আগের দিনই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টাইন ফ্যানদের ইচ্ছেমত ট্রল করেছেন। কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে আজ ব্রাজিল ভক্তরা কি তাই একটু হলেও ভয় পেয়ে যাননি? টানা দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারালে তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্নও যে বড় ধাক্কা খেত!
না, ধাক্কা খেতে হয়নি ব্রাজিলকে। বলা চলে, ধাক্কা খেতে দেননি একজন, ফিলিপে কুটিনহো। আগের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করা কুটিনহোই আজ মুখ রেখেছেন ব্রাজিলের। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে যখন গোলশূন্য ড্রয়ের আশঙ্কা ব্রাজিল শিবিরে, ঠিক তখনই গ্যাব্রিয়েল জেসুসের পাস থেকে কোস্টারিকা গোলকিপার কেইলর নাভাসের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালে। নেইমারের গোল এসেছে একেবারে শেষ মুহূর্তে বাড়তি আনন্দের খোরাক হয়ে, তবে ব্রাজিলের জয়ের নায়ক এদিক কুটিনহোই। ম্যান অফ দ্য ম্যাচও তাই তিনিই।
অথচ গোল পাওয়া ছাড়া নির্ধারিত সময়ে আর সবই করেছে ব্রাজিল। আগের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে ম্রিয়মাণ লাগলেও এদিন প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই নিজেদের ফুটবল শৈলীর প্রদর্শনী দেখিয়েছে ব্রাজিল। একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে উঠেছিল কোস্টারিকা রক্ষণভাগ। প্রতিবারই তাদের ত্রাতা হয়ে এসেছেন গোলকিপার কেইলর নাভাস। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচটাই বোধহয় আজ খেলেছেন নাভাস। নেইমার-জেসুসদের কম করে হলেও পাঁচ থেকে ছয়টি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া ভাগ্যও কিছুটা বিমুখ ছিল ব্রাজিলের উপর। না হলে জেসুসের শট কেন বারে লেগে ফিরবে? কেন একবার পেনাল্টি পেয়েও ভিএআরের সহায়তায় সেটি বাতিল হবে? কিন্তু ভাগ্য তো শেষ পর্যন্ত বীরপুরুষদের পক্ষেই থাকে! শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলের সুবাদেই তাই পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তিতের দল।
এই জয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেলো ব্রাজিল। আর টানা দুই পরাজয়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলো কোস্টারিকার।
পরিসংখ্যানের আলোকে ব্রাজিলের জয়:
- ৯০ মিনিটের গোলে বিশ্বকাপে এই প্রথম জয় পেলো ব্রাজিল।
- সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে কোস্টারিকার বিপক্ষে শেষ ১১ ম্যাচের ১০ টিই জিতলো ব্রাজিল। কোস্টারিকার একমাত্র জয়টি এসেছিল সেই ১৯৬০ সালে, এক প্রীতি ম্যাচে।
- বিশ্বকাপে টানা পাঁচ ম্যাচ ধরে জয়হীন কোস্টারিকা। গত বিশ্বকাপের শেষ তিন ম্যাচ ড্র করার পর এই বিশ্বকাপে হেরেছে টানা দুই ম্যাচ।
- পুরো ম্যাচে গোলমুখে মাত্র তিনটি শট নিতে পেরেছে কোস্টারিকা। সেগুলোও আবার ম্যাচ শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যে। বাকি ৭৫ মিনিটে গোলমুখে আর একটিও শট নিতে পারেনি দলটি।
- ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলটি এসেছে ৯৬ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর এত দেরিতে আর কোন গোল দেখেনি বিশ্বকাপ।
- এই নিয়ে তিতের অধীনে টানা ১৩ ম্যাচে হারের মুখ দেখেনি ব্রাজিল। জিতেছে ৯ টিতে, আর ড্র করেছে ৪ টি। এই ১৩ ম্যাচে ব্রাজিল গোল খেয়েছে মাত্র ৩ টি।
- এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ১৪ বার ফাউল করা হয়েছে নেইমারকে, যা কি না অন্য যেকোনো ফুটবলারের চেয়ে বেশি।
- ব্রাজিলের হয়ে খেলা শেষ ১৭ ম্যাচে ১৮ টি গোলে সরাসরি অবদান রেখেছেন নেইমার। গোল করেছেন ১০ টি, আর অ্যাসিস্ট করেছেন ৮ টি।
- ব্রাজিলের হয়ে শেষ চার ম্যাচে তিন গোল ও এক অ্যাসিস্ট করলেন কুটিনহো।
- পুরো ম্যাচে ৭২ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল ব্রাজিল। কোস্টারিকার গোলমুখে অন টার্গেট শট ১০ টি, অপরদিকে কোস্টারিকার কোন অন টার্গেট শট ও নেই।
- ম্যাচে দুই দলই সমান ১১ টি করে ফাউল করেছে। ব্রাজিল কর্ণার পেয়েছে ৯ টি, বিপরীতে কোস্টারিকা পেয়েছে মাত্র ১ টি।