স্কোয়াডের শক্তিমত্তা বিবেচনা করতে গেলে জার্মানির কাছাকাছি আসবে খুব কম দলই। রাশিয়া বিশ্বকাপটা জার্মানি শুরু করবে অন্যতম ফেভারিট হিসেবেই। তবে ইতিহাস কথা বলছে জার্মানির বিপক্ষে। ১৯৬২ বিশ্বকাপের ব্রাজিলের পর আর কোন দেশ টানা দুইবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপের পর ১৯৬২ চিলি বিশ্বকাপেও গারিঞ্চার নৈপুণ্যে শিরোপা ধরে রেখেছিল ব্রাজিল। এরপর আর কোন দেশ এই কৃতিত্বের পুনরাবৃত্তি করে দেখাতে পারেনি। জার্মানি কি পারবে? সেই উত্তর পাওয়া যাবে ১৫ জুন মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। তবে তার আগে ১৯৬৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের পরিণতিতে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
১৯৬৬ বিশ্বকাপ- ব্রাজিল:
আগের দুইবার বিশ্বকাপ জেতায় ও দলে পেলে থাকায় ১৯৬৬ বিশ্বকাপের জন্য স্পষ্ট ফেভারিট ছিল ব্রাজিল। কিন্তু নিজেদের প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পাওয়া ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েন পেলে। এরপর হাঙ্গেরি ও ইউসেবিওর পর্তুগালের কাছে হারায় গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে আগেরবারের চ্যাম্পিয়নরা।
১৯৭০ বিশ্বকাপ- ইংল্যান্ড:
১৯৬৬ আসরের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড মেক্সিকো বিশ্বকাপেও পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ আগের আসরের ফাইনালিস্ট পশ্চিম জার্মানি। তবে এবার আর জার্মানদের হারাতে পারেনি ইংলিশরা, প্রথমে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও ম্যাচ হারতে হয় ৩-২ ব্যবধানে।
১৯৭৪ বিশ্বকাপ- ব্রাজিল:
পেলে না থাকায় এবার গ্রুপ পর্ব পেরোতেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় ব্রাজিলকে। যুগোস্লাভিয়া ও স্কটল্যান্ডের সমান পয়েন্ট নিয়ে কোনোরকমে গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে পরের পর্বে উঠলেও নেদারল্যান্ডসের কাছে ২-০ গোলে হেরে ফাইনালের আগেই বিদায় নেয় সেলেসাওরা।
১৯৭৮ বিশ্বকাপ- পশ্চিম জার্মানি:
পোল্যান্ডের পেছনে থেকে দ্বিতীয় হয়ে গ্রুপ পর্ব পার হয় আগের আসরের চ্যাম্পিয়নরা। তবে দ্বিতীয় পর্বে নেদারল্যান্ডস, ইতালি কিংবা অস্ট্রিয়া- কারোর বিপক্ষেই জয়ের মুখ দেখেনি জার্মানরা। অস্ট্রিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরে বাড়ির পথ ধরতে হয় তাদের।
১৯৮২ বিশ্বকাপ- আর্জেন্টিনা:
এটি ছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার প্রথম বিশ্বকাপ। বেলজিয়ামের পেছনে থেকে দ্বিতীয় হয়ে পরের রাউন্ডে ওঠা আর্জেন্টাইনরা সেকেন্ড রাউন্ডে ইতালি ও ব্রাজিলের কাছে হেরে সেমিফাইনালের আগেই বাদ পড়ে।
১৯৮৬ বিশ্বকাপ- ইতালি:
বুলগেরিয়া ও আর্জেন্টিনার সাথে ১-১ গোলে ড্র করে ও কোরিয়া রিপাবলিকের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জিতে কোনরকমে গ্রুপ পর্ব উতরায় ইতালি। এরপর শেষ ষোলোতে মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলে হেরে শেষ হয় তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা।
১৯৯০ বিশ্বকাপ- আর্জেন্টিনা:
আগের আসরে ম্যারাডোনাকে সাহায্য করার মতো অনেকেই ছিলেন দলে, তবে এবার ম্যারাডোনাকে অনেকটা একাই বহন করতে হয় আর্জেন্টিনার হাল। তাও ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে। শেষ পর্যন্ত আগের আসরে যাদের হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল, সেই পশ্চিম জার্মানির কাছেই ১-০ গোলে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হতে হয় ম্যারাডোনাদের।
১৯৯৪ বিশ্বকাপ- পশ্চিম জার্মানি:
শেষ ষোলোতে বেলজিয়ামকে ৩-২ গোলে হারালেও কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে বুলগেরিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় পশ্চিম জার্মানিকে।
১৯৯৮ বিশ্বকাপ- ব্রাজিল:
বিশ্বকাপের আগে অনেক ফুটবলপ্রেমীই চেয়েছিলেন, ফাইনালটা যেন ব্রাজিল বনাম ফ্রান্স হয়। হয়েছিলও তাই, তবে বেশিরভাগের অনুমান মিথ্যা প্রমাণিত করে ফাইনালে জিদানের ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।
২০০২ বিশ্বকাপ- ফ্রান্স:
ফ্রান্সের মতো এত বাজেভাবে খুব কম ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরাই পারফর্ম করেছে। আগের আসরে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসা দলটি গ্রুপ পর্বে একটিও গোল না করে ও কোন ম্যাচ না জিতেই বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে।
২০০৬ বিশ্বকাপ- ব্রাজিল:
কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ভালোই খেলছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু কোয়ার্টারে এসে তারা মুখোমুখি হয় ১৯৯৮ এর চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের। জিনেদিন জিদানের ফ্রিকিক থেকে গোল করে ব্রাজিলের হেক্সা জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেন থিয়েরি অঁরি।
২০১০ বিশ্বকাপ- ইতালি:
আরও একবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। প্যারাগুয়ে ও নিউজিল্যান্ডের সাথে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর স্লোভাকিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে আজ্জুরিরা।
২০১৪ বিশ্বকাপ- স্পেন:
পরপর দুই বিশ্বকাপে একই পরিণতি বরণ করতে হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। প্রথম ম্যাচে এগিয়ে গিয়েও নেদারল্যান্ডসে কাছে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর বাঁচা-মরার ম্যাচে চিলির কাছে ২-০ গোলের হার। শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতেও তাই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়তে হয় ভিসেন্তে দেল বস্কের দলকে।