মানপ্রীত গণি, সুদীপ তেয়াগি, মোহিত শর্মা, ঈশ্বর পান্ডে, শাদাব জাকাতির পর আইপিএলের দল চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলে অখ্যাত ভারতীয় বোলারদের পারফর্ম করার তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন দীপক চাহার। তবে বাকি সবার সাথে চাহারের একটা পার্থক্যও আছে।
গণি, তেয়াগি, মোহিত, ঈশ্বর, জাকাতিরা চেন্নাইয়ের হয়ে খেলার আগে তাদের তেমন কেউ চিনত না। কিন্তু চাহার ভারতের ক্রিকেটে একেবারে নতুন নাম নন। বরং দুর্ভাগ্য বাধা হয়ে না দাঁড়ালে এতদিনে হয়তো প্রতিষ্ঠিতই হয়ে যেতেন তিনি!
চাহার প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন ২০১০ সালে, রঞ্জি ট্রফি অভিষেকে রাজস্থানের হয়ে মাত্র ১০ রানে ৮ উইকেট নিয়ে। ১৮ বছর বয়সী চাহারের এই বিধ্বংসী বোলিংয়েই হায়দ্রাবাদ অলআউট হয় মাত্র ২১ রানে, ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে যা সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। নিজের প্রথম রঞ্জি মৌসুমেই ১৯.৬৩ গড়ে ৩০ উইকেট নিয়ে রাজস্থানকে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন করেন। ২০১১ আইপিএলের জন্য চাহারকে সই করাতে দেরি করেনি রাজস্থান রয়্যালস, কিন্তু ইনজুরি আর দুর্ভাগ্যই আটকে দেয় চাহারের রাস্তা।
ইনজুরিতে পড়েছেন, কিন্তু কখনো ভেঙে পড়েননি। এমনকি রাজস্থানের হয়ে অনুশীলন সেশন শেষ করে নিজ উদ্যোগে নিজেকে ফিট রাখার জন্য অন্ধকারে স্প্রিন্ট করতেন। চাহারের মূল শত্রু বলতে গেলে তার দুর্ভাগ্য। তার প্রথম রঞ্জি ট্রফি অধিনায়ক হৃষীকেশ কানিৎকারের মন্তব্য অন্তত এরকমই। একবার এক অনুশীলন ম্যাচে চাহারের বোলিংয়ে বল মেরেছিলেন কানিৎকার, সেটি ধরতে গিয়ে হাত বাড়ানোর সময় ইনজুরিতে পড়েন তিনি।
কানিৎকারের সাথে চাহারের আবার পুনর্মিলন হয় ২০১৬ আইপিএলে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের হয়ে। তখন সবে নাকল বল নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, দুর্ভাগ্যবশত আবারো পড়লেন ইনজুরিতে। প্রথম বাছাই হিসেবে দলে নেয়া হলেও ওই আইপিএলে চাহার খেলতে পেরেছিলেন মাত্র ৫ টি ম্যাচ, উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র একটি।
২০১৭ এর অক্টোবরে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের প্রাথমিক দলে ডাক পেয়েছিলেন চাহার। কিন্তু বিসিসিআই পরে তাকে বাদ দিয়ে দলে নেয় তারই ভাই রাহুল চাহারকে। কারণ হিসেবে বিসিসিআই বলেছিল, অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হিসেবে রাহুলের জায়গায় ডাকা হয়েছিল দীপককে!
তবে অনেক দুর্ভাগ্যের পর অবশেষে বোধহয় ভাগ্য মুখ ফিরে তাকাচ্ছে চাহারের দিকে। ২০ ওভারের টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে রাজস্থানকে ফাইনালে তুলতে নিয়েছেন ১৯ উইকেট। কর্ণাটকের বিপক্ষে ১৫ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, একই ম্যাচে দুইবার দাঁড়িয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে। চাহারের পারফরম্যান্স দেখেই নিলামে তাকে কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় চেন্নাই সুপার কিংস।
ক্রিকইনফোকে কানিৎকার বলেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন প্রথম এলো, চাহার তখন ১৩০ কিলোমিটারের আশেপাশে বল করতো। কিন্তু এখন সেটাকে ১৩৫ কিলোমিটারের উপরে নিয়ে গেছে, কারণ সে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিল। ধীরে ধীরে নিজের গতি বাড়িয়েছে ও। কোন এক আইপিএল ম্যাচে ওকে ১৪০ কিলোমিটারেও বল করতে দেখেছি। কিন্তু গতি না, সুইংই চাহারের প্রধান অস্ত্র।’
এই আইপিএলে চাহার হয়ে উঠেছেন পাওয়ারপ্লেতে অধিনায়ক ধোনির বড় আস্থা। পাওয়ারপ্লেতে ধোনির সুইং বোলার ব্যবহার করার প্রবণতা নতুন নয়। উইকেটের দুই দিকেই বল সুইং করাতে পারেন চাহার, এখন নাকল বলটাও করতে পারেন বেশ ভালো। রাজস্থানের বিপক্ষে ম্যাচে আজিঙ্কা রাহানেকে নাকল বল দিয়ে বিভ্রান্ত করেই বোল্ড করেছিলেন।
চেন্নাইয়ের কোচ স্টিভেন ফ্লেমিং চাহারের এমন উন্নতিতে সন্তুষ্ট, ‘গত দুই বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে সে। ঘরোয়া মৌসুমটা খুব ভালো কাটিয়ে এসেছে। প্রথম দিন থেকেই ওর স্কিলে আমরা সন্তুষ্ট। ও কিন্তু বেশ কার্যকর ব্যাটসম্যানও। বলে বেশ ভালো গতি রেখে সুইং করাতে পারে ও। এখন ও নিয়মিত ১৪০ কিলোমিটারে বল করে, সর্বোচ্চ ১৪৩ এও উঠেছে। এখন এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে ওকে, অভিজ্ঞতার সাথে সাথেই ধারাবাহিকতা আসবে।’