বিশ্ব এগিয়ে চলেছে তবে তা ধ্বংসের মুখে নিশ্চয়ই নয়। বরং বিজ্ঞানের অবদানে তা মেতে উঠেছে সৃষ্টির সুরক্ষায়। প্রতি মুহূর্তেই বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু মনের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। রক্ষা করছে জীবন ও প্রকৃতি। গেলো বছর ছিল নানা ঘটনায় মুখরিত। হয়ে গেল নেপালে ভূমিকম্প। হারিয়ে গেলো মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স। তবু কিছু ঘটনা ছিল মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। তেমন সাম্প্রতিক সময়ে আলোড়ন তোলা কিছু ঘটনাই এখানে তুলে ধরা হলোঃ-
পান্ডা এখন আর বিপন্ন প্রজাতি নয়ঃ
সেপ্টেম্বর ২০১৬ তে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্যা কনসারভেসন অফ ন্যাচার তাদের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নামের লিস্ট থেকে সংরক্ষনে সতর্কতা অবলম্বনের লিস্টে পান্ডার নাম স্থানান্তর করে। এমন কি সে লিস্টে টেডি বিয়ার ও মনারক প্রজাপতির নাম ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জনসচেতনতা ও প্রচারনা তার সাথে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগের প্রভাবে এটি সম্ভব হয়েছে।
সমুদ্রের মাঝেও রকেট স্থীর ভাবে ল্যান্ড করবেঃ
সাম্প্রতিক সময়ে আলোড়ন তোলা আরেকটি ঘটনা মনে করে দেখুন এপ্রিল ২০১৬ এর সেই ঘটনাটি যেখানে স্পেস এক্স ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত ড্রোন শিপে রকেটের সফল ল্যান্ডিং করানোর মধ্য দিয়ে। এটি মোটেও সহজ কাজ ছিলো না। একটু চিন্তা করে দেখুন সাগরে ভাসমান একটি প্ল্যাটফরমে তীব্র গতিতে রকেট ল্যান্ড করছে, শুনতে অবিশ্বাস্যই শোনায়। যদি এটি বারে বারে করা সম্ভব হয় তবে কোটি ডলার বেঁচে যাবে কারন রকেট বুস্টার পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। এতে হিসেব মতে মহাকাশ অভিযান এর মোট খরচের ৩০% বেঁচে যাবে।।
সবার জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটিঃ
ভার্চুয়াল রিয়ালিটির অনবদ্য জগতে আজ মোবাইলে আমরা ৩৬০ ডিগ্রী ভিডিও দেখছি যা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তেমনি এক অনবদ্য আবিস্কারের নাম ভি-আর গ্লাস যেখানে আমরা আমাদের মোবাইল সেট করে হারাতে পারি বিস্ময়কর জগতে। কনফিগারেশন করাও সহজ যেন প্লাগ এন্ড প্লে। ব্যবহার করা যায় এক্স বক্স ও প্লে স্টেশন এর সাথেও। দাম ও হাতের নাগালেই,তাই তো বিশ্ব বলছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উপভোগ করতে কম্পিউটারে জিনিয়াস হবার প্রয়োজন নেই,সাধারন মানুষ তা উপভোগ করতে পারে ইচ্ছে করলেই।
যে সময় আমরা গ্র্যাভিটেসনাল ওয়েভে খুঁজে পেলামঃ
১.৩ বিলিয়ন বছর আগে দুই গ্রহের মুখোমুখি সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়া ব্ল্যাক হোলের মাঝে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভের সন্ধান পেয়েছে দ্যা লেজার ইন্ট্যারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি। এই প্রথমবারের মত আমরা স্পেস টাইমে এতো বড় ঢেউয়ের মোট আলোড়ন টের পেয়েছি,যা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন ভাবে ভাবতে শিখিয়েছে।
সাহসী জাজ সাহেব পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে রায় দিলেন,জলবায়ু পরিবর্তনে আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মঃ
বিশ্বে উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে যার প্রভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মেরু বরফের গলন,কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাস, দাবানল,ভুমিকম্প,সুনামি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে চলেছে। তবে ধন্যবাদ দিতে হয় অরিগনের অ্যান আইকেন কে যিনি যুব সম্প্রদায়ের ২১ জনের ডাকে সাড়া দিয়ে এক অভূতপূর্ব রায় ঘোষণা করেন যারা সরকার কেন জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখছে মর্মে মানলা করেছিলো ও যার রায় সরকারের বিপক্ষে এসেছে। একই ধরনের ঘটনার জন্ম হয়েছে নেদারল্যান্ডে ও যেখানে আদালতে ডাচ সরকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হয়েছিলো যে ২০২০ সালে পরিবেশ দূষণ ( কল-কারখানারধোঁয়া হতে’) ১৯৯০ সালের তুলনায় কমপক্ষে ২৫% শতাংশ হ্রাস পাবে ।
ভাইরাস যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়বেঃ
বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই অনুভব করেছিলেন ভাইরাস চাইলেই মানবদেহের ইমিউনি সিস্টেম( রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ) বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে তা সাময়িক। কিভাবে সেই কার্যক্ষমতাকে স্থায়ী করা যায় তাই নিয়ে এতদিন চলছিলো গবেষণা। ২০১৫ সালে আই এম এল ওয়াই জি আই সি সর্বপ্রথম এফডিএ এর অনুমোদন সাপেক্ষে ভাইরাল ক্যান্সার ড্রাগ বাজারে আসে। মেলানোমা নামক টিউমারের উপশম ঘটাতে মডিফাইড হারপিস ভাইরাস ইঞ্জেক্ট করা হয় যা ইমিউনি রেসপন্স কে একটিভেট করে সফলতার প্রমান দেয়।
সোলার সিস্টেমে ৯ম প্ল্যানেট এর অবস্থানঃ
সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা প্রমান পেয়েছেন যে বেশ বড় মাপের একটি গ্রহ যার আকার নেপচুনের সমান আমাদের সোলার সিস্টেমে আলোড়ন তুলতে যাচ্ছে, যদি সত্যি এই ঘটনা ঘটে তবে অচিরেই আমরা পেতে চলেছি ৯টি গ্রহ নিয়ে গড়ে ওঠা এক অভূতপূর্ব সোলার সিস্টেম।
হোয়াটসঅ্যাাপ এনক্রিপ্সন ১বিলিয়ন মানুষকে দিচ্ছে তথ্য নিরাপত্তাঃ
গত বছরের এপ্রিল মাস হতে হোয়াটসঅ্যাপ দিচ্ছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্সন টেক্সট মেসেজ ও ভয়েস কলের জন্যে। এই সুবিধার কারনে কেউ চাইলেই আর কারো ব্যাক্তিগত আলাপনে আড়ি পাততে পারবে না।
প্রকৃতি সংরক্ষনঃ
বারাক ওবামা কে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন কিসের মধ্যে কি!! তিনিই তো আটলান্টিক মহাসাগর ও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে মেরিন প্রিজারভ আইন করেছেন। যদি পেঙ্গুইন,অক্টোপাসরা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে জানতো তবে তারা স্বচ্ছন্দে ওবামা কে কৃতজ্ঞতা জানাতো।
ডেঙ্গু জ্বরের ভ্যাকসিন আবিস্কারঃ
প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে,এটি মশা বাহিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে ভীসন জ্বর, মাত্রাতিরিক্ত মাথা ব্যথা, বমি হয় ও অনেক সময় মৃত্যু ও ঘটে। এই বছরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমবারে মত ডেঙ্গু জরের প্রতিষেধক এর প্রচলন ঘটিয়েছে যা ব্রাজিল ও ফিলিপাইনে প্রথম দেয়া হচ্ছে।
পৃথিবীর মত আরেকটি গ্রহ আবিস্কারঃ
আমাদের সৌর মন্ডলের নিকটতম অংশে একটি পাথুরে গ্রহের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। প্রক্সিমা বি নামের এই গ্রহটি কে পৃথিবীর মত বাসযোগ্য বলে ধারনা করা হলেও তার স্বপক্ষে এখনো পর্যন্ত কোন প্রমান পাওয়া যায় নি। তবু কল্পনা করতে ত ভালোই লাগে পৃথিবীর মত বাস যোগ্য আরেকটি গ্রহ যেখানে চাইলেই ঘুরতে চলে যাবেন স্পেস শিপে চড়ে করে আসবেন পিকনিক, অপেক্ষা শুধু ওই স্পেসসিপের সহজ লভ্যতার।
সৌর শক্তি চালিত বিমানঃ
পাইলট বারট্রান্ড পিকার্ড ও আন্দ্রে বোরসেবারগ সোলার ইম্পালস- ২ কে আবুধাবিতে অবতরন করিয়ে গড়েছেন নতুন ইতিহাস। সম্পূর্ণ রুপে সৌর রশ্মিতে চালিত এই বিমানটি পাড়ি দিয়েছে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৬,০০০ মাইল। পাইলটের এই দলটি আসা করছেন তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বিমান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ বান্ধন বিমান নির্মাণে আরও উৎসাহী হবে।
ওজোন স্তরের ছিদ্র মিলিয়ে যাচ্ছেঃ
ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি হতে পৃথিবীকে রক্ষাকারী ওজোন স্তরে যে বিশাল মাপের ছিদ্র দেখা গিয়েছিলো তা ১.৫ মিলিয়ন স্কয়ার মাইল সঙ্কুচিত হয়েছে যা ২০০০ সাল থেকে উৎপত্তি হয়েছিলো,ধন্যবাদ সিএফসি গ্যাসের ব্যবহার কমায় ও আবহাওয়ার প্যাটার্ন চেঞ্জ হওয়ায় আজ ওজোন স্তর ধীরে ধীরে পূর্বের রূপ ফিরে পাচ্ছে।
তাসমানিয়ান ডেভিলের দুধ হতে বিকল্প অ্যান্টিবায়োটিক এর প্রাপ্তিঃ
স্বভাবে হিংস্র হলেও উপকারে আসে। কি অবাক হলেন??? ভাবছেন কিসের কথা বলছি!!! বলছিলাম তাসমানিয়ান ডেভিল হিসেবে পরিচিত প্রাণীটির কথা। এটি কেবল অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া প্রদেশেই দেখা যায়। যেহেতু মানব শরীরে ব্যাক্টেরিয়ার প্রভাব বেড়েই চলেছে ও অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক ও আশানুরূপ ফল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ,বিজ্ঞানীরা খুঁজছে চিকিৎসার ভিন্ন উৎস। সেই সূত্রে বিজ্ঞানীরা খোজ পেয়েছে তাসমানিয়ান ডেভিলের দুধে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল পেপসিডাইস যা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে চিকিৎসা সেবায় হতে চলেছে নতুন অস্ত্র।
এই ছিলো আমাদের আজকের তথ্য ভান্ডার। খুব দ্রুত আপনাদের সাথে হাজির হবো আরও নতুন কিছু নিয়ে। সে পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন ও ক্রিয়েটিভিটিকে সঙ্গে রাখুন।
লিখেছেন-নাসীব উর রহমান