বিজ্ঞানীরা বলেন যে একটা সময় সকল নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটবে। আসলে নক্ষত্রের মৃত্যুটা ঠিক কেমন হবে? বিপুল কোনো বিস্ফোরণ নাকি অন্য কিছু, যার জন্য প্রস্তুত নেই মানবজাতি? আগামী ৫০০ কোটি বছরের মাঝে সকল নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটবে, এমনটাই ধারণা বিজ্ঞানীদের। ধীরে ধীরে হাইড্রোজেন উদগীরন বন্ধ করে নক্ষত্রগুলো যাত্রা করবে অনিঃশেষ এক নিয়তির দিকে। লাল রঙের এক দানবে রুপান্তরিত হয়ে ধ্বক করে জ্বলে উঠবে চিরচেনা এই সূর্য। এরপর আস্তে আস্তে থেমে যাবে। তৈরি হবে সফেদ এক সৌম্যক্লান্ত বামনে। ঠিক যেন রুপকথার মতো! এতদিনে বুঝি কাঁধ থেকে বুড়োর বোঝা নেমে পড়ল। তবে এর মাঝেও কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে। সূর্যের কাজ নাহয় শেষ হয়ে গেল। এরপর? কেমন লাগবে এটিকে দেখতে? এখনকার মতোই গনগনে হয়ে এটি জ্বলতে থাকবে ধিকিধিকি, নাকি আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাবে মহাশূন্যে? বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নটির উত্তর বের করতে চলেছেন। তবে যতই উপসংহারের কাছাকাছি তারা আসছেন, ততই চোখজোড়া যেন চকচক করে উঠছে।
একটি নক্ষত্রের আয়ুষ্কাল কত হবে, সেটি নির্ভর করে তার আকৃতির ওপর। আমাদের চিরচেনা এই সূর্য একটি হলুদাভ একটি বামন যার ব্যাসরেখা ১.৪ মিলিয়ন কিলোমিটার বা বলা যায় পৃথিবী থেকে অন্তত ১০৯ গুণ বড়। হলুদ রঙের বামন নক্ষত্রগুলোর আয়ুষ্কাল ১০ বিলিয়ন বছর। সূর্যের বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর, তাই ধারণা করা যায় যে এটি তার আয়ুষ্কালের প্রায় অর্ধেক শেষ করে এসেছে। যেন মধ্যবয়স্ক পরিণত এক ব্যক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে সূয্যিমামা!
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে হাইড্রোজেনের সরবরাহ যখন শেষ হয়ে যাবে, সূর্য তার বড় বড় উপাদানগুলো নিজের ভেতরেই শুষে নেয়া শুরু করবে। ভঙ্গুর এবং অস্থিতিশীল এই সময়ে এসে নানা ধরনের দ্রব্য মহাশূন্যে নিক্ষেপ করার পর সূর্যের আকৃতি হবে তার বর্তমান অবস্থার চেয়েও ১০০ গুণ বড়। বিশালাকৃতির লালাভ এক দৈত্যে পরিণত হবে এটি। তারপর আস্তে আস্তে আকৃতি কমতে কমতে একেবারে পৃথিবীর আকারে নেমে আসবে। পরিণত হবে সফেদ এক বামন নক্ষত্রে।
সফেদ এই নক্ষত্রকে ঘিরে থাকবে প্রচুর গ্যাস এবং ধুলা। তবে এই গ্যাস মানুষের চোখে দৃশ্যমান হবে কিনা বা সেটির কোনো ত্রিমাত্রিক চিত্র এখন তৈরি করা সম্ভব কিনা, সেটি নিয়ে বিশাল বড় একটি ধাঁধাঁ রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। শতকরা ৯০ শতাংশ নক্ষত্রই বিপুল গ্যাস ও ধুলা ছড়াতে ছড়াতে মহাশূন্যে বিচরণ করতে থাকবে এমনটাই ধারণা বিজ্ঞানীদের। তবে তারা ধারণা করছেন সূর্যের যেহেতু তখন কোনো আলো থাকবে না, তাই সূর্যের চারপাশে ধোঁয়ার এই আস্তরণ দেখতে চাইলে আশেপাশের কোনো গ্রহ বা নক্ষত্রের আলো এমন হতে হবে যেন তা সূর্যের শরীরের অন্তত দ্বিগুণ হয়। তবে এই ভবিষ্যদ্বানী মহাশূন্যের আরও নানা ধরনের যে ধাঁধাঁগুলো রয়েছে, সেগুলোর সাথে ঠিক যেন মিশ খাচ্ছে না। বিজ্ঞানীদের কাছে এমন একটি মডেল রয়েছে, যার মাধ্যমে তখনকার মহাশূন্যের অবস্থা কেমন হবে, তা ধারণা করা যেতে পারে। সেখানে বিস্ময়করভাবে দেখা গিয়েছে যে সূর্যকে দেখবার মতো এমন অনেক তারকার সৃষ্টি হবে, যেগুলো আকারে সূর্যের চাইতে অনেক বড় হবে। তবে এই কম্পিউটার মডেলগুলো অনুসারে দেখা যাচ্ছে যে ভর হিসেবে তারা কখনওই সূর্যের কাছাকাছি যেতে পারবে না। তাহলে মাধ্যাকর্ষনজনিত টান যদি কম থাকে, তাহলে সূর্য খুব বেশি দৃশ্যমান হবেনা।
আন্তর্জাতিক একটি গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া এই প্রশ্নগুলো বিজ্ঞানীদের খুব ভাবিয়ে তুলছে। একটি উত্তর পাওয়া গেলে সেখানে সাথে সাথে উদয় হচ্ছে আরও অনেকগুলো প্রশ্ন।
তবে বিজ্ঞানীরা বোধহয় একেবারেই হাল ছেড়ে দেয়াদের দলে নেই। তারা এমন একটি কম্পিউটার আবিষ্কার করেছে যেটির মাধ্যমে তারকাদের আয়ুষ্কাল কত এবং তারা কী হারে নিজেদের ক্ষয় করছে, তা সম্পর্কে জানা যাবে। তাদের হিসাব অনুযায়ী সূর্য যে হারে নেবুলাতে ধুলো এবং গ্যাস ছেড়ে দিচ্ছে, পূর্বের মডেলগুলো অনুযায়ী সূর্যের ক্ষয় হয়ে যাবার সময়কাল আরও তিনগুণ কমে এসেছে। সূর্যের এই চরিত্রের কারণে হয়ত নেবুলাতে ছড়িয়ে থাকা সূর্যের চারপাশে আরও অনেককিছুই আমাদের গোচরে আসবে। আপাতত পাঁচশো কোটি বছর পরে কী হবে, সেটি নিয়ে মোটেও বিজ্ঞানীরা ভাবছেন না, তা বলাই বাহুল্য।
(সূত্রঃ লাইভ সাইন্স)