আবাহনী ক্রীড়া চক্রের শিরোপা উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এই বছরের ঢাকা প্রিমিয়র লীগ। ভবিষ্যৎ তারকাদের উঠে আসার মঞ্চ হিসেবে ধরা হয় এই লীগকে। প্রতি বছরই এই লীগ দিয়ে উঠে আসেন প্রতিভাবান কিছু ক্রিকেটার, পরবর্তী সময়ে যারা দেশকে সেবা দিয়ে থাকেন। এবারের প্রিমিয়ার লীগও ব্যতিক্রম নয়, বেশ কিছু তরুণ ক্রিকেটার দ্যুতি ছড়িয়েছেন। তেমনি পাঁচ ক্রিকেটারকে নিয়ে আজকের আয়োজন।
নাজমুল হোসেন শান্ত (আবাহনী):
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে পরিচিতি পাওয়া নাজমুল এবারের লীগে ছিলেন বিধ্বংসী ফর্মে। আবাহনীর শিরোপা জয়ের পেছনে মাশরাফি ও এনামুল হক বিজয়ের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় অবদান ওপেনিংয়ে খেলা এই ব্যাটসম্যানের। সব মিলিয়ে লীগে চারটি সেঞ্চুরি করেছেন এবার, যার শেষটি লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জের বিপক্ষে। পুরো লীগ জুড়েই ধারাবাহিক ব্যাটিং করা নাজমুল হয়েছেন লীগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, রান করেছেন ৭৪৯। স্ট্রাইক রেট ও ছিল আকর্ষণীয়, ৯৭.৫২। ৫০০ এর বেশি রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেবল নুরুল হাসান সোহানের স্ট্রাইক রেটই নাজমুলের চেয়ে বেশি। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ব্যাটিং কাণ্ডারি হিসেবে ধরা হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তকে।
নাইম হাসান (গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স):
গত জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল তরুণ অফ স্পিনার নাইম হাসানের নাম। কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি বটে, কিন্তু নাইম যে লম্বা রেসের ঘোড়া হবেন, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন এবারের লীগেও।
লীগ জুড়েই ধারাবাহিকভাবে এক জায়গায় বোলিং করে গেছেন নাইম। নিয়েছেন ২৩ উইকেট, তবে এর চেয়েও বেশি যেটা নজর কেড়েছে সেটা তার ইকোনমি রেট। আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেঁধে রেখেছিলেন ব্যাটসম্যানদের, ওভার প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৪.৭ করে। সেরা বোলিং ফিগার ৫৩ রানে ৪ উইকেট। গাজী গ্রুপের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম থেকে বের হওয়ার পরপরই নাইম কঠোর পরিশ্রম শুরু করে দিয়েছিলেন। আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ (বিসিএল) এর বাকি ম্যাচগুলোতেও নিজেকে ঝালিয়ে নিতে চাইবেন এই তরুণ অফ স্পিনার।
মহিদুল ইসলাম (খেলাঘর):
উইকেটকিপারদের মধ্যে এবারের লীগে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন লীগের চমক খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির কিপার মহিদুল ইসলাম। ১৬ ম্যাচে ৪০.৬০ গড়ে রান করেছেন ৬০৯। শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, নিজের আসল কাজ কিপিংয়েও উজ্জ্বল ছিলেন আনকোরা এই তরুণ। ২৮ টি শিকার করে এখানেও শীর্ষে মহিদুল। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েওএ ভালো কিছু করে দেখাতে পারেননি এই কিপার ব্যাটসম্যান, ৩ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ৩৫ রান।
আগামী আসরের প্রিমিয়ার লীগে খেলাঘরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পেছনে বড় অবদান ছিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ও অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে মহিদুলের ৮৫ ও অপরাজিত ১১৫ রানের ইনিংস দুটির। গাজী গ্রুপ ও রুপগঞ্জের বিপক্ষে করেছেন আরও ৩ টি ফিফটি। বড় দলের বিপক্ষেই বেশিরভাগ রান করে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ জানান দিয়েছেন মহিদুল।
মোহাম্মদ নাইম (লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জ):
সর্বশেষ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের আরেক খেলোয়াড় নাইম, যিনি আলো ছড়িয়েছেন এবার প্রিমিয়ার লীগে। মহিদুলের মত নাইমও বিশ্বকাপে ভালো করতে পারেননি খুব একটা। লীগের শীর্ষ দশ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ছিলেন নাইম, ১২ ইনিংসে করেছেন ৫৫৬ রান। রুপগঞ্জের একাদশে মোটামুটি নিয়মিত নাম ছিল নাইম। শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ৯৩ ও খেলাঘরের বিপক্ষে ৮২ রানের ইনিংসের পর শেষ দিনে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর বিপক্ষে করেছেন ৭০ রান।
শর্ট বলে এখনো কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও রুপগঞ্জ কোচ মঞ্জুরুল ইসলামের মতে, নিজের খেলায় উন্নতি আনার মত চেষ্টা নাইমের মধ্যে আছে।
রবিউল হক (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব):
পুরো লীগ জুড়েই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন তরুণ পেসার রবিউল, মাত্র ১৬.৬৬ গড়ে নিয়েছেন ২৭ উইকেট। ইকোনমিও যথেষ্ট ভালো, ওভার প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৪.৪৭ করে। রুপগঞ্জের বিপক্ষে পেয়েছেন একমাত্র ৫ উইকেটটি, আবাহনীর বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এরই মধ্যে হাইপারফরমেন্স ইউনিটে ডাক পেয়েছেন, সামনে জাতীয় দলেও নিজেকে দেখতে চাইবেন রবিউল।