কিছুদিন আগেও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জন্য আপনার মায়া হতে পারতো। প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হেরেছিল দলটি, এর মধ্যে চারটিই শেষ ওভারে রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে! তার মধ্যে দুটি আবার হেরেছে ১ উইকেটে।
কিন্তু নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের কাছে যেভাবে হেরেছে দলটি, এরপর আর নিজেদের ছাড়া কাউকে দোষ দেয়ার নেই দলটির। ওয়াংখেড়ের ফ্রেশ পিচে হায়দ্রাবাদের দেয়া ১১৯ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিজেদের আইপিএল ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর ৮৭ তেই অলআউট হয়ে ম্যাচ হেরেছে শোচনীয়ভাবে, তাও আবার হায়দ্রাবাদের বোলিং অ্যাটাকে ছিলেন না ভুবনেশ্বর কুমার ও বিলি স্ট্যানলেক।
কেন পারছে না মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স? ৬ ম্যাচে মাত্র ১ জয় নিয়ে কেন তারা পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে? কয়েকটি কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে ইএসপিএন ক্রিকইনফো।
মিডল ওভার দুর্দশা:
গত বছর শিরোপাজয়ী দলটির শক্তিমত্তার জায়গাটিই এই মৌসুমে এসে পরিণত হয়েছে দলটির দুর্বলতায়। মিডল অর্ডারের মানুষগুলো একই আছেন, কিন্তু সবাই যেন একইসাথে ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন।
প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর মুম্বাই ম্যানেজমেন্ট সূর্যকুমার যাদবকে মিডল অর্ডার থেকে উঠিয়ে ওপেনিংয়ে নিয়ে আসে, যাতে করে ভঙ্গুর মিডল অর্ডারে আরেকটু স্থিরতা আনতে পারেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। যাদব ওপেনিংয়ে ভালো করলেও মিডল অর্ডারের অস্থিরতা কাটেনি।
এখন পর্যন্ত খেলা ৬ ম্যাচের প্রতিটিতেই তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এভিন লুইস, সূর্যকুমার যাদব ও ঈশান কিষাণের মধ্যে যে কেউ একজন ভালো শুরু এনে দিয়েছেন। কিন্তু সেই ভালো শুরু ধরে রাখতে পারেনি মুম্বাইয়ের মিডল অর্ডার। মিডল অর্ডারের ভঙ্গুরতা সবচেয়ে ভালো ফুটে উঠেছে দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে ম্যাচে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবে মাত্র ১৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান তুলে ফেলেছিল মুম্বাই। রান যেখানে ২২০ এর ঘর ছোঁয়ার কথা, সেখানে মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় রান আটকে যায় ১৯৪ তেই। এর খেসারত দিয়ে ম্যাচও হারতে হয় তাদের।
গত মৌসুমে মুম্বাইয়ের সফলতার অন্যতম বড় কারণ ছিল হার্দিক পান্ডিয়ার বিধ্বংসী ব্যাটিং। এই মৌসুমে সেই বিধ্বংসী পান্ডিয়াকে যেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথম ম্যাচে ৫ নম্বরে ব্যাট করেছিলেন, পরের ৫ টি ম্যাচেই ব্যাট করেছেন ৭ নম্বরে। দুই ম্যাচে অপরাজিত ২২ ও ১৭ রানের ইনিংস খেলেছেন, কিন্তু বাকি ৩ ম্যাচ মিলিয়ে করেছেন মোটে ৯ রান।
বোলারের হার্দিকের দুর্বলতা খুঁজে পেয়ে গেছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেননি মুম্বাই কোচ মাহেলা জয়াবর্ধনে, ‘প্রতি বছর কিন্তু আপনি একই ভাবে ব্যাট করতে পারবেন না। নতুন কিছু যোগ না করলে আপনি থমকে যাবেনই। হার্দিকের মতো তরুণ খেলোয়াড়েরা যত দিন যাবে তত এগুলো শিখবে, নিজেদের আরও উন্নত করবে। শুধু প্রতিভা আপনাকে শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাবে না, কঠিন পরিশ্রমও লাগবে। ম্যাচের পরিস্থিতি পড়তে পারতে হবে তরুণদের, এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যেখানে আন্তর্জাতিক মানের বোলারেরা বল করছেন, সেখানে নিত্যনতুন জিনিস যোগ না করলে আপনি টিকে থাকতে পারবেন না।’
কোথায় হারালেন পোলার্ড:
দলে চার বিদেশীর মধ্যে একজন কাইরন পোলার্ড, নিয়মিত খেলছেন দলে। কিন্তু আগের সেই পোলার্ডকে যেন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আর নিয়মিত বল করেন না, ব্যাট হাতেও দলকে একটিও ম্যাচ জেতাতে পারেননি এখনো পর্যন্ত। সবচেয়ে বড় কথা, পোলার্ডসুলভ সেই ব্যাটিংই যেন হারিয়ে গেছে তাঁর ব্যাট থেকে। এই মৌসুমে প্রথম ১০ বলে তাঁর স্ট্রাইক রেট মাত্র ৮৮.২৩, এই মৌসুমে অন্তত ৩০ বল খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চতুর্থ বাজে স্ট্রাইকরেট এটি। পরিচিত পোলার্ডকে খুঁজে না পেলে হয়তো তাঁকে বাদ দেয়ার কথাই ভাবতে হবে মুম্বাইকে।
বুমরাহর ১৯ তম ওভারের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা:
ডেথ ওভারে নিজের বোলিংকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন জসপ্রীত বুমরাহ, তাঁর ছোট কিছু ভুলও এখন আলোচনার খোরাক জোগায়। এই মৌসুমে এখনো পর্যন্ত তাঁর ইকোনমি ৬.৩৬, যা যথেষ্টই ভালো। কিন্তু দুই ম্যাচে দুইটি বাজে ১৯ ওভার মুম্বাইকে হারিয়েছে দুইটি ম্যাচ।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে জয়ই দেখছিল মুম্বাই। দুই ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ২৭ রান, ১৯ তম ওভার করতে এলেন বুমরাহ। প্রথম পাঁচ বলের মধ্যে চারটি ইয়োর্কার দেয়ার চেষ্টা করলেন, সফলভাবে দিতে পারলেন মাত্র একটি। বাকি ৩ টিতেই ছয় মারলেন ডোয়াইন ব্রাভো। ষষ্ঠ বলে তাঁকে আউট করলেন বটে, কিন্তু ততক্ষণে ওভার থেকে উঠে গেছে ২০ রান।
একই অবস্থা রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ম্যাচেও। ১৯ তম ওভার যখন করতে গেলেন, রাজস্থানের লাগে ২৮ রান। অথচ দুই বোলার মিলেই তাঁর ওভার থেকে নিয়ে নিলেন ১৮ রান! ওই ম্যাচটা হারে তারা।
রোহিতের ব্যাটিং পজিশন:
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে মিডল অর্ডারে নেমে ৯৪ রানের ইনিংস খেলার পর রোহিত নিশ্চিত করেছিলেন, সূর্যকুমার যাদব ও ঈশান কিষাণকে উপরে স্বাধীনতা দেয়ার জন্য তিনি নিয়মিত মিডল অর্ডারে ব্যাট করবেন। ওইদিন হয়তো কাগজে কলমে ৪ নম্বরে ব্যাট করেছিলেন রোহিত, কিন্তু আদতে উইকেটে এসেছিলেন প্রথম ওভারে, শুন্য রানেই দুই উইকেট হারানোর পর।
কিন্তু মিডল অর্ডারে ব্যাট করে মানিয়ে নিতে পারছেন না রোহিত। তিনি বিশ্বের সেরা ওপেনারদের একজন, ওপেন করতে নেমে দলকে ঝড়ো সূচনা এনে দেয়াই তাঁর কাজ। মুম্বাইকে তাই রোহিতের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
সকল ইমেজ ক্রেডিট: ক্রিকইনফো