১৯৭২ সালে গণবিজ্ঞানী স্যার এল্টন জন হঠাত করেই বলে বসেন যে মঙ্গল গ্রহ এমন কোনো গ্রহ নয় যেখানে সন্তান লালন-পালন করা যায়। প্রশ্ন হলো, বিজ্ঞানী হঠাত করেই কেন এমন একটি কথা বলে বসলেন? তৎকালীন সময়ে মঙ্গল গ্রহ নয়, মহাশূন্যের তাবৎ কিছু নিয়েই বেশ একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল। সাইন্স ফিকশন বই, চলচ্চিত্র ইত্যাদি সবকিছুতেই এমন একটি ধুন্ধুমার কাণ্ড দেখা যেত যে মানুষ খুব কৌতূহলী হয়ে উঠত আমাদের জানা অজানার এই পৃথিবীর বাইরেও আর কী কী জানার আছে, তা জানার জন্য।
জনের এই কথাটি তৎকালীন সময়ে হালে খুব একটা পানি না পেলেও কথাটি কিন্তু মিথ্যে নয়। মঙ্গল গ্রহ আসলেই বসবাসের উপযোগী নয় এবং সেখানে যদি জনবসতি গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করা হয়, তাহলে সেটি নেহাত বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এর তাআপমাত্রা খুবই ঠান্ডা, মাধ্যাকর্ষনজনিত ত্বরণ খুবই কম বিধায় সেখানে জনবসতি গড়ে তুলবার জন্য ভালো ব্যবস্থা নেই। জার্নাল ফিউচারে প্রকাশিত একটি তথ্যমতে এটিও বলা হয়েছে যে মঙ্গল গ্রহে গর্ভবতী হয়ে ওঠা খুবই কঠিন একটি ব্যাপার। মঙ্গল গ্রহে গর্ভবতী হয়ে ওঠার ব্যাপারটি কারও কারও কাছে বেশ হাস্যকর বলে মনে হতে পারে কিন্তু এলন মাস্কের স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠানটি এমন কিছু কাজ করছে যেখানে মঙ্গল গ্রহে গিয়ে মানুষকে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
ব্রাজিলের একটি গবেষক দলের সদস্য বলেছেন যে মঙ্গল গ্রহে সংসার বৃদ্ধি করবার জন্য এবং মানব বসতির বিস্তার ঘটাবার জন্য বংশবৃদ্ধি করা জরুরী। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্যি, এটি এই প্রজন্মের জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাদের প্রকাশিত নতুন গবেষণাপত্রে এটি নিয়েই আলোচনা করেছেন যে মঙ্গল গ্রহে জনবসতি গড়ে তুলবার জন্য কী কী সমস্যা হতে পারে এবং এরজন্য কী কী পরিবর্তন জরুরী।
প্রথম এবং প্রধান চ্যালেঞ্জটিই হচ্ছে শারীরিক। আমাদের শরীর মঙ্গল গ্রহের তাপমাত্রা ও আবহাওয়া সহ্য করতে পারবে কিনা, সেটি খুব বড় একটি বিষয়। মঙ্গল গ্রহের সোলার রেডিয়েশন পৃথিবীর চাইতে বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। তাই এই গ্রহে থাকলে রেডিয়েশনের দরুন ক্যান্সারসহ আরও নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
এছাড়াও মাইক্রোগ্র্যাভিটির বিষয়টিও বেশ চিন্তার উদ্রেক করবার মতো। পৃথিবীর গ্র্যাভিটির চাইতে মঙ্গল গ্রহের গ্র্যাভিটি একতৃতীয়াংশ কম। ফলে দেখা যাচ্ছে যে এখানে যারা বসবাস করবেন, তাদের জন্য হাঁটা চলা করা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। মঙ্গলে যেসব নভোচারীরা যাবেন বা গিয়েছেন, তাদের তথ্য অনুসারে জানা যায় যে এই মাইক্রোগ্র্যাভিটি নানা ধরনের রোগ ও শারীরিক সমস্যার উদ্রেক করে থাকে, যেগুলো ভালো কিছু বয়ে আনে না।
সবচেয়ে চিন্তার উদ্রেক করাবার মতো বিষয় হচ্ছে, মঙ্গল গ্রহে যদি একজন প্রসূতিকে নিয়ে যাওয়া হয় বা সেখানে যদি কেউ গর্ভবতী হয়ে থাকেন, তাহলে তার ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেবে এবং অনাগত সন্তানের জন্য এটি খুবই খারাপ। অনেক ক্ষেত্রে এটিও ঘটতে পারে যে সন্তানটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
(সূত্রঃ লাইভ সাইন্স)