শারীরিক কার্যক্রম শরীর এবং মন, উভয়ের জন্যই বেশ কার্যকরী। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন যে ব্যায়াম করলে চিন্তাভাবনা করবার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক সক্ষমতা ক্ষয়ের প্রভাব অনেকটা কমে যায়, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। তবে মস্তিষ্ক সুস্থ ও সচল রাখবার জন্য ঠিক কতটুকু ব্যায়াম করা প্রয়োজন?
নিউরোলজি ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস নামক একটি জার্নালে বলা হয়েছে যে কোনো শারীরিক ব্যায়াম যতক্ষণ পর্যন্ত চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়, সেটিই মস্তিষ্ককে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। হাঁটা, দৌড়ানো, ভারোত্তোলন, যোগ ব্যায়াম কিংবা টাইচি ইত্যাদি শারীরিক কসরতগুলো যদি সপ্তাহে ৫২ ঘণ্টা চালিয়ে নেয়া যায় তাহলে চিন্তার আর কোনো কারণ নেই। তবে বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন যে এই কসরতগুলো করবার জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা সময়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
গবেষণার প্রধান গবেষক জয়েস গোমেজ-ওসমান বলেন, “এই ৫২ ঘণ্টার শারীরিক কসরতের সময়টি যদি আপনি করতে পারেন, তাহলে সেটি খুব ভালো প্রভাব রাখবে। দিনে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে যা তারচেয়ে বেশি, এমন কোনো কথা নেই। আপনি আস্তে আস্তে শুরু করুন। তবে মনে রাখতে হবে কসরতগুলো যেন থেমে না যায়। প্রতি সপ্তাহে কসরতগুলো করতে করতে একসময় আপনি দেখবেন যে ৫২ ঘণ্টার এই পয়েন্টটি আপনি অতিক্রম করতে পেরেছেন। চেষ্টা করতে করতে মাসের কোটা পেরিয়ে যাবার পর দেখা যাবে যে ব্যক্তিটি যে কোনো সময়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের শরীরকে সুস্থ ও সমর্থ রাখতে পারছে।”
গোমেজ সাথে একথাও বলেন যে যোগ ব্যায়াম ও টাইচির মতো ব্যায়াম সম্পন্ন করতে পারলে মস্তিষ্কের সক্ষমতাকে একটি ভীষণ মাত্রায় পৌঁছে দেয়া যায় এবং শারীরিক ও মানসিক- উভয় উন্নতির জন্যই এটি অনেক জরুরী। গবেষণাটি করা হয় প্রায় ১১ হাজার অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে যাদের গড় বয়স ছিল ৭৩। এই প্রতিযোগীদের নেয়া হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে তাদের মাঝে একটি জিনিসের মিল রয়েছে। আর তা হচ্ছে এরা সবাই সপ্তাহে ৫২ ঘণ্টা করে শারীরিক কসরত করবার সীমরেখাটি বেশ ভালোভাবে অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছেন।
একজন নিউরোবিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও গোমেজ তার রোগীদের প্রেসক্রিপশনে ব্যায়াম করবার কথাটি যোগ করতে কখনও ভোলেন না। এমনকি মনের সাথে মস্তিষ্কের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, এটি তিনি বেশ ভালোভাবেই স্বীকার করেন। তার ইচ্ছা মানুষকে ব্যায়াম করাবার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়া, যাতে তারা আরও বেশিদিন বাঁচে এবং একটি সুখী সুস্থ সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারে। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে খুব বেশি দেরি নেই বলে তিনি বেশ আশাবাদী।
চিন্তাভাবনা সঠিক করবার জন্য ও মনকে প্রফুল্ল রাখবার জন্য বিজ্ঞানীরা মাঝেমাঝেই এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে “আরও কার্যকর হতে হবে”- এই কার্যকর হবার মানে হচ্ছে শারীরিকভাবে ও মানসিক, উভয়ভাবেই একজন ব্যক্তিকে কার্যকর হতে হবে। দেহের সাথে মনের যেহেতু একটু প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে, তাই দেখা যায় যে শরীর যদি ভালো থাকে তাহলে মনও ভালো থাকে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কতটকু এবং কত ঘণ্টা ব্যায়াম করা প্রয়োজন আমাদের?
বিজ্ঞানীরা বলছেন শারীরিক কসরত ছাড়াও কিছু আনুষঙ্গিক জিনিস আমাদের যোগ করতে হবে-
১) মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, এমন কিছু কাজ করতে হবে। যেমন গণিত সমাধান করা, পাজল সমাধান করা ইত্যাদি।
২) মাত্রাতিরিক্ত টেলিভেশন দেখা শরীর ও মন উভয়ের জন্যই খারাপ। এটি পরিহার করতে বলেছেন বিজ্ঞানীরা।
৩) বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন যে মানুষের সাথে মেশার স্বভাব অর্থাৎ, সোশ্যালাইজিং করবার স্বভাব মনকে প্রফুল্ল রাখতে বেশ সাহায্য করে।
৪) দিনের শুরুতে হালকা ব্যায়াম করে নিলে সারাদিন শরীর ও মন- দুটোই বেশ প্রফুল্ল থাকে।
৫) দিনে ছয় ঘণ্টার বেশি ঘুমানোকে পরিহার করতে বলেছেন বিজ্ঞানীরা।
(সূত্রঃ লাইভ সাইন্স)