার মতই দল গড়ছে পিএসজি।
তবে নেইমারকে কিনতে গিয়ে খেলোয়াড় বিক্রির যে কথা উয়েফা জানিয়েছে, সেটি নিয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা না হয়ে পারেনা পিএসজির। উয়েফা পিএসজিকে ১১০ মিলিয়ন ইউরো সমমূল্যের খেলোয়াড় ছাড়ার কথা বলেছে, সেক্ষেত্রে ডি মারিয়া, ভেরাত্তি, ড্র্যাক্সলারদের পিএসজি ধরে রাখতে পারবে কিনা, দেখার বিষয় সেটাও।
তথ্য ও ছবি কৃতজ্ঞতা- গোল ডট কম