স্কাল সার্জারী বা খুলিতে অস্ত্রোপচার ঠিক কত বছর আগে শুরু হয়েছিল বলে আপনার ধারণা? আপনার ধারণাকে বদলে দিতে নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। আজ থেকে প্রায় ৫,০০০ বছর আগে খুলিতে অস্ত্রোপচার করেছিলেন প্রাচীন চিকিৎসকরা। সেটিও কোনো মানুষের ওপর নয়, একটি গরুর ওপর!
তবে গরুটি মৃত ছিল নাকি জীবিত, সেটি নিয়ে গবেষণা করবার খুব একটি সুযোগ গবেষকেরা পাননি। যদি গরুটি জীবিত থাকে অস্ত্রোপচারের সময়, তাহলে খুব বেশি সময় সেটির হাতে ছিল না। কারণ, জীবিত থাকবার লক্ষণ জীবটির খুলি পরীক্ষা করে পাওয়া যায়নি। গবেষকেরা তাদের গবেষণায় এটি বের করেছেন। তবুও, অস্ত্রোপচার কেন করা হয়েছিল, সেটি একটি রহস্য। প্রক্রিয়াটির নাম ট্রিপ্যানেশন। এটি একটি প্রাচীন ব্রেইন সার্জারির পরীক্ষা। পশুর ওপর ভেটেরিনারি সার্জারির হয়ত এটিই সর্বপ্রাচীন উদাহরণ। ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের ডিরেক্টর ফার্নান্দো রামিরেয রজ্জি তার একটি বয়ানে এই কথা বলেছেন। তবে এটিও সম্ভব হতে পারে যে প্রাচীন মানুষেরা শুধুমাত্র ট্রিপ্যানেশন প্রক্রিয়া যাচাই করবার জন্যই গরুটিকে বেছে নিয়েছিল। মানুষের আগে যাচাই করবার আগে পশুর ওপর এটি কী ধরনের প্রভাব ফেলে সেটি জানার জন্যও এই কাজ করা হয়ে থাকতে পারে, বলে জানিয়েছেন ফার্নান্দো।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে সংঘটিত একটি খননকার্যে এই প্রাচীন গরুর খুলিটি সংগ্রহ করা হয়েছিল। স্থানটি ছিল পশ্চিম ফ্রান্সের চ্যাম্প ডুরান্ডে। এটি একটি প্রাচীন নিওলিথিক সাইট। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে খ্রিস্টপূর্ব ৩৪০০ থেকে ৩০০০ এর মধ্যে ছিল গরুটির বয়স। প্রাপ্রবয়স্ক অবস্থাতেই এটির ওপর পরীক্ষাটি করা হয়েছে। প্রথম পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে গরুটির ক্র্যানিয়ামের মাঝে থাকা একটি গর্তের দৈর্ঘ্য ৬.৪ বাই ৪.৬ সেন্টিমিটার। জিনিসটি ভাবিয়ে তোলে ফার্নান্দোকে। ২০১২ সালে আবার খুলিটি পরীক্ষা করেন তিনি।
লাইভ সাইন্সকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “প্রথমে যখন আমরা তাড়াতাড়ি জিনিসটি পরীক্ষা করলাম, দেখলাম যে গরুর খুলিতে ট্রিপ্যানেশন করা হয়েছে। তবে খুব বেশি ভীতিকর ছিল না ব্যাপারটি।”
তবে ট্রিপ্যানেশন ছাড়া যদি অন্য কোনো প্রানী এই গরুটির ওপর আঘাত করে থাকে (যার ফলে খুলিতে এই গর্ত সৃষ্টি হয়েছে) তাহলে চারপাশে আরও বেশ কিছু ফ্র্যাকচার পাওয়া যেত। এমন কোনো ফ্র্যাকচার বা চোট খুলিতে পাওয়া যায়নি। ফলে গবেষকদের ধারণা যে এটির ওপর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এছাড়াও গর্তটি দেখে এমন কিছু মনে হবার কারণ নেই যে ইনফেকশনের কারণে এই রোগটি হয়েছে। সিফিলিস টিউবারকিউলোসিস এমন কোনো কারণেও খুলিতে এমন কোনো গর্ত হবার কারণ নেই।
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখা গিয়েছে যে খুলির চারপাশে যেমন দাগ রয়েছে, সেটি শুধুমাত্র খুলিতে ট্রিপ্যানেশনের মাধ্যমে যে অস্ত্রোপচার করা হয়, সেটির মাধ্যমেই সম্ভব। মিলটা খুব বেশি মাত্রায় রয়েছে।
এটির আগে সর্বপ্রথম যে অস্ত্রোপচারের নমুনা পাওয়া গিয়েছে, সেটি হলো মেসোথিলিক যুগে। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ থেকে ২৭০০ অব্দ পর্যন্ত ছিল এই যুগটি। প্রাচীন মানুষ কেন খুলিতে অস্ত্রোপচার করত কিংবা ফুটো করত, সেটি নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মাঝে নানা ধরনের তত্ত্ব রয়েছে। এপিলেপসির মতো কোনো রোগের চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য কোনো রোগের চিকিৎসা হিসেবে হয়ত এটি ব্যবহার করা হতো। আবার কেউ কেউ বলেন যে হয়ত এটি কোনো ধরনের রিচুয়ালও হতে পারে।
তবে এই গরুটির ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে গবেষকরা বেশ সন্দিহান। নিওথিলিক যুগের মানুষেরা এতটা বিস্তৃত কোনো গবেষণার মধ্যে গিয়েছিল কিনা, সেটি সম্পর্কেও বিজ্ঞানীরা আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। তবে আপাতত তারা ভেবে নিচ্ছেন যে ট্রিপ্যানেশনের জন্যই এই গরুটির ওপর অস্ত্রোপচার করেছিল প্রাচীন গবেষকেরা।