শচীন টেন্ডুলকারের সেরা দুই ওয়ানডে ইনিংসের ইতিবৃত্ত – Creative IT Blog
Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611
Home / ক্রিকেট / শচীন টেন্ডুলকারের সেরা দুই ওয়ানডে ইনিংসের ইতিবৃত্ত

শচীন টেন্ডুলকারের সেরা দুই ওয়ানডে ইনিংসের ইতিবৃত্ত

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে স্মরণীয় ইনিংসের অভাব নেই শচীন টেন্ডুলকারের। কিন্তু তারপরেও সবচেয়ে স্মরণীয় ইনিংসগুলোর তালিকা করতে গেলে একেবারে উপরের দিকেই থাকবে ২০ বছর আগে শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে করা বিধ্বংসী সেঞ্চুরি দুটো। মাসখানেক আগেই শচীন টেন্ডুলকারের জন্মদিন উপলক্ষে অবিস্মরণীয় সেই ইনিংস দুটির স্মৃতিচারণ করলেন টেন্ডুলকার নিজে, তাঁর কয়েকজন সতীর্থ ও প্রতিপক্ষ। দারুণ সেই আলোচনাই থাকছে আজকের আয়োজনে।

১৯৯৮ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে সত্যিকার অর্থেই রানবন্যা ছুটিয়েছিলেন শচীন। নয় সেঞ্চুরিতে ৬৫.৩১ গড়ে রেকর্ড ১৮৯৪ রান করেছিলেন সে বছর। শুধু রান নয়, রান করার ধরনটাও ছিল অসামান্য, বছর শেষে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১০২.১৫! ব্যাট হাতে প্রলয়লীলা তো চালিয়েছিলেনই। বল হাতেও শচীন টেন্ডুলকারের সেরা বছর ছিল ১৯৯৮। ম্যাচ জেতানো ৫ উইকেট সহ বছরে মোট উইকেট পেয়েছিলেন ২৪ টি।

তবে ওয়ানডেতে বছরের শুরুটা ভালো হয়নি তাঁর। ৩৩ ইনিংস ধরে সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে সেঞ্চুরি খরা কাটলো এপ্রিল মাসে কানপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে। মোক্ষম সময়েই ফর্মে ফিরেছিলেন তিনি, দশ দিন বাদেই যে শারজাতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল বার্ষিক কোকা-কোলা কাপ। সেবারের আসরে দল ছিল তিনটি, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।

অস্ট্রেলিয়া সদ্যই এক ত্রিদেশীয় সিরিজে ভারতকে হারিয়ে এসেছে। শারজাতেও লীগ পর্বের ম্যাচে ৩ ম্যাচের ৩ টিতেই জিতে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো অজিরা। ভারতের বিপক্ষে লীগ পর্বের শেষ ম্যাচটা ছিল নিছকই ফাইনালের আগে ওয়ার্ম আপ ম্যাচের মতো। তবে রান রেটের দিক থেকে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য জয়টা বড্ড দরকার ছিল ভারতের, জয় না হলেও অন্তত কম ব্যবধানের হার।

টেন্ডুলকার: এপ্রিল মাসের শারজা মানে ভয়াবহ গরম। আমার মনে আছে, ড্রেসিংরুমে ফিরেই আমি এক বালতি ভর্তি বরফ নিয়ে তাতে পা ডুবিয়ে বসে থাকতাম। এত গরম ছিল, মনে হতো যেন জুতা ভেদ করে পায়ে গরম তাপ লাগছে। লম্বা সময় ধরে ব্যাট করা শারীরিকভাবে খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। আবার দুই ম্যাচের মাঝে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সময়ও মিলতো না। খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক স্কিলের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল ওই শারজা সফর।

ইয়ান চ্যাপেল: ওই সিরিজে আমি টিভি ধারাভাষ্যকার হিসেবে ছিলাম। সাধারণত ওয়ানডে টুর্নামেন্টগুলো এভাবে স্মৃতির পাতায় থাকে না। কিন্তু এই টুর্নামেন্টটা ছিল বিশেষ কিছু। মার্ক মাসক্যারেনহাস আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ফাইনালে কারা উঠবে। আমি বলেছিলাম অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড। তারপর সে গ্রেগ চ্যাপেলের কাছেও একই প্রশ্ন করলো। গ্রেগও একই উত্তর দিয়েছিল। তখন মার্ক বলেছিল, ‘টেন্ডুলকার ভারতকে ফাইনালে ওঠাবে, দেখে নিও তোমরা।’

হৃষীকেশ কানিৎকার, ভারতীয় অলরাউন্ডার: এই টুর্নামেন্টের আগে পর্যন্ত শারজায় বড় বড় টুর্নামেন্টগুলো কেবল টিভিতেই দেখেছি। শারজায় ভারত-পাকিস্তানের এত ম্য্যাচ দেখেছি! এখানে খেলাটা তাই ছিল বিশেষ কিছু।

ফাইনালে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টসে হেরে বল করতে নামলো ভারত। মার্ক ওয়াহর ৮১ আর মাইকেল বেভানের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া তুললো ২৮৪ রান। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার রান ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে, কিন্তু নিখুঁত লেগ ব্রেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বল হাতে অবদান রাখলেন টেন্ডুলকার।

টেন্ডুলকার: ক্যারিয়ারের ওই পর্যায়ে কিন্তু আমি নিয়মিতই বল করতাম। এরকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রুও বেশ কয়েকবার দিয়েছি। মার্ক ওয়াহ আমার লেগ ব্রেকের বিপরীতে খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে গেলো। আর স্টিভকে করেছিলাম রান আউট। উইকেট দুটো ওই সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, নাহলে ওদের রান ৩০০ ছাড়িয়ে যেত।

ম্যাচ জিততে করতে হতো ২৮৫, কিন্তু নেট রান রেট এগিয়ে থেকে ফাইনালের জন্য কোয়ালিফাই করতে ভারতের দরকার ছিল ২৩৭ রান। রান তাড়ায় শুরুতেই সৌরভ গাঙ্গুলীকে হারায় ভারত। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল বোলার ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সৌরভ।

অজিত আগারকার, ভারতীয় পেসার: ম্যাকগ্রাকে ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান বোলিং লাইন-আপ অনেক শক্তিশালী ছিল ওই টুর্নামেন্টে। ওয়ার্ন, ক্যাসপ্রোউইজ, সাথে ফ্লেমিং। ওয়াহও টুকটাক বল করতো। শারজার ওই কন্ডিশনে এরকম বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে ২৮৪ তাড়া করতে বিশেষ কিছুই করতে হতো।

নয়ন মঙ্গিয়া, ভারতীয় উইকেটকিপার: কিপিং শেষ করে ড্রেসিংরুমে ফিরতেই আমাকে বলা হলো প্যাড পরে তৈরি হয়ে থাকতে। আমাকে পিঞ্চ হিটার হিসেবে তিনে নামানোর পরিকল্পনা ছিল। হতে পারে ওই টুর্নামেন্টে আমি ফাস্ট বোলিং ভালো খেলছিলাম, কিংবা আগেও পিঞ্চ হিটার হিসেবে ব্যাট করেছি তাই অমন সিদ্ধান্ত। আমি তিনে নামবো এটা অজিরা ভাবতে পারেনি।

টেন্ডুলকার: ম্যানেজার অংশুমান গোয়াড়িকর, অধিনায়ক আজহার আর সহ অধিনায়ক হিসেবে আমি মিলেই নয়নকে তিনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেই। দ্রুত কিছু রান তোলার উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত। ওই সময়ে পিঞ্চ হিটারের ধারণা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ১৯৯৬ এর টাইটান কাপে আমি অধিনায়ক ছিলাম। ওই সময়ে বিভিন্ন জনকে পিঞ্চ হিটার হিসেবে খেলিয়ে দেখেছি আমি। এই যেমন রাজকোটে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীনাথকে নামিয়ে দেই পিঞ্চ হিটার হিসেবে। প্রতিপক্ষকে চমকে দেয়াই ছিল মূল লক্ষ্য, কোন কোন দিন সফলও হতাম। শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সেদিন কাজে এসেছিল এই সিদ্ধান্ত।

মঙ্গিয়া তাঁর কাজ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তারপরে ভেঙে পড়লো ভারতীয় মিডল অর্ডার। ২১ ওভার বাকি, ভারতের তখনো দরকার ১৫৬ উইকেট, হাতে আছে ৬ উইকেট। প্রচণ্ড ধূলিঝড়ে খেলা বন্ধ থাকলো বেশ কিছুক্ষণ।

টেন্ডুলকার: এরকম বালুর ঝড় আমি জীবনে কখনো দেখিনি। মনে হচ্ছিল কোন হলিউড মুভি দেখছি। এমনই ঝড় হচ্ছিল, পাশে থাকা অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে আমি প্রায় জড়িয়েই ধরেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম অন্তত ৮০-৯০ কেজি ওজনের কাউকে ধরে থেকে যদি রক্ষা পাওয়া যায়! ওই পরিস্থিতিতে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করতে হয় আমার জানা ছিল না। খেলোয়াড়েরা সবাই মাঠে সটান হয়ে শুয়ে পড়েছিল।

চ্যাপেল: এই টুর্নামেন্ট সম্পর্কে কোন কিছু মাথায় আসলে সবার আগে আসে এই ঝড়ের কথা। আমার গোটা জীবনে এমনটা কখনো দেখিনি আমি। টেন্ডুলকার যেভাবে ব্যাট করছিল, মনে হচ্ছিল কেবল এই বালুঝড়ই পারে ওকে থামাতে।

২৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর যখন খেলা শুরু হলো, খেলা নেমে এলো ৪৬ ওভারে। ভারতের সামনে তখন সমীকরণ, জিততে হলে ১৫ ওভারে দরকার ১৩৩, আর ফাইনালে ওঠার জন্য ৯৪।

টেন্ডুলকার: নতুন সমীকরণ নিয়ে ড্রেসিংরুমে অংশুমান ও রাজ সিং দুঙ্গারপুরের সাথে আলোচনা হয়। দুই ধরনের সমীকরণই জানানো হয় আমাদের। আমি জয়ের জন্যই ভাবছিলাম। শুধু কোয়ালিফাই করা আমার লক্ষ্য ছিল না, কারণ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আবার তাঁদেরই মোকাবেলা করাটা আমাদের একটা মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা দিত। আমি তাই জয়ের কথাই ভাবছিলাম।

খেলা শুরুর পর প্রত্যেক অস্ট্রেলিয়ান বোলারকে আক্রমণ করতে শুরু করলেন টেন্ডুলকার। ওয়ার্ন, টম মুডি, ক্যাসপ্রোউইজ- বাদ গেলেন না কেউই। শুধু বাউন্ডারি নয়, উইকেটে খুব দ্রুত দৌড়াচ্ছিলেন তিনি, সম্ভাব্য যত উপায়ে দ্রুত রান তোলা যায় তাই করছিলেন। অপর প্রান্তে ভিভিএস লক্ষ্মণ টেন্ডুলকারকে স্ট্রাইক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঝড় শেষে খেলা শুরুর পর যেটিকে কঠিন সমীকরণ মনে হচ্ছিল, সাত ওভার বাকি থাকতে সেটিই নেমে এল নাগালের মধ্যে।

লক্ষ্মণ: আমি যখন নামি, তখন রান ৪ উইকেটে ১৩৮। আমি নামার পর যেই ১১২ রান হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ২৩ রান করেছিলাম আমি। শচীনের ওই ১৪৩ রানের ইনিংসটা আমার দেখা কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ইনিংস। আমি ওর সাথে ওভারের মাঝে কথা বলছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমি জানতাম ও আমার কথা কিছুই শুনছে না।

টেন্ডুলকার: পুরো টুর্নামেন্টেই আমি ছন্দে ছিলাম। ম্যাচ জেতানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। শারজায় যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সিরিজেই রান পেয়েছিলাম আমি। ওরা আমাকে নন স্ট্রাইকিং এন্ডে রাখার অনেক চেষ্টা করছিল, কিন্তু লক্ষ্মণ ঠিকই আমাকে স্ট্রাইক দিচ্ছিল। পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় ওর কাছে আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত। কারণ একবার দুই রান নেয়ার সময় ও আমাকে ফিরিয়ে দেয়ায় ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। ও আসলে আমাকে যত বেশি সম্ভব স্ট্রাইক দিতে চাচ্ছিল।

কানিৎকার: ও কিন্তু কোন ঝুঁকিপূর্ণ শট বা ইম্প্রোভাইজড শট খেলেনি। একদম প্রোপার ক্রিকেটিং শট খেলেই অমন রান করেছে। ওই সময়ে যদি আইপিএল থাকতো, এই ব্যাটিং দিয়ে শচীন কি কি যে করতো!

ফাইনালে কোয়ালিফাই করতে ২৯ বলে দরকার মাত্র ১৮ রান, অমন অবস্থায় স্টিভ ওয়াহকে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন টেন্ডুলকার। ক্যাচ ধরার জন্য এগিয়ে আসেন ডেমিয়েন মার্টিন, কিন্তু ক্যাচ তো নিতে পারেনইনি, উল্টো হাত গলে বল ছুঁলো বাউন্ডারির সীমানা।

শেষ পর্যন্ত ১৩১ বলে ১৪৩ করে শচীন যখন ফিরছেন, নেট রান রেটের দিক থেকে ভারত ততক্ষণে ফাইনালে পৌঁছে গেছে।

টেন্ডুলকার: এপ্রিল ২২ আর ২৪, দুই ম্যাচেই আমি বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছিলাম। সাধারণের মধ্যে ধারণা আছে ওই ম্যাচে নাকি আমি ওয়াক করেছিলাম। আসলে তা ঠিক নয়। স্কয়ার লেগ আম্পায়ার আউটের ইশারা দেয়ার পরেই কেবল আমি ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছিলাম।

ম্যাচের পরে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরলাম, আমার শরীর একদমই চলছিল না। এত ক্লান্ত ছিলাম, কিন্তু তাও ঘুমাতে পারছিলাম না। ফাইনালের বাকি মাত্র এক দিন, অথচ আমার শরীর কুলাচ্ছিল না। সকালে উঠে যেন শরীর নাড়াতেই পারছিলাম না। এমনকি বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে যেতেও কষ্ট হচ্ছিল আমার।

এপ্রিল ২৩, ১৯৯৮। ফাইনালের আগের রাত। শচীন টেন্ডুলকারের ২৫ তম জন্মদিনেরও আগের রাত। দুই দলের খেলোয়াড়, ধারাভাষ্যকার ও সাংবাদিকের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজের হোটেলে একটি পার্টির আয়োজন করলেন মার্ক মাসক্যারেনহাস।

চ্যাপেল: পার্টিটা ছিল ওই টুর্নামেন্টের স্পন্সর কোকা-কোলার তরফ থেকে। ওই সময়ে পেপসির সাথে দারুণ লড়াই চলছিল কোকা-কোলার। শচীনের আবার পেপসির সাথে এন্ডোর্স করা ছিল। পার্টির মাঝখানেই কোকা-কোলার বস এসে মার্ককে বলল, ‘শচীন যদি ফাইনালেও আরেকটি সেঞ্চুরি করতে পারে, আমি ওকে একটি মার্সিডিজ দেব।’

আগারকার: আমার কিছুটা ইনজুরি ছিল, কিন্তু ফাইনালে আমাকে খেলতেই হতো। ফাইনালের আগের রাতে আমি আর শচীন ডিনার করছিলাম। তখন ওয়ানডেতে বাউন্সার দেয়ার নিয়ম ছিল না, একটু এদিক ওদিক হলেই নো কিংবা ওয়াইড ডেকে বসতো। আমরা জানতাম কিছু একটা করে মার্ক ওয়াহ কিংবা গিলক্রিস্টকে তাড়াতাড়ি ফেরাতেই হবে আমাদের। শচীন তাই আমাকে বলল, নো বা ওয়াইড হতেই পারে, কিন্তু তাও দুই-একটা শর্ট বল করে দেখা যেতে পারে।

শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা কাজে লেগে যায়, আগারকারের শর্ট বলেই আউট হন ওয়াহ। তাও রান কম করেনি অস্ট্রেলিয়া, স্টিভ ওয়াহ ও ড্যারেন লেম্যানের ফিফটিতে রান তোলে ২৭২। জিততে হলে ভারতকে করতে হবে ২৭৩।

ওই ম্যাচেও দ্রুত আউট হন সৌরভ, আবারও তিনে নামেন মঙ্গিয়া। টেন্ডুলকার আর মঙ্গিয়া মিলে ওয়ার্নের উপর চড়াও হন। সেদিন ১০ ওভারে ৬১ রান খরচ করেও কোন উইকেট পাননি ওয়ার্ন, তখনো পর্যন্ত এটিই ছিল ওয়ানডেতে তাঁর সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের নজির।

মঙ্গিয়ার বিদায়ের পর টেন্ডুলকারকে যোগ্য সঙ্গ দেন অধিনায়ক আজহারউদ্দিন। ১২০ রানের ম্যাচজয়ী জুটি গড়েন অধিনায়ক আর সহ-অধিনায়ক মিলে। স্টেডিয়ামের প্রতিটি প্রান্তে বল পাঠাচ্ছিলেন টেন্ডুলকার। শেষ পর্যন্ত যখন বিতর্কিত এক লেগ বিফোরের সিদ্ধান্তে ফিরছেন, জয়ের জন্য ভারতের দরকার ৩৩ বলে মাত্র ২৫ রান। শচীনের নামের পাশে ১৩১ বলে ১৩৪ রানের ঝলমলে ইনিংস।

রেকর্ড ২৪ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল সেদিন শারজার ফাইনালে। পাকিস্তান টুর্নামেন্টে না থাকায় দর্শকেরা বেশিরভাগই সমর্থন দিয়েছিলেন ভারতকে। তাদের কাউকেই নিরাশ করেননি শচীন। নিজের ২৫ তম জন্মদিনে করেছিলেন ৩১ তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটি, অবিসংবাদিতভাবে জিতে নেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারটিও। কোকা-কোলা বসও তাঁর কথা রেখেছিলেন, ফাইনালে সেঞ্চুরি করায় শচীনকে উপহার দিয়েছিলেন মার্সিডিজ এসএল৬০০ মডেলের একটি গাড়ি।

About Sanjoy Basak Partha

Check Also

এ.বি.ডি ভিলিয়ার্স: ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি’র অবিশ্বাস্য কিছু রেকর্ড  

মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি নামটা তাঁর চেয়ে ভালো আর কারোর সাথে যাওয়া সম্ভব না। বল যেখানেই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *