আমরা কম বেশি সকলেই জানি চাকরি খোঁজার সময়টা কতটা দুরুহ হতে পারে। অনবরত প্রচেষ্টা ও পেতে পেতে না পাওয়া- ‘চাকরি’ নামক এই অধরা সোনার হরিণ অনেক কে করে তোলে অবিশ্বাস্য রকমের হতাশ। কিন্তু হতাশায় নিমজ্জিত কেউ তো চাকরির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে পারবে না। তাই ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় চলে হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই। কেউ গান শোনে, কেউ প্রিয় অনুষ্ঠান দেখে আবার কেউ তার প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্যে খোঁজ করে সঞ্জীবনী ‘আশা’র’। কিন্তু এমন কিছু প্রতিভা রয়েছে যারা স্রোতের বিপরীতে গিয়ে চিন্তা করে ‘Out Of Box’। আর অবাক হলেও সত্য তাদের হুট করে নেওয়া ঝুকিটি পরিণত হয় সর্বোচ্চ সাফল্যে। এমন একটি বাস্তব ঘটনা দিয়েই সাজানো আমার আজকের লেখাটি।
এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম পেজ কেমনা । সম্প্রতি কলেজ গ্র্যাজুয়েট হওয়া এই শিক্ষার্থী তার লিঙ্কড-ইন প্রোফাইলে নিজের জীবন বৃত্তান্ত প্রকাশ করে। কিন্তু এই জীবন বৃত্তান্ত বা সিভি খানিকটা ভিন্ন ধরণের তো বটেই যা আলোড়ন তুলেছে গোটা বিশ্বে। কি ছিল সেই সিভিতে? না তেমন কিছু নয়, পেজ তার জীবন বৃত্তান্ত বলেছেন পিয়ানো বাজিয়ে- গানে গানে, সুরে সুরে। একই সাথে ধারণ করেছেন সেই গানের ভিডিও।
গানটির শিরোনাম “Hire Me”, যা নিমেষে রূপ নেয় ভাইরাল ভিডিওতে। ঘন্টা খানেকের মাঝে পরে ১১০০০ লাইক ও ১০০০ কমেন্টস। এতো সাড়া পেয়ে মুগ্ধ পেজ পরবর্তীতে ধন্যবাদ সূচক আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেন। পেজ বলেন, যখন আমি লিঙ্কডইন পোস্টটি দিয়েছিলাম তখন আমি সন্দিহান ছিলাম- এই গানটি কি কারো মনোযোগ আকর্ষণ করবে? কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর এখন আমি জানি। পেজ এর গানটি যদিও মজা করে গাওয়া, কিন্তু তার কথা ও সুর ছিল আকর্ষণীয়। একই সাথে তার ব্যক্তিত্ব এবং কণ্ঠ ছিল যেন মুগ্ধতার আবেশে ঘেরা। পেজের সাথে কথা বলে জানা যায় গান গাওয়া ছিল আবেগের বসে নেওয়া মুহূর্তের সিদ্ধান্ত ।
“আমি বেশ কয়েকবারই পেশাগত ইন্টারভিউ এর ডাক পেয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম। বার বার ব্যর্থ হবার পর আমার মন একদিন এতো খারাপ ছিল, যে আমি ভাবতে বসি কিভাবে আমি মানুষের মনোযোগ আদায় করতে পারি? তারপর যেন আমার ভিতরে কেমন পরিবর্তন ঘটলো। আমি কফি শপে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম আমি একটি গান লিখবো। আমার বন্ধুরা প্রথমে হেসে উঠলেও পরবর্তীতে তারা আমাকে উৎসাহ দিতে থাকে। আর আজ তাদের উৎসাহে আমি এই মুহূর্তটি উপভোগ করছি। আমি কৃতজ্ঞ তাদের কথা আমি রাখতে পেরেছি।”
কফিশপ থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরে পেজ গানের কথা সাজিয়েছিলেন। গানের লিরিক্স লিখে কিছুসময় পেজ আচ্ছন্নের মত চুপচাপ বসেছিলেন। এরপর দিনের অর্ধেক বেলাই তিনি কাটিয়েছেন আইফোনটিকে একটি গ্লাস কাপে (গানটির জিংগল, পেজ বলেছন, বিলি জোয়েল দ্বারা আধা-অনুপ্রাণিত) বসিয়ে নিজের গানের রেকর্ডিং করে।
তারপর তিনি ফেসবুকে, ইউটিউব, এবং লিঙ্কডইন এ ভিডিওটি আপলোড করেন। এবং যখন তিনি তার ভিডিও ফিড এর ট্রেন্ড দেখতে পান। হেসে তিনি বলে উঠেন তার নিউজফিড থেকে যেন ধোঁয়া উঠছিল লাইক, কমেন্টের বন্যায়।
আমি এই গানটি লিখতে চেয়েছিলাম যেন মানুষকে আমি পরিস্থিতি সম্পর্কে হাসাতে পারি এবং এর সাথে সম্পর্কিৎ করতে পারি। আমি কোন লাইক,কমেন্টস আশা করি নি। কিন্তু মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ আমার ভিডিওটি শেয়ার করে। আমাকে তাদের মনোভাব জানায়। কিভাবে গান টি তাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে সেই গল্পগুলো আমার সাথে শেয়ার করে। সেই শ্বাসরুদ্ধকর উচ্ছ্বাসের মুহূর্ত আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি কখনো কল্পনাও করি নি এমন কিছু আমার দ্বারা সম্ভব। আমি বলে বুঝাতে পারবো নিজের মাজে সম্ভাবনাময় আরেকজনের অস্তিত্ব অনুভবের মুহূর্তটি আমাকে কতটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। আমি আনন্দিত সবাই আমার কাজ পছন্দ করেছে।
এবং এই ভিডিও প্রকাশের পর কর্মসংস্থানের কোন সুযোগ কি পেজ পেয়েছেন ! পেয়েছেন মানে এমন সব সুযোগ পেয়েছেন যা অপ্রকাশ্য। একবার আন্দাজ করুন বড় বড় কর্পোরেট জায়ান্ট গুগল, ফেসবুক, এক্সপিডিয়া পেজে’র ভিডিওতে মন্তব্য করেছে।
পেজ বলেন “আমি যে ফিডব্যাক পেয়েছি তার অনেকগুলোই নিউ ইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছে। এটা আমার কাছে অসম্ভব আনন্দের মুহূর্ত ছিল। আমি ডেনভারে বাস করছি এবং আমি মিসৌরি থেকে এসেছি, তাই যখন এমন কোন জায়গা থেকে প্রতিক্রিয়া আসে যেখানে কখনো যাই নি-তা আমাকে বিস্মিত করে। চাকরি পাবো কিনা বড় বিষয় নয়, আমি মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছি। অনেক মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিয়েছে, পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আমার মাঝে এখন সেই বিশ্বাসের সঞ্চার ঘটেছে যে আমিও আমার কমিউনিটির জন্য কিছু করতে পারি।
অবশ্যই, এই ভিডিও টির কারণে পেজকে অনেকেই তাদের জন্য গান লিখতে অনুরোধ করেছে। পেজ বলেন: ” হ্যাঁ, আমি অবশ্যই গান লিখতে চাই, এবং যা আমাকে এতটা ভালোবাসা দিয়েছে তা আমাকে কখনোই ছেড়ে যাবে না- বলে আমি আশাবাদী।”
পেজের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়? গান গাওয়া ছাড়াও (“এটি সবসময় আমার জন্য স্বপ্ন”), পেজ এখন এমন কিছু নিয়ে কাজ করতে চান যেন তিনি গণ মানুষের কাজে আসেন কারণ অনেক বন্ধ দরজাই এখন তার জন্য খুলে গিয়েছে। পেজ বলেন: “প্রাথমিকভাবে আমি সেলস এবং মার্কেটিং এ চাকরি খুঁজছিলাম, কিন্তু আমি এখন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করতে ইচ্ছুক। এই প্রসঙ্গে আমার সাথে কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারের ও কথা চলছে। আমি সামাজিকতা ও সামনাসামনি কথা বলে জনস্বার্থে কাজ করতে ভালোবাসি। এবং ভবিষ্যতে তেমন ধরণের কাজই আমি করবো।
পেজ নিজের ভবিষ্যতকে বাজী ধরে করেছেন ভিন্ন কিছু, যা তাকে নিয়ে যাচ্ছে সাফল্যের শিখরে। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে আরও বলেনঃ-
অনেক লোক আমার কাছে পৌঁছায়, আমাকে বলার জন্য যে তারা আমার সাহসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। আমি এটাকে সাহস বলে ভাবি নি , আমার কাছে চিন্তাটি মজার ছিল। যারা ভয় পাচ্ছেন নতুন কিছু করতে তাদের বলবো, আপনার কাছে এমন কিছু আছে যা অন্যরা দেখতে চায়, এবং এটি অবশ্যই আপনার চাকরী খোঁজার জন্য উপকৃত হতে পারে এবং আপনি যেসব কোম্পানীর কাজ করেন না তাদের সাহায্য করতে পারে। ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং করা কিন্তু দোষের কিছু নয়।
তাই খুঁজুন নিজের ভিতরের অন্য আমিকে। দেখবেন সাফল্য হয়তো রয়েছে আপনারই অপেক্ষায়।
আজ এই পর্যন্তই। ‘প্রিয়লেখার’-সাথেই থাকুন।