জোয়াকিম লো বোধহয় মনে মনে ভাবছেন, কি দরকার ছিল গত বছর রাশিয়া থেকে কনফেডারেশন্স কাপটা জিতে ফেরার! কি, বুঝতে পারছেন না? শিরোপা জিতেও কেউ কেন আফসোস করবে, তাই ভাবছেন তো? বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য জানাশোনা থাকলেও বুঝে যাওয়ার কথা, কনফেডারেশন্স কাপ জিতেও আফসোস করলে কেন দোষ দেয়া যাবে না কাউকে।
কনফেডারেশন্স কাপ আর বিশ্বকাপ- দুটোর মধ্যে যেন আজন্ম শত্রুতা। কাকতালীয়ই হোক আর যা ই হোক, আজ পর্যন্ত কনফেডারেশন্স কাপের শিরোপা জেতার ঠিক পরের বিশ্বকাপটি জিততে পারেনি কোন দলই। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলো জার্মানিও। বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের প্রস্তুতি যাচাই করে নেয়ার জন্য বিশ্বকাপের ঠিক আগের বছর স্বাগতিক দেশে বসে কনফেডারেশন্স কাপ। বিভিন্ন মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নেরা ও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশ অংশ নেয় সেই টুর্নামেন্টে। গত বছর রাশিয়ায় হয়ে যাওয়া কনফেডারেশন্স কাপে অনেকটা দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েও শিরোপা জিতেই দেশে ফিরেছিল জার্মানি। সেটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো লোয়ের জন্য। চলুন দেখে নেয়া যাক কনফেডারেশন্স কাপ জয়ের পর সেই দলের বিশ্বকাপ জিততে না পারার অতীত ঘটনাগুলো।
কনফেড কাপ ১৯৯২; বিশ্বকাপ ১৯৯৪
কনফেড কাপের প্রথম আসর বসে ১৯৯২ সালে, সৌদি আরবে। প্রথমবারই শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা, তাও আবার ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে ছাড়াই। কিন্তু দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের দলে ফিরলেও দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি ম্যারাডোনা। শেষ ষোলোতে রোমানিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ’৮৬ এর চ্যাম্পিয়নেরা।
কনফেড কাপ ১৯৯৫/৯৭; বিশ্বকাপ ১৯৯৮
মাঝে ১০ বছরের জন্য দুই বিশ্বকাপের মাঝে দুটি করে কনফেড কাপ আয়োজন করে ফিফা। ১৯৯৫ তে জেতে ডেনমার্ক, আর ১৯৯৭ তে জেতে ব্রাজিল। দুটি দলের কোনটিই ’৯৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ব্রাজিল তাও ফাইনাল অব্দি পৌঁছেছিল, ডেনমার্ক বাদ পড়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালেই। তাও এই ব্রাজিলের কাছেই ৩-২ গোলে হেরে।
কনফেড কাপ ১৯৯৯/২০০১; বিশ্বকাপ ২০০২
১৯৯৯ তে কনফেড কাপের আসর বসে মেক্সিকোতে, ঘরের মাঠে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নেয় স্বাগতিকেরা। শিরোপা জেতার পথে সেমিফাইনালে যুক্তরাষ্ট্র ও ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়েছিল তারা। আর দুই বছর পরে জাপানের ইয়োকোহামাতে স্বাগতিক জাপানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ফ্রান্স। ২০০২ বিশ্বকাপে শিরোপা জিততে পারেনি কোন দলই, ফ্রান্স তো বিদায় নিয়েছিল প্রথম পর্ব থেকেই।
কনফেড কাপ ২০০৩/০৫; বিশ্বকাপ ২০০৬
২০০৩ সালে কনফেড কাপের স্বাগতিক ছিল ফ্রান্স। ফাইনালে থিয়েরি অঁরির গোল্ডেন গোলে ক্যামেরুনকে হারিয়ে শিরোপাও জেতে তারা। দুই বছর পরের আসরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে ব্রাজিল। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই দল। থিয়েরি অঁরির একমাত্র গোলে বাড়ির পথ ধরে ব্রাজিল। ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি ফ্রান্স, হারতে হয়েছিল ইতালির কাছে।
কনফেড কাপ ২০০৯; বিশ্বকাপ ২০১০
২০০৯ তেও কনফেড কাপের চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল, যার ফল ধরে ২০১০ বিশ্বকাপেও শিরোপা বঞ্চিত থাকতে হয় তাদের। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও ২-১ গোলে হারতে হয় তাদের।
কনফেড কাপ ২০১৩; বিশ্বকাপ ২০১৪
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে ব্রাজিলে কনফেড কাপ খেলতে এসেছিল স্পেন। দারুণ খেলে উঠে গিয়েছি টুর্নামেন্টের ফাইনালেও। কিন্তু নেইমারের ব্রাজিলের কাছে হারতে হয় ৩-০ গোলে। ঘরের মাঠে এক বছর পরে বিশ্বকাপের শিরোপাটা আর জেতা হয়নি ব্রাজিলের, সেমিফাইনালে হেরেছিল জার্মানির কাছে।
কনফেড কাপ ২০১৭; বিশ্বকাপ ২০১৮
গত বছর প্রায় দ্বিতীয় সারির এক দল পাঠিয়েছিল জার্মানি, সেই দলই চিলিকে হারিয়ে কনফেড কাপ জিতে দেশে ফেরে। আর এই বিশ্বকাপে জার্মানির সাথে কি হলো, তা তো সবাই জানেনই!