সালাউদ্দিন শাকিল: প্রবাসী নির্মাণ শ্রমিক থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হওয়ার অবিশ্বাস্য যাত্রা – Creative IT Blog
Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611
Home / অদম্য / সালাউদ্দিন শাকিল: প্রবাসী নির্মাণ শ্রমিক থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হওয়ার অবিশ্বাস্য যাত্রা

সালাউদ্দিন শাকিল: প্রবাসী নির্মাণ শ্রমিক থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হওয়ার অবিশ্বাস্য যাত্রা

জীবন কখনো কখনো রূপকথার মতো, কখনো বা রূপকথার চেয়েও অবিশ্বাস্য। সালাউদ্দিন শাকিলের জীবন কাহিনী আপনাকে জানা এই কথাটিই বিশ্বাস করতে বাধ্য করবে আরেকবার। দুবাইয়ের প্রবাসী শ্রমিক ক্যাম্পে দিনরাত হাড়ভাঙা খাটুনির জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে শাকিল এখন বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন! শাকিলের এই অবিশ্বাস্য জীবনযাত্রা নিয়েই আজকের প্রিয়লেখার আয়োজন। সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ।

‘রোজ ভোর চারটা বাজতেই কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হতো। নিজেদের রান্না করা ভাত আমরা পলিথিনের ব্যাগে করে নিয়ে যেতাম। প্লেটে নিয়ে যে ভাত খাবো, ধূলিঝড়ের কারণে সেই উপায় ও ছিল না। প্রচণ্ড বাতাসে ভাত সব উড়ে যেত। কখনো কখনো তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও অতিক্রম করে যেত। সেদিন ভাতের সাথে যা তরকারি থাকত সেটাও নষ্ট হয়ে যেত। খুব কষ্টকর জীবন কাটিয়েছি সেখানে।’

কথাগুলো সালাউদ্দিন শাকিলেরই। এক দশক আগেও দুবাইয়ে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে এরকম মানবেতর জীবন কাটাতে হতো তাঁকে। সেই শাকিলের গত সপ্তাহে অভিষেক হলো দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে, মধ্যাঞ্চলের হয়ে।

রাজশাহীর কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে অনুশীলন পর্ব শেষে নিজের জীবনের সেই দুঃসহ অধ্যায়গুলোর স্মৃতিচারণ করছিলেন বর্তমানে বাঁহাতি পেসার শাকিল। আগের ম্যাচে দক্ষিণাঞ্চলের বিপক্ষে দুই উইকেট পেয়েছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসের। মধ্যাঞ্চলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ যখন আবু হায়দারের সাথে তাঁকে নতুন বলে বল করতে বলেছিলেন, নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল শাকিলের!

‘আমার জন্য এটা ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। এর আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাইকে শুধু টিভির পর্দায়ই দেখেছি। আর এখন উনি আমার সাথে এসে কথা বলছেন, উনার অধিনায়কত্বে খেলছি আমি! এটা আমার জন্য স্রেফ অবিশ্বাস্য।’

২৮ বছর বয়সী শাকিল দেশের ক্রিকেটের বেশ কয়েকজন কর্তাব্যক্তির চোখে পড়েছেন এরই মধ্যে। এর আগে বছরের শুরুর দিকে ফতুল্লায় এক নেটে তাঁকে বল করতে দেখেন ঘরোয়া ক্রিকেটের খ্যাতনামা কোচ মিজানুর রহমান। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে নিজের কোচিং করানো দল প্রাইম দোলেশ্বরে শাকিলকে ৫ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিলেন। এরপর মধ্যাঞ্চলের হয়ে খেলার জন্য শাকিলের হয়ে সুপারিশও করেন মিজানুর। এর আগে নিচের স্তরের ক্রিকেট খেলেছেন কয়েক বছর, কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পা রাখাটা শাকিলের জন্য অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা।

একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জীবনে অনেক খারাপ সময় আসে, উত্থান পতন আসে। কিন্তু একজন প্রবাসী শ্রমিকের কষ্টের তুলনায় সে কষ্ট কিছুই না। যারা বৈধ ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বাইরে যান তারা হয়তো কিছুটা নিরাপদে থাকেন, কিন্তু যারা দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশ গমন করেন, তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। অনেকে আবার কাজ করতে গিয়ে দেখেন যেই কোম্পানির হয়ে কাজ করার কথা বলে তাকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে, বাস্তবে ওরকম কোন কোম্পানির অস্তিত্বই নেই।

শাকিল সেদিক থেকে ভাগ্যবান ছিলেন, যেই কোম্পানির শ্রমিক হিসেবে তাকে পাঠানো হয়েছিল সেটি কোন ভুয়া কোম্পানি ছিল না। কিন্তু ওখানে খুব অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে হতো তাকে। প্রতিদিন প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগিয়ে কর্মস্থলে যেতে হতো, সেটিও আবার দুবাইয়ের এক মরুভূমির মাঝখানে।

শাকিল নিজেই জানাচ্ছিলেন, ‘আমি ওয়েল্ডিংয়ের কাজ জানতাম, কিন্তু মরুভূমির মাঝে ওরকম পরিবেশে আমাদের স্টিলের কাঠামো নির্মাণের কাজ করতে হতো। আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম যেন উনি আমাকে এই অসহনীয় কষ্ট থেকে মুক্ত করেন। খুব কঠিন ছিল, খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

২০০৬ সালে আমার সব বন্ধুরা যখন এসএসসি পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, আমাকে তখন কাজের জন্য দেশ ছাড়তে হয়। আমার যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু আমাকে যেতে হতো। কারণ আমাদের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না।’

ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জের এক গ্রামে টেপ টেনিস বলে ক্রিকেট খেলে বেড়ে ওঠা শাকিলের। ছোট থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল মনে, কিন্তু নির্মম বাস্তবতার শিকার শাকিলকে কাজের উদ্দেশ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথে যাত্রা করার সময় সেই স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েই যেতে হয়েছিল।

কিন্তু সেখানে চার বছর কাজ করার পর যখন তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তখন তার কোম্পানি তাকে ছুটিতে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। চার বছর ধরে দুবাইয়ে ব্যাট বলের চেহারাও না দেখা শাকিল এখন স্বীকার করেন, ওই ছুটি আসলে ছুটি না, মুক্তির উপলক্ষ্য হয়ে এসেছিল তার কাছে। কারণ বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিকেরাই একবার বিদেশে গিয়ে চাকরিতে ঢুকে গেলে সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজে পান না।

দেশে ফিরে আবারও টেপ টেনিস বলের ক্রিকেটে মেতে ওঠেন শাকিল। ২০১২ এর শুরুর দিকে এক বন্ধু তাকে নিয়ে গেলেন নারায়ণগঞ্জে, কোচ গোলাম রাসেলের অনুশীলন সেশনে। এরপর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকা লীগের তৃতীয় বিভাগে খেলার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ওই মৌসুমেই দ্বিতীয় বিভাগ পার হয়ে উঠে আসেন প্রথম বিভাগেও।

‘আমার মনে আছে, ২০১৪ তে যখন ক্লাবে ট্রায়াল দিতে গেলাম, সবাই হাসছিল। আমার নিজের তখন কিছুই ছিল না। আমার বন্ধু মেহরাব হোসেন আমাকে এক জোড়া বোলিং বুট ও একটা ব্যাট জোগাড় করে দিয়েছিল। ওই ক্লাব কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিল, যেন আমাকে একটা প্র্যাকটিস সেশন দেয়, যাতে তারা আমার খেলা দেখে আমাকে মূল্যায়ন করতে পারে। তারা আমাকে সুযোগটা দিয়েছিল, এবং সৌভাগ্যবশত আমি ভালো খেলতে পেরেছিলাম সেদিন।’

এরপর মিজানুর যখন তাকে খেয়াল করলেন, তখন থেকেই শাকিলের জীবনে সৌভাগ্যের চাকা ঘুরতে আরম্ভ করে। ২০১৬ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মূল কোচের দায়িত্ব পালন করা মিজানুর বলেছিলেন, শাকিলের শারীরিক গঠন ও গতিই তাকে আকৃষ্ট করেছিল।

‘ও ফতুল্লায় দোলেশ্বরের নেটে এসেছিল নেট বোলার হিসেবে বল করতে। ওর শারীরিক গঠন ও গতি আমার পছন্দ হয়। ও এখনো নিখুঁত বোলার না, কিন্তু ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হতে পারে। আমি ওর ব্যাকগ্রাউন্ড জানি, ওর কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা আছে। মৌসুমের শুরুতে দোলশ্বরের হয়ে যখন খেলতে শুরু করলো, ও খুবই নার্ভাস ছিল। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। ক্রিকেটাঙ্গনে সে নতুন। কিন্তু আমাদের কোচেদের কাজই তো এটা, নতুন নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করা। আমি নিশ্চিত, ওকে ঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে ও আমাদের শতভাগ ফিরিয়ে দেবে।’

মধ্যাঞ্চলের ম্যানেজার মিল্টন আহমেদ জানান, মিজানুর তাকে অনুরোধ করেছিলেন ডিপিএলের পর বিসিএল এর বাকি অংশে শাকিলকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখার জন্য।

‘আমরা ওকে নেট বোলার হিসেবে রাজশাহীতে এনেছিলাম, ভেবেছিলাম পিচে ভালই ঘাস আছে, ওকে নেট বোলার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ওর গতি বেশ ভালো ছিল, ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের ইনসুইংও দিচ্ছিলো বেশ ভালো। তাই ভাবলাম, একটা সুযোগ দিয়েই দেখা যাক।’

এমনকি গত সপ্তাহে রাজশাহীর সবুজ পিচে শাকিলের বোলিং দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশারও। মরুভূমির তীব্র উত্তাপে দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা অমানবিক পরিশ্রম করা একজনের জন্য এটা কম বড় অর্জন নয়! সুযোগ পেয়েছেন, এবার দেখাই যাক, সুযোগ কাজে লাগিয়ে কতদূর পৌঁছাতে পারেন এই যোদ্ধা! প্রিয়লেখা পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য থাকছে অনেক অনেক শুভকামনা।

ক্রিকইনফো অবলম্বনে

 

 

 

About Sanjoy Basak Partha

Check Also

প্রসিধ কৃষ্ণা: নেট বোলার থেকে আইপিএল মাতানো তরুণের গল্প

প্রথমবার যখন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটের স্বাদ পেলেন, প্রসিধ কৃষ্ণার বয়স তখন ১৯ বছর। ২০১৫ সালে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *