তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যেই নামটি চিরকাল খোদাই হয়ে থাকবে, সেটি হল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, যাকে আমরা সবাই চিনি মহাত্মা গান্ধী নামে। সেই গান্ধীজীর জীবনের কিছু চমকপ্রদ তথ্য আজ থাকছে প্রিয়লেখার পাঠকদের জন্য।
- নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৫ বার মনোনীত হয়েছিলেন গান্ধীজী। ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯ ও ১৯৪৭ সালে মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু পাওয়া হয়নি একবারও। আরেকবার মনোনীত হন ১৯৪৮ সালে, কিন্তু সেই বছরেরই জানুয়ারিতে তিনি মারা যান। পরে ওই বছর নোবেল শান্তি পুরষ্কার কাউকেই দেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি বলেছিল, পুরষ্কার দেয়ার মত যোগ্য কাউকে জীবিত খুঁজে পাওয়া যায়নি। গান্ধীজী পুরষ্কারটি না পাওয়ায় নোবেল কমিটি আফসোস করেছে বেশ কয়েকবার। নোবেল যেহেতু মরণোত্তর হিসেবে দেয়া হয়না, তাই আর নোবেল পাওয়া হয়নি কখনো তাঁর।
- ৪ টি মহাদেশের ১২ টি দেশে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর হাত ধরে।
- গান্ধীজীর শবযাত্রার মিছিল প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছিল।
- গান্ধীজী তাঁর জীবনের ৪০ বছর ধরে প্রতিদিন প্রায় ১৮ কিলোমিটার করে হেঁটেছেন, যা পুরো পৃথিবীকে প্রায় দুইবার প্রদক্ষিণ করার সমান।
- মৃত্যুর একদিন আগেও কংগ্রেস ভেঙ্গে দেয়ার ব্যাপারে ভাবছিলেন গান্ধীজী!
- স্টিভ জবস মহাত্মা গান্ধীর বড় ভক্ত ছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর প্রতি সম্মানস্বরূপ তিনি গোল ফ্রেমের চশমা পরিধান করতেন।
- গান্ধীজী ইংরেজি বলতেন আইরিশ উচ্চারণে, কারণ তাঁর শুরুর দিককার একজন শিক্ষক ছিলেন আইরিশ।
- টলস্টয়, আইনস্টাইন, হিটলার সহ অনেকের সাথেই যোগাযোগ ছিল তাঁর। এমনকি হিটলারকে লেখা এক চিঠিতে তাকে ‘ডিয়ার ফ্রেন্ড’ বলেও সম্বোধন করেছিলেন গান্ধীজী।
- ডারবান, প্রিটোরিয়া ও জোহানেসবার্গে তিনটি ফুটবল টিম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গান্ধীজী, সবকয়টারই নাম দিয়েছিলেন ‘প্যাসিভ রেসিস্টার্স সকার ক্লাব’।
- স্বাধীনতা ঘোষণার সময় তিনি দিল্লীতে ছিলেন না, তাই সেটি উদযাপনও করেননি। তিনি তখন বাংলায় দাঙ্গা ঠেকানোর কর্মসূচীর অংশ হিসেবে অনশন কর্মসূচি পালন করছিলেন।
- করমচাঁদ গান্ধী ও পুটলিবাইয়ের চতুর্থ সন্তান মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী স্কুলে সহপাঠীদের সাথে খুব একটা মিশতে পারতেন না। স্কুলে তাঁর ডাকনাম ছিল মণিয়া।
- তাঁর মৃত্যুর ২১ বছর পর তাঁকে সম্মান জানিয়ে গ্রেট ব্রিটেন সরকার গান্ধীজীর ছবি সহ একটি স্মারক ডাক প্রকাশ করে।
- ১৮৮২ সালে ১৩ বছর বয়সে তাঁর চেয়ে ১ বছরের বড় কস্তূর্বার সাথে বিয়ে হয় গান্ধীর। প্রথম প্রথম স্ত্রীর সাথে বনিবনা হত না তাঁর, কিন্তু পরবর্তীতে দাম্পত্য সমস্যা মিটে যায় তাদের। তিন বছর পরে তাদের প্রথম সন্তান জন্ম নেয়, কিন্তু বেশিদিন জীবিত থাকেনি। এই ঘটনা গান্ধীজীর মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই ঘটনাই তাঁকে পরবর্তীতে উদ্বুদ্ধ করে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে।
- ‘টাইম পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ খেতাব পাওয়া একমাত্র ভারতীয় মহাত্মা গান্ধী।
- সাউথ আফ্রিকায় তাঁর অবস্থানের শুরুর দিকে গান্ধীজী ব্রিটিশ আর্মিতে স্ট্রেচার বহনকারী হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন।
- সাউথ আফ্রিকার নাটালে দাদা আব্দুল্লাহ ও কোম্পানির আইনজীবী হিসেবে গান্ধীজীর বেতন ছিল সেই সময়ের ১৫ হাজার ডলার, বর্তমান সময়ে হিসাব করলে যা দাঁড়ায় ১২ লাখ টাকার উপরে। গান্ধীজী অনায়াসে সেই সময়ের শীর্ষ ৫ ধনী ভারতীয়ের তালিকায় চলে আসতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভারতে সত্যাগ্রহী হিসেবে কাজ করতে ফেরত আসেন।
- গান্ধীজীর নামের সমার্থক হয়ে গেছে যেই ‘মহাত্মা’ পদবিটি, সেটি তাঁকে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯১৫ সালে শান্তিনিকেতনে ভ্রমণের সময় গান্ধীজী রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’ বলে সম্বোধন করেন। জবাবে কবিগুরু বলেন, ‘আমি যদি গুরুদেব হই, তাহলে আপনি মহাত্মা।’ এরপর থেকেই মহাত্মা গান্ধী নাম পরিচিত হয়।
- ভারতে ৫৩ টি প্রধান রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে। শুধু তাই নয়, বাইরের দেশেও তাঁর নামে রাস্তা আছে ৪৮ টি।
- দীর্ঘ ৪০ বছরের সংগ্রামকালে গান্ধীজী প্রতিদিন প্রায় ৭০০ শব্দ করে লিখেছেন, সব একত্রে হিসাব করলে যেই সংখ্যা ১০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।
- গান্ধীজীকে যে ‘জাতির পিতা’ বলে ডাকা হয়, সেই পদবী তাঁকে দিয়েছিলেন নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোস। ১৯৪৪ সালের ০৬ জুলাই এই খেতাব দেন নেতাজী।