আজকাল বিভিন্ন খাবারের দোকানগুলোয় অন্যান্য খাবারের চেয়ে পিজ্জার প্রতি মানুষের আগ্রহ তুলনামুলকভাবে বেশী।ছেলে,বুড়ো,তরুণ তরুণী থেকে শুরু করে সবার পছন্দের তালিকাতেই রয়েছে এই পিজ্জা।বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও গ্রুপিং করে জানানো হচ্ছে কোন রেস্তোরাঁর পিজ্জা কেমন খেতে।কি এমন আছে এই খাবারটাতে? ভুল হল,জিজ্ঞেস করা দরকার কি নেই এই পিজ্জাতে! সুস্বাদু নরম গলে যাওয়া হলুদ পনিরের আস্তরণ,মাংস,পিপারনি কি নেই এতে!! এখনকার যুগের এই সুস্বাদু পিজ্জার মত এতসব কিন্তু আগেকার দিনের পিজ্জাগুলোতে থাকতো না।কি বললেন? আগেকার যুগে তবে পিজ্জা কেমন ছিল? সেটা জানতেই চলুন দেখে নেই এক ঝলকে পিজ্জার ইতিহাস।
পিজ্জার অগ্রদূত সম্ভবত ফোকাস্কিয়া,প্যানিস (focacius) হিসাবে রোমানদের পরিচিত একটি ফ্ল্যাট রুটি,যাতে পরবর্তীতে টপিংস
(toppings)যোগ করা হয়।মডার্ন পিজ্জার বিকাশ ঘটে ন্যাপলসে,যখন টমেটো ১৮ শতকের শেষের দিকে ফোকাক্সিয়াতে যোগ করা হয়েছিল।
“পিজ্জা” শব্দটি সর্বপ্রথম গায়টাতে অ্যাড ৯৯৭এ এবং সেন্ট্রাল ও সাউদার্ন ইতালির বিভিন্ন অংশে ক্রমানুসারে উপস্থাপিত হয়েছিল।মূলত ইতালি এবং সেই দেশে অবস্থানরত অভিবাসীরা পিজ্জা খেতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি পরিবর্তিত হয়ে যায় যখন ইতালিতে নিযুক্ত ইতালীয় সৈন্যরা
ইতালীয় খাবারের সাথে পিজ্জা খাওয়া শুরু করে।নেপলিয়ান রা এমন কিছু একটা আবিষ্কারের চেষ্টায় ছিলেন যা তারা খুব সহজেই যেকোনো
সময়ে খেতে পারবে এবং যেটা তাদের রেস্তোরাঁ তে সুলভে পাওয়া যাবে। তাই তারা সেদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পাতলা এক রুটির উপর বিভিন্ন কিছুর টপিংস দিয়ে পিজ্জা বিক্রি শুরু করেন। সেই পিজ্জা,যেটা আজ স্বাদযুক্ত সুস্বাদু এবং নানাপ্রকারের গারনিশ যেমন টমেটো,চিজ,তেল,গারলিক ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি।
মডার্ন পিজ্জা সর্বপ্রথম ইতালির ন্যাপলসের বাবুর্চি রাফায়েলে এস্পোসিতো রাজা উম্বারতো ও রানী মারগারিতা সেভয়ের সেদেশে আগমন উপলক্ষে তৈরি করেন। পিজ্জাটি খুবই গুরুত্ববহ ছিল,যা তৈরি হয়েছিল সবুজ বাসিল পাতা,সাদা মজ্জারেলা চিজ এবং লাল টমেটোর সমন্বয়ে, যার রঙ ইতালিয়ান পতাকার রঙ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এই পিজ্জার নামকরন রানি মারগারিতার নামের সাথে মিল রেখে “পিজ্জা মারগারিতা” রাখা হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পিজ্জা অনেক আগ থেকে জনপ্রিয়তা পেলেও ২০০০ সালের মধ্য দিকে ডমিনস এবং পিজ্জা হাট চালু হবার মাধ্যমে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে পিজ্জা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
প্রতিবারই পিজ্জার টপিংসে নিত্য নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে।টপিংস হচ্ছে পিজ্জার রুটির উপর বিভিন্ন ধরনের লেয়ার; যেমন, চিজ, টমেটো,গারলিক,পিয়াজ, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি দিয়ে ওভেনে বা চুলায় বেক করা।এই টপিংসই একটি পিজ্জার মূল উপাদান,যার জন্য পিজ্জা হয়ে ওঠে আর সুস্বাদু এবং মজাদার। বেশ কিছুদিন আগে চকোলেট পিজ্জাও বাজারে এসেছে।বুঝাই যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষ পিজ্জার বিষয়ে কতটা আগ্রহী।
বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এখন নানা ধরনের সুস্বাদু ভিন্ন মাত্রার পিজ্জা পাওয়া যাচ্ছে খুব সুলভ মূল্যে। বাংলাদেশের লা পিজ্জারিয়া, পিজ্জা হাট,ভুতের বাড়ি রেস্তোরাঁ, গ্র্যাডিয়েন্ট সহ বিভিন্ন রেস্তোরাঁ তে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন স্বাদের পিজ্জা মানুষ উপভোগ করতে পারছে খুব সহজেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও থিন ক্রাস্ট পিজ্জা, ডাবল চিজ পিজ্জা,চিকেন বিফ ভেজিটেবল পিজ্জা সহ সকল ধরনের পিজ্জা পাওয়া যাচ্ছে।
তো আর দেরি কেন? পরিবার পরিজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে আজই চলে যান পিজ্জার মুখরোচক সব স্বাদ উপভোগ করতে!
পিজ্জা সম্পর্কে আরও জানতে ঘুরে আসুন ঃ
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_pizza
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_pizza_varieties_by_country#Bangladesh
http://www.corleone.com.au/pizzainfo.html
https://www.history.com/news/hungry-history/a-slice-of-history-pizza-through-the-ages