ডায়াবেটিসের রোগী নেই এমন পরিবার এখন হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না,পরিবারে অথবা কাছের কোনো পরিজনের কারো না কারো এই রোগটি থাকেই আর তাই বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত রোগের একটি ডায়াবেটিস । ডায়াবেটিস মূলত একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। যাকে ইংরেজি ভাষায় আমরা বলছি Diabetes mellitus .আমাদের শরীরের অগ্ন্যায়শ যদি যথেষ্ট ইনসুলিন নামক হরমোন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হল এ রোগের মূল কথা।
অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজ নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।
কি করে বুঝবেন ?
আমাদের রক্তে সাধারনত গ্লুকোজের পরিমান থাকে ৩.৩-৬.৯মিলি.মোল/লি. আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ধরে নিতে পারেন আপনার ইনসুলিন হরমোনের ঘাটতি হয়েছে।
ডায়াবেটিসের লক্ষন
- ঘন ঘন প্রস্রাব। এ কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ ।
- অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া ।
- অতিশয় দুর্বলতা ।
- সার্বক্ষণিক ক্ষুধা ।
- স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস ।
- চোখে ঝাপসা দেখা ।
- ঘন ঘন সংক্রমণ ।
আপনার করনীয়
আমরা শুরুতেই বলছি এই রোগের সম্পূর্ন নিরাময় সম্ভব নয় তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই আপনি নিয়ন্ত্রন করে সুস্থ থাকতে পারেন। এজন্য আপনাকে মানতে হবে 3D ।
3D = Diet, Discipline and Drugs
ডায়াবেটিস রোগীদের নিত্য ঝামেলার মধ্যে অন্যতম একটি হল খাবার সমস্যা। কি খাব, কি খাব না তা নিয়ে রোগীরা তো তটস্থ থাকেনই, তার চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন রোগীর স্বজনেরা। ডায়াবেটিস রোগীদের তাই বুঝেশুনে খাবার খাওয়া উচিত। প্রিয়লেখার পাতায় আজ থাকছে ডায়াবেটিস রোগীরা কি খাবেন আর কি খাবেন না তার একটি তালিকা।
১. D= Diet
আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভাস আপনাকে অনেকটা সুস্থ রাখতে পারে।ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের নির্দেশ মতো তৈরী করা খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। সহজ কথায় চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা, শর্করা জাতীয় খাবার খেতে হবে পরিমিত,ঘি-মাখন-চর্বি-ডালডা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে যদিও তেল খেতে তেমন বাধা নেই।
আশযুক্ত খাবার, শাক-সবজি, টক ফল ইত্যাদি বেশী পরিমাণে দিয়ে খাদ্য তালিকা তৈরী করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে অনেক বারে তালিকার খাদ্যটি খাওয়া উচিত সেই সাথে ওজন কমানোর চিন্তাটাও মাথায় রাখতে হবে।
২. D=Discipline
শৃঙ্খলাবোধই ডায়াবেটিস রোগির জীবনকাঠি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট নিয়মে খাওয়া দাওয়া এবং অন্যান্য কাজ করা উচিত। দৈনিক সকাল ও বিকাল নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় নিয়ে হাটা এবং হাঁটার সময় অবশ্যই যেন দুই পাশের হাতই নাড়াচাড়া করে। এভাবে নিয়মিত নূন্যতম ৪৫ মিনিট হাটতে হবে। তবে হঠাৎ করে একসাথে বেশি পরিশ্রম করে ফেলা ঠিক হবে না।
এছাড়াও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে কেননা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষত ,খোশ পাচড়া এসব সহজে সাড়তে চায় না।তাই সবসময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোথাও কেটে না যায়। সব রকম নিয়ম মেনে চলতে হবে।
৩ . D=Drugs
খাদ্যাভাস পরিবর্তন ও নিয়ম মত চলে যদি আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না হলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ঔষুধ সেবন করতে হবে। এবং প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে ইঞ্জেকশনের সাহায্যে ইনসুলিন হরমোন দেহে প্রবেশ করাতে হবে।ইনসুলিনের ব্যবহার অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
আপনি যদি নিয়মিত 3D অনুসরন করেন তাহলে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন বলে আশা করছি।
প্রতিকার নয় প্রতিরোধই আমাদের কাম্য। তাই সচেতন থেকে প্রতিরোধ করতে হবে।