ভিনগ্রহবাসীর অস্তিত্ব
নাহ! এবারেও এল না কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। হতাশ হতেই হলো ভিনগ্রহবাসীর খোঁজে চাতকের মতো যুঝতে থাকা শিকারীদের। কীভাবে? তা বরং আপনাদের খুলেই বলি।
২০০৩ সালে চিলির আতাকামা মরুভূমিতে পাওয়া গেল রহস্যময় একটি কঙ্কাল। হাতের তালুতেই জায়গা হয়ে যাওয়া এই কঙ্কাল নিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে সন্দেহের কোনো শেষ ছিল না। তবে কি সত্যিই পাওয়া গেল মর্ত্যের বুকে ভিনগ্রহবাসীর খোঁজ? মানুষের মুখমণ্ডলের সাথে কোনো ধরনের সাদৃশ্য না থাকার কারণে এটি নিয়ে চলছিল নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা।
২০১৩ সালে এসে বিজ্ঞানীরা আরো কিছু গবেষণা করা শুরু করলেন। একটা ফলাফল হাতে এসে গেল কিন্তু চূড়ান্ত ঘোষণা দেবার আগে আরও কিছুটা সময় হাতে রাখলেন তারা। অতিরিক্ত আরো পাঁচ বছরের গবেষণায় ২০১৮ সালে এসে বিজ্ঞানীরা বলছেন এটি কোনো ভিনগ্রহবাসীর কঙ্কাল নয়; বরং এটি মানুষেরই বিবর্তিত কঙ্কাল। নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং কার্বন ডেটিং’র মাধ্যমে জানা গিয়েছে এটি চিলিয়ান কোনো নারীর কঙ্কাল এবং আবহাওয়াজনিত ও স্বাস্থ্যজনিত নানা ধরনের সমস্যা হবার কারণে তার কঙ্কাল এরুপ হয়ে গিয়েছে। এমনকি জেনেটিক রিফর্মেশনের কারণে শরীরের হাড় হয়ে গিয়েছে ছোট এবং অপরিণত; যার কারণে বর্তমান মানুষের শারীরিক আকৃতির সাথে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
যদিও কঙ্কালের আকৃতি দেখে বিজ্ঞানীরা বলেছেন এটি ২২ সপ্তাহের একটি ফিটাসের গঠনের মতো, কিন্তু কার্বন ডেটিং করে তারা বলেছেন অন্তত এই কঙ্কালের বয়স ৬-৮ বছরের একটি শিশুর, সাথে ছিল নানা ধরনের শারীরিক অসঙ্গতি। এক্স রে, কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি স্ক্যান, ডিএনএ সিকুয়েন্সিং ইত্যাদি মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে এটি একটি মানব ফিটাস (ভ্রূণ)।
দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এটি একটি মানবকঙ্কাল কিন্তু বিজ্ঞানীরা ছিলেন বদ্ধপরিকর। তারা বক্তব্যে বলেছেন যে নানা ধরনের প্রতিকূলতা ছিল পরীক্ষাটি করতে গিয়ে। কারণ, এমন কোনো নমুনা এর আগে তাদের কাছে আসেনি। এছাড়াও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা কোনো সভ্যতা থেকে পাওয়া যায়নি কঙ্কালটি। সামাজিক, পারিপার্শ্বিক, আবহাওয়াগত নানা ধরনের সমস্যা পাওয়া গিয়েছিল একইসাথে। চিলিয়ান সংস্কৃতির সাথেও পরিচিত হতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। তবে শিশুদের ভ্রূণ ও তাদের শারীরিক আকৃতি মাতৃজঠর থেকে বেরিয়ে এসে কেমন আকৃতি ধারণ করে, সেটির ওপর ফোকাস করেই বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ গবেষণাটি করেছেন। ফলাফল তো জানতেই পারছেন!
তবে একটি বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন তারা। আর তা হচ্ছে, জৈবিক নানা ধরনের ডিফর্মিটির (খুঁত) কারণে কঙ্কালের মাঝে নানা ধরনের সমস্যা ও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। খুলির সম্মুখভাগে সমস্যা থাকবার কারণে ফিটাসের আকৃতি এমন চোখা হয়েছে, যা সাধারণ মানব খুলি থেকে হয়েছে আলাদা। গবেষণার প্রাক্কালে খুলির রিব থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখান থেকে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে ১২ জোড়াই মানুষের ডিএনএর সাথে মিলে যায়। তাই এটি ভিনগ্রহের প্রাণীর কঙ্কাল কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ করা নিতান্তই অমূলক বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে যাই হোক, বিজ্ঞানীদের এই ফলাফলে আর যাই হোক, ভিনগ্রহবাসীর অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে আছে বা ছিল, এমন তত্ত্বে বিশ্বাসীরা খুশি হতে পারেননি; বরং বেশ হতাশ হয়েছেন বলেই ধারণা করা যায়। তাদের শক্ত একটি যুক্তির আধার ছিল এই কঙ্কালটি। সেটি বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে যখন আর ধোপে টেকে না, তখন একটু হতাশ হতেই হয় বৈকি!
আরো কিছু উদাহরণঃ
এরকম আরো কিছু কঙ্কালের খোঁজ আগেও পাওয়া গিয়েছে, যেগুলো ভিনগ্রহবাসীর প্রমাণ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছিল কিন্তু পরীক্ষায় উল্টো ফলাফল এসেছে। ১৯৯৯ সালে মেক্সিকোতে ১০০০ বয়সেরও বেশি ১৩টি মানবকঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল। এদের বেশিরভাগই ছিল শিশু। খুলিগুলো ছিল লম্বাটে ও পেছন দিকে সরু। সাধারণ সাইন্স ফিকশন কিংবা এই জনরার ছবিগুলোতে আমরা যেমনটা দেখে থাকি। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে সেটিও প্রমাণ করে দিয়েছেন যে প্রকৃতির নানা ধরনের পরিবর্তন ও আবহাওয়াজনিত কারণে মানব খুলিগুলোর এমন পরিবর্তন কালের বিবর্তনে সংঘটিত হয়েছে।
(সূত্রঃ লাইভ সাইন্স)