বিজ্ঞানের এই যুগে জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস নেই অনেকেরই। ভ্রান্ত ধারণা বলেও উড়িয়ে দেন অনেকে। কিন্তু ৭ বছর আগে সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপে পল দ্য অক্টোপাস যেই ধামাকা দেখিয়েছিলেন, সেটাকে কাকতালীয় বলতেও যে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়!
২০০৮ সালে ইংল্যান্ডে জন্ম এই আটপেয়ে অক্টোপাসটির। ফুটবল ম্যাচের টুকটাক ভবিষ্যদ্বাণী করে বেশ কিছুটা নামডাক আগেই কুড়িয়েছিল এই প্রাণীটি, কিন্তু পল দ্য অক্টোপাস গোটা বিশ্বকে চমকে দেয় ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপে, ফাইনাল সহ প্রতিটি ম্যাচের সঠিক আগাম ফলাফল জানিয়ে দিয়ে!
অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ইংল্যান্ডে থাকাকালীন সময়ে কখনো কোন আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করেনি পল! পলের জ্যোতিষগিরির শুরু ২০০৮ সালে ইউরোর কিছু আগে পশ্চিম জার্মানির সি লাইফ অ্যাকুরিয়ামে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে। প্রথমে শুধু জার্মানির ম্যাচের আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করত সে। খাবার দেয়ার সময় তার সামনে দুটো পাত্র রাখা হত, যার একটিতে থাকত জার্মানির পতাকা, আরেকটিতে জার্মানির প্রতিপক্ষের পতাকা। পল যে পাত্রটি থেকে খাবার খেত, সে পাত্রে যে দেশের পতাকা রাখা, সে দেশটিই জয়ী হত! এভাবে ২০০৮ ইউরোতে জার্মানির ৬ টি ম্যাচের মধ্যে ৪ টিতে নির্ভুল অনুমান করে পল।
এটিকে অনেকে কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপে এসে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয় পল। এবারে যে একটি ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণীও ভুল প্রমাণিত হয়নি! ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানি খেলেছিল এমন ৭ টি ম্যাচেরই নির্ভুল ফল আগেই জানিয়ে দেয় সে, যা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল জার্মান সংবাদভিত্তিক চ্যানেল এন-টিভি। এমনকি আর্জেন্টিনা যে জার্মানির কাছে হারবে, এটাও সে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল।
তবে সেমিফাইনালে স্পেন-জার্মানি লড়াইয়ের আগে পল যখন স্পেনকে বাছাই করে, জার্মান ভক্তরা তখন কায়মনোবাক্যেই প্রার্থনা করেছিল, পলের অনুমান যেন ব্যর্থ হয়! কিন্তু সেবারও অনুমানের খেলায় জিতেছিল পলই, জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ঠিকই ফাইনালে উঠেছিল স্পেন।
এর আগে জার্মানি ছাড়া অন্য কোন দলের খেলায় ভবিষ্যদ্বাণী না করলেও স্পেন-নেদারল্যান্ডস ফাইনালের আগে ঠিকই খেলার ফলাফল আগেই জানিয়ে দিয়েছিল পল। বলা বাহুল্য, সেবারও পলকে সত্যি প্রমাণিত করে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জিতে নেয় স্প্যানিশরা।
বেঁচে থাকা অবস্থায় মোট ১৪ বার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল পল, যার মধ্যে ১১ বার জার্মানির পক্ষে, দুই বার স্পেনের পক্ষে, ও একবার সার্বিয়ার পক্ষে। যার মধ্যে কেবল দুইটিই ভুল হয়েছিল, ২০০৮ ইউরোতে জার্মানির গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে, ও সেই ইউরোরই ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচে।
বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেয়া পলের মৃত্যু হয়েছিল অনেকটা আকস্মিকভাবে। ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর পলের সফল স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল, কিন্তু পরের দিন সকালেই তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মারা যাওয়ার সময় পলের বয়স হয়েছিল প্রায় আড়াই বছর, একটি অক্টোপাসের জন্য যা স্বাভাবিক জীবনকাল। ২০১০ সালেই পলের স্মরণে ‘আস্ক দ্য অক্টোপাস’ নামের একটি আইফোন অ্যাপ বের করা হয়।
২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপের সময় গুগল ডুডলে পলের প্রতিকৃতি দেখানো হয়। এছাড়া ফাইনাল খেলার দিনেও গুগল ডুডলে পলের ইমেজ দেখানো হয়, যাতে ক্লিক করলে দেখা যায়, স্বর্গ থেকে বিশুদ্ধ ফুটবলের জন্য উল্লাস করছে সকলের প্রিয় পল দ্য অক্টোপাস!