টি-২০ ক্রিকেটের রাজা বলা হয় তাঁকে। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের শেষ কথা তিনি। জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলকে সীমানাছাড়া করার কাজে তাঁর উত্তরসূরি মেলা ভার। সেই ক্রিস্টোফার হেনরি গেইলকেই কিনা আইপিএলের নিলামে প্রথম দুইবারের ডাকে কেনেনি কোন দল! তৃতীয়বার কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের পরিচালক বীরেন্দর শেবাগ গেইলের বেস প্রাইস দুই কোটি রুপী দিয়েই দলে টেনে নেন তাঁকে। টি-২০ ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের সব রেকর্ড যার দখলে, সেই গেইলকে কিনতে সবার অনীহা আশ্চর্য করেছিল সবাইকে। গেইল নিজে বোধহয় হয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি অপমানিত। সেই অপমানের জ্বালা এবার ভালোভাবেই মেটাচ্ছেন তিনি। টানা তিন ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে ও দলকে জিতিয়ে বাকিদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন, বয়স ৩৯ হয়ে গেলেও ক্রিস গেইল এখনো ক্রিস গেইলই আছেন!
বেশিরভাগ টি-২০ ম্যাচের নিষ্পত্তিই সাধারণত ম্যাচের শেষ এক দুই ওভারে হয়। কিন্তু এদিন ইডেন গার্ডেনসে ম্যাচের নির্ধারক হয়ে উঠলো দুই দলের পাওয়ারপ্লে। কলকাতা যেখানে তাদের প্রথম ৬ ওভারে বাউন্ডারি মেরেছিল ৮ টা, পাঞ্জাব সেখানে মেরেছে ১৪ টা। ১৯২ তাড়া করতে নেমে প্রথম ৬ ওভারেই কোন উইকেট না হারিয়ে ৭৩ তুলে ফেলেই ম্যাচটা নিজেদের দিকে হেলিয়ে নিয়েছেন রাহুল-গেইল।
এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টার বৃষ্টি বিরতি। বৃষ্টি শেষে পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ ওভারে ১২৫ রান। টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচেই আইপিএল ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটি করা রাহুলের আরও একটি দুর্দান্ত ইনিংসের সাক্ষী হলো ইডেন গার্ডেনস, জয় থেকে মাত্র নয় রানের দূরত্বে থেকে যখন ডাগআউটে ফিরছেন, তাঁর নামের পাশে তখন ২৭ বলে ৬০ রান। রাহুল আউট হলেও কাজ সম্পূর্ণ করেই ফিরেছেন গেইল, ৩৮ বলে করেছেন ৬২। এই নিয়ে এই মৌসুমে টানা ৩ ম্যাচে ৫০+ স্কোর করলেন ক্যারিবীয় তারকা।
এর আগে কলকাতার ইনিংসেও ছিল স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি। মুজিব জাদরানের বলে আউট হয়ে যাওয়ায় আজ আর ঝড় তুলতে পারেননি নারাইন, তবে সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন কলকাতার অন্যতম বড় ভরসা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ক্রিস লিন। শুরুতে জাদরানের স্পিনে একটু খাবি খাচ্ছিলেন, কিন্তু রবিন উথাপ্পা এসে জাদরানের এক ওভারে ৩ চারে ১৫ রান তুলে তাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে দিলে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন লিন।
৬ ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে কলকাতা পৌঁছে যায় ৫০ রানে। এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিন ১০ ইনিংসে পঞ্চমবারের মতো উথাপ্পাকে আউট করেন। ইনফর্ম ব্যাটসম্যান নীতিশ রানাও ফিরে যান লিনের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে। এরপর বাঁহাতি পেসার বারিন্দার স্রানকে চার বলের মধ্যে তিন বাউন্ডারি মারেন লিন। শেষ পর্যন্ত ৬ চার ও ৪ ছয়ে ৪১ বলে ৭৪ করে স্বদেশী অ্যান্ড্রু টাইয়ের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি।
লিন ফিরে গেলেও আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক, আন্দ্রে রাসেল ও শুবমান গিল। ১৮ ওভার শেষেও কলকাতার রান ছিল ১৮০, রান তখন সহজেই ২০০ ছাড়ানোর কথা। কিন্তু শেষ দুই ওভার থেকে মাত্র ১১ রান তুলতে পারলো কার্তিকের দল, এতেই মানসিকভাবে অনেকটা এগিয়ে যায় প্রীতি জিনতার পাঞ্জাব।
১৯১ রানের বড় স্কোরও সেদিন মামুলি হয়ে যায়, যেদিন গেইল ছন্দে থাকেন। আজ গেইলের সাথে ছন্দে ছিলেন রাহুলও। দুজনে মিলে তুলে নেন টানা ৩য় ফিফটি প্লাস ওপেনিং জুটি পার্টনারশিপ। শিভম মাভি ও আন্দ্রে রাসেলের করা প্রথম দুই ওভারের প্রথম দুই বল থেকেই বাউন্ডারি তুলে নিয়ে গেইলকে নির্ভার হয়ে খেলার সুযোগ দেন রাহুল। মাভিকে দেখেশুনে খেললেও স্বদেশী রাসেলকে বাউন্ডারি মেরেই শুরু করেন গেইল। এই ম্যাচের আগে আইপিএলে রাসেলের ৩০ বল থেকে ৫০ রান নিয়েছিলেন গেইল, দ্রুতই সেটিকে নিয়ে তুললেন ৩৭ বলে ৭১ এ। এরপর রাসেল পায়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে আর দুই ক্যারিবীয়ের দ্বৈরথ দেখা যায়নি।
নবম ওভারে বৃষ্টি যখন হানা দিলো, পাঞ্জাব তখন এরই মধ্যে তুলে ফেলেছে ৯৬ রান। বৃষ্টি থামার পরে মাত্র ২৮ বলে ২৯ রান লাগতো পাঞ্জাবের, প্রথম বলেই ছয় মেরে নিজের ফিফটি পূর্ণ করার পাশাপাশি সমীকরণটাও আরও সহজ করে দেন গেইল। শেষ পর্যন্ত ১১ বল বাকি থাকতে ৯ উইকেটের দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাঞ্জাব। এই জয়ে আপাতত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানেও উঠে গেছে দলটি।