এত বছরের ইতিহাসে প্রত্যাবর্তনের গল্প কম দেখেনি ফুটবল বিশ্ব। প্রতিকূল অবস্থায় থেকেও হার না মানা মানসিকতা ধরে রেখে প্রত্যাবর্তনের অসাধারণ গল্প লিখেছে বহু দল। প্রিয়লেখার ঈদ আয়োজনে আপনাদের জন্য থাকছে সেরকমই কিছু দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন কাহিনী। আজকে থাকছে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।
৫) পাগলাটে এক ম্যাচে শেষ হাসি ওয়েঙ্গারের আর্সেনালের
ইংলিশ ফুটবল এরকম পাগুলে ম্যাচ খুব বেশি দেখেনি। ২০১২ সালের অক্টোবরে ক্যাপিটাল ওয়ান কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি আর্সেনাল ও রিডিং। ম্যাচে ফেভারিট আর্সেনাল, কিন্তু গানার ডিফেন্সকে স্তব্ধ করে দিয়ে মাত্র ৩৭ মিনিটের মাথায় ৪-০ গোলের লিড নেয় রিডিং। ম্যাচে ফেরার জন্য তখনো সময় ছিল আর্সেনালের, কিন্তু ৪ গোলের ঘাটতি পোষানোর ঘটনা হররোজ ঘটে না। তাও দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে ৯০ মিনিট শেষে ৪-৪ গোলের সমতায় ফেরে আর্সেনাল।
পেছন থেকে ম্যাচে ফিরে আসায় মনোবল বেড়ে যায় গানারদের, ১০৩ মিনিটে গোল করে তাই ৫-৪ গোলে এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু রিডিংও ম্যাচে ফিরে আসে একটু পরে, ১১৫ মিনিটে গোল করে ম্যাচে আনে ৫-৫ সমতা। খেলা যখন টাইব্রেকার নিষ্পত্তি হবে মনে হচ্ছিল, তখন শেষ তিন মিনিটে দুই গোল করে আর্সেনালকে ৭-৫ গোলের অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন থিও ওয়ালকট ও কামাখ।
৬) মালির অনবদ্য প্রত্যাবর্তন
২০১০ সালের আফ্রিকান ন্যাশনস কাপ শুরু হয়েছিল মালির দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হয়ে। ম্যাচের বাকি মাত্র ১৬ মিনিট, স্বাগতিক অ্যাঙ্গোলা তখন এগিয়ে ৪-০ গোলে। এই অবস্থায় জয় না পেলে সেটাই বরং অস্বাভাবিক। মালি করে দেখায় সেই অস্বাভাবিক কাজটাই।
বার্সেলোনা তারকা সেইডু কেইটার দুই গোল, সেভিয়ার ফুটবলার ফ্রেডেরিক কানুর দুর্দান্ত এক হেডার ও ইনজুরি টাইমে বদলি খেলোয়াড় মুস্তাফা ইয়াতাবারের গোলে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখে মালি।
ম্যাচটি অবশ্য শুরু হয়েছিল শোকের আবহে। টোগো দলের বাসে মেশিনগান হামলায় দুইজন নিহত সহ আরও অনেকে আহত হন। সেই শোক সামলে উঠে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক দর্শকদের খুশির আবহে ভাসিয়েছিলেন অ্যাঙ্গোলার ফুটবলারেরা। কিন্তু তখনো কে ই বা জানত, ম্যাচ শেষে এমন চমক জমিয়ে রেখেছে মালি!
৭) এবারে উল্টোভাগ্য আর্সেনালের
রিডিংয়ের সাথে ম্যাচে আর্সেনালের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের কাহিনী তো আগেই শুনলেন, তবে এর বিপরীত ভাগ্যও যে বরণ করতে হয়েছিল গানারদের, সেটা কি জানেন? এই ঘটনাটি ২০১১ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের। ম্যাচের মাত্র ২৬ মিনিটের মাথায় ৪-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আর্সেনাল, লিড ধরেও রেখেছিল ৬৮ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু এরপরেই ম্যাচের চাকা উল্টোপথে ঘুরে যায়। মাত্র ২২ মিনিটে ৪ গোল শোধ করে ৪-৪ গোলে ম্যাচ ড্র করে নিউক্যাসল ইউনাইটেড।
৮) নেইমারে দুর্ধর্ষ বার্সেলোনার অবিশ্বাস্য জয়
এই ম্যাচটির স্মৃতি নিশ্চয়ই এখনো কারোর মস্তিষ্ক থেকে মুছে যায়নি। এরকম রুপকথার সাক্ষী হতে পারা যে পরম ভাগ্যের ব্যাপার! রাউন্ড অফ সিক্সটিনের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল পিএসজি-বার্সা, বেশ কয়েক বছর ধরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যাদের মোটামুটি নিয়মিতভাবেই দেখা হয়েছে। প্রতিবারই শেষ হাসি হেসেছে বার্সেলোনা, এবারেও তাই ফেভারিট ছিল মেসির বার্সাই।
কিন্তু ভালবাসা দিবসের রাতে প্যারিসে বার্সাকে কাঁটার শয়নে বিদ্ধ করে ফ্রান্সের জায়ান্টরা। সবার চোখ ছানাবড়া করে ১ম লেগে বার্সাকে ৪-০ গোলে বিধস্ত করে পিএসজি।
পরের রাউন্ডে যেতে হলে নতুন করে ইতিহাস লিখতে হত বার্সাকে। নকআউট পর্বে ৪ গোলের ব্যবধান ঘুচিয়ে কোন দল যে এর আগে পরের পর্বে পা ফেলত পারেনি! খেলা টাইব্রেকারে নিতে হলেও ৪ গোল দিতে হত, আর পিএসজি ১ গোল করলে দিতে হত ৬ গোল!
কিন্তু কোন বাধাই সেদিন আটকাতে পারেনি লুইস এনরিকের শিষ্যদের। নেইমারের ভুবন ভোলানো ফুটবলে সেদিন ঠিকই ৬-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সা, লেখে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তনের গল্প!