পশ্চিমারা টয়লেটে বসেও বই পড়ে, প্রাচ্যের লোকজন শুয়ে-বসে বই পড়তেই বেশি পছন্দ করে। পছন্দ-অপছন্দের কথা উহ্য রেখেও বইপ্রেমিদের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করতে বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে লাইব্রেরি। বাংলাদেশের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, পিবিএস, বাংলা অ্যাকাডেমি, বেঙ্গল কিংবা মোঘল সাম্রাজ্যের আদলে তৈরি বাতিঘরের প্রতি তাই পাঠকদের আকর্ষণ অনেক বেশি। শুধু বইয়ের দোকান হিসেবেই নয়, স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকেও পৃথিবীতে অনন্য হয়ে আছে এমন কিছু বুকশপের কথা থাকছে আজকের আয়োজনে। এই মুহূর্তে সশরীরে সেখানে উপস্থিত হতে না পারলেও অন্তত ছবি দেখে, তথ্য জেনে তো কিছুটা পরিচিত হওয়া যাক তাদের সাথে!
১.লিভারেরিয়া লেল্লো, পর্তুগাল
জে কে রোলিংয়ের প্রিয় বইয়ের দোকান এটি। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বইয়ের দোকানগুলোর কথা বলতে গেলে সবার আগে আসে পর্তুগালের পোর্তো শহরে অবস্থিত ‘লিভারেরিয়া লেল্লো’র কথা। অনন্য সুন্দর এই বইয়ের দোকানটিতে প্রবেশ করলে আপনার মনে হবে কোনো এক জাদুর মায়া রাজ্যে প্রবেশ করেছেন আপনি। সুন্দর নকশাকৃত কাঁচের রঙিন জানালা এবং কাঠের তৈরি প্যাঁচানো সিঁড়ির জন্য বিখ্যাত এই বইয়ের দোকানটি।
২. ঝংশুগে, চায়না
চায়না শহরের উত্তরে অবস্থিত এই আধুনিক বইয়ের দোকানটি অসংখ্য কলাম আর সারিতে বিভক্ত। বাচ্চাদের জন্য এত সুন্দর বইয়ের দোকান আর একটিও নেই বলে দাবী করেন ঝংশুগে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ।
৩. কুক অ্যান্ড বুক, ব্রাসেলস
ছাদ থেকে ঝুলছে থরে থরে বই! চিন্তা করে দেখুন তো, কী অদ্ভুত সুন্দর হবে সেই দৃশ্য। শুধু ঝুলন্ত বইই নয়, কাঁচের দেয়ালে আটকে রাখা রেলওয়ে ম্যাপ, সব ধরনের পাঠকের কথা বিবেচনা করে সাজানো বইয়ের তালিকা- সব মিলিয়ে ডিজনি মুভির সেট হিসেবে দিব্যি চালিয়ে দেয়া যাবে কুক অ্যান্ড বুক দোকানটিকে।
৪. লিভারেরিয়া দা ভিলা, ব্রাজিল
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক দোকান তৈরিতে ব্রাজিলিয়ানদের দক্ষতার কথা সর্বজন বিদিত। তবে লাইব্রেরি হিসেবে লিভারেরিয়া দা ভিলা নির্মাণে তারা যে আন্তরিকতা আর সৌন্দর্যবোধের পরিচয় দিয়েছে, তাতে বোধ করি পরবর্তীতে শৈল্পিক জ্ঞানসম্পন্ন জাতি হিসেবেও তাদের শুরুর দিকে স্থান দেয়া হবে।
৫. দ্য বুক ওয়ার্ম, বেইজিং
দ্য বুক ওয়ার্ম নামের দৃষ্টিনন্দন ও অনন্য সুন্দর এই বইয়ের দোকানটিতে রয়েছে ষোল হাজারেও বেশি বই। চমৎকার আভ্যন্তরীণ কারুকার্যময় এই বইয়ের দোকানটির সাথেই রয়েছে একটি ছোট্ট রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে। নতুন-পুরাতন বই কেনাবেচার পাশাপাশি নানারকম অনুষ্ঠানও হয় এখানে। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, কোনো নতুন সিনেমার প্রথম শো, বিভিন্ন সাহিত্যানুষ্ঠান প্রভৃতি লেগে থাকে এখানে।
৬. লিভারেরিয়া লার দেভাগার, লিসবন
সামনে বইয়ের পাতা খুলে কফি খেতে খেতে উপরের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দেখতে পেলেন সাইকেল নিয়ে উড়ে যাচ্ছে শুভ্র এক পরী। বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যেতে সে যেন ডাকছে আপনাকে। জ্বী, পর্তুগালের লিসবনে দেখা মিলবে কল্পলোকের বাস্তব এই নিদর্শনের।
৭. আতেনিও গ্র্যান্ড স্প্লেন্ডিড, আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারসে অবস্থিত আতেনিও গ্র্যান্ড স্প্লেন্ডিড বুকশপটি পৃথিবীর একমাত্র বুকশপ যা থিয়েটারের আদলে নির্মিত হয়েছে। থিয়েটারের মতো ব্যালকনি থেকে শুরু করে ভেলভেটের পর্দা- কী নেই সেখানে? মঞ্চটিকে বদলে দেয়া হয়েছে রেস্টুরেন্ট হিসেবে। সাথে রয়েছে অর্কেস্ট্রা আর পিয়ানোর হালকা সঙ্গীতও। তবে লাইব্রেরির অংশটুকুর মতো এমন নীরবতা বিশ্বের আর খুব কম জায়গাতেই পাওয়া যাবে।
৮. শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোং, প্যারিস
বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের দোকান শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানি অবস্থিত প্যারিসে। নটরডেম গির্জা থেকে এক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে স্যান নদীর তীরে এর অবস্থান। শিল্প সাহিত্য আর সংস্কৃতির লীলাভূমি প্যারিসে অবস্থিত এই বইয়ের দোকানটির সাথে জড়িয়ে আছে অনেক বিখ্যাত মানুষের নাম। জেমস জয়েস, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে সহ ইংরেজি সাহিত্যের অনেক বিখ্যাত সব লেখকরা এখানে একসময় আসতেন আড্ডা দিতে। জর্জ হুইটম্যান নামক এক আমেরিকান ভদ্রলোক প্রতিষ্ঠা করেন এই বইয়ের দোকানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খুব দ্রুত বইয়ের দোকান থেকে বিনামূল্যে বই ধার দেবার ও কফি পানের জনপ্রিয় আসর হয়ে উঠে এটি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখানে আসতে থাকেন নানা তরুণ লেখকেরা। এদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে সাহিত্যে পান নোবেল পুরষ্কার।
৯. লাইব্রেরিয়া এল পান্দুলো, মেক্সিকো সিটি
মানের সাথে বিন্দুমাত্র আপোষ না করেও যে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে দারুণ সমন্বয় করা সম্ভব, তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ এই বুকশপটি। মেক্সিকোর এই লাইব্রেরিটি বাগানে বসে বই পড়া, কফি আর হালকা নাস্তা খাওয়ার আমেজ এনে দিতে পারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীভাবে কেটে যাবে, টেরও পাবেন না আপনি!
১০. বার্ট’স বুকস্টোর, ক্যালিফোর্নিয়া
নিজের বিশাল বইয়ের সংগ্রহ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৬৪ সালে রিচার্ড বার্টিন্সডেল নামের এক ভদ্রলোক ক্যালিফোর্নিয়ার এক রাস্তার ধারে খুলে বসেন বইয়ের দোকান। সেই বইয়ের দোকানটিই আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় আউটডোর বইয়ের দোকানে পরিণত হয়েছে। এই বইয়ের দোকানটিতে রয়েছে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত পরিবেশে বই পড়ার সুযোগ। রাস্তার পাশেই অবস্থিত এই বইয়ের দোকানটি থেকে আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের বই। পড়তে পারেন পাশের সবুজ প্রাঙ্গণের কোনো আপেল গাছের নিচে বসে। দিন-রাত প্রায় ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে এই দোকানটি।