গত জুনে লিভারপুল যখন ৪২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে সালাহকে দলে টানার কথা ঘোষণা দেয়, ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকেই। আগের মেয়াদে প্রিমিয়ার লীগে ব্যর্থ হওয়া একজন ফুটবলারের জন্য এত অর্থ খরচ করা আদৌ যুক্তিযুক্ত হবে কিনা, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। মৌসুমের প্রায় শেষভাগে এসে তাদের এখন কী অবস্থা? সালাহ যে সবার মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন!
লিভারপুলে সালাহর রেকর্ড:
গত ৩১ মার্চ ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করেই রেকর্ডের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন এই মিশরীয় সুপারস্টার। গোলটি ছিল প্রিমিয়ার লীগে এই মৌসুমে সালাহর ২৯ তম গোল, সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে অলরেডদের জার্সি গায়ে তাঁর ৩৭ তম গোল। প্রিমিয়ার লীগ শুরু হওয়ার পর থেকে কোন লিভারপুল ফুটবলারের পক্ষে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড দখল নিয়ে নিয়েছেন সালাহ। এর আগে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ৩৬ গোল করেছিলেন রবি ফাউলার। ম্যাচ সংখ্যা দেখলে বিস্মিত হতে হবে আরও। রেকর্ড ভাঙতে সালাহর খেলতে হয়েছে মাত্র ৪১ ম্যাচ, ফাউলারের যেখানে লেগেছিল ৫৩ ম্যাচ।
রেকর্ড আছে আরও। লিভারপুলের হয়ে অভিষেক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটিও ফার্নান্দো তোরেসের থেকে কেড়ে নিয়েছেন সালাহ। ২০০৭-০৮ মৌসুমে লিভারপুলের জার্সি গায়ে নিজের প্রথম মৌসুমে ৩৩ গোল করেছিলেন তোরেস, সালাহর এরই মধ্যে হয়ে গেছে ৩৯ গোল।
প্রিমিয়ার লীগে করা ২৯ গোলের মধ্যে ২২ টিই করেছেন নিজের শক্তিশালী বাঁ পা দিয়ে। প্রিমিয়ার লীগে এক মৌসুমে বাঁ পায়ে এত গোল করতে পারেননি আর কোন ফুটবলার। প্রিমিয়ার লীগে মিসরীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিকও সালাহ, ২২ গোল করা মিডোকে ছাড়িয়ে গেছেন বেশ আগেই। ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে চার গোল করে প্রিমিয়ার লীগে এক ম্যাচে তিন বা এর বেশি গোল করা প্রথম মিসরীয় খেলোয়াড়ও হয়ে গেছেন সালাহ।
গণ্ডিটা শুধু মিসরে আটকে না রেখে পুরো আফ্রিকায় ছড়িয়ে দিলে সেখানেও সালাহর জয়জয়কার। কোন আফ্রিকান ফুটবলারের পক্ষে প্রিমিয়ার লীগের এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডে এরই মধ্যে বসে গেছেন দিদিয়ের দ্রগবার পাশে। এর আগে ২০০৯-১০ মৌসুমে চেলসিকে শিরোপা জানানোর পথে ২৯ গোল করে রেকর্ড করেছিলেন দ্রগবা। সালাহর সামনে সুযোগ থাকছে দ্রগবাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
৩৮ ম্যাচের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচে গোল করার রেকর্ড আছে রোনালদো ও রবিন ফন পার্সির। সালাহ এরই মধ্যে পাশে বসে গেছেন এই দুজনেরই। দুজনকেই ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে তাঁর সামনে। প্রিমিয়ার লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াইয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা হ্যারি কেনের চেয়ে এগিয়ে আছেন ৫ গোলে।
সালাহর উত্থান:
তবে সালাহর উত্থানের গল্পটা এত মসৃণ ছিল না। ১৯৯২ সালের ১৫ জুন মিসরের গারবিয়া প্রদেশের নাগরিগ গ্রামে জন্ম নেয়া সালাহ ফুটবলের প্রেমে পড়েন মাত্র সাত বছর বয়সেই, ভাই-বন্ধুদের খেলতে দেখে। ১৪ বছর বয়সে যোগ দেন মিসরীয় ক্লাব এল মোকাওলুনে। কিন্তু তার জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তাঁকে। অনুশীলন করার জন্য সপ্তাহে পাঁচ দিন সাড়ে চার ঘণ্টার কষ্টকর যাত্রা করতে হতো তাঁকে। স্কুলে দুই ঘণ্টার বেশি সময় দিতে পারতেন না, দুপুর দুইটার মধ্যে পৌঁছাতে হত অনুশীলনে। ফুটবলার হওয়ার অদম্য বাসনার জন্য জলাঞ্জলি দিতে হয় তাঁর পড়াশোনাকে।
এক অনুশীলনে যেতেই কয়েকবার বাস বদল করতে হতো সালাহকে। কিন্তু এগুলোও তাঁর কাছে কোন কষ্ট মনে হয়নি, কারণ তাঁর ফুটবলার হওয়ার তুমুল ইচ্ছা। নিজের উপর অনেক আস্থা ছিল সালাহর। সেটিই ১৪ বছর বয়সে সালাহকে এত পরিশ্রম করার অনুপ্রেরণা যোগাত। ২০১০ সালের ০৩ মে এল মোকাওলুনের মূল দলে অভিষেক হয় সালাহর।
তবে শুরুতে কিন্তু সালাহ রাইট উইঙ্গার পজিশনে খেলতেন না, খেলতেন লেফট ব্যাকে। গ্যারেথ বেলের মত সালাহর এরকম রুপান্তরের গল্প শুনিয়েছেন তাঁর সাবেক কোচ সাঈদ আল শিশিনি। একবার অনূর্ধ্ব ১৬ কায়রো লীগে এক ম্যাচে পাঁচটি ওয়ান টু ওয়ানের সুযোগ পেয়েছিলেন লেফট ব্যাক হিসেবে খেলা সালাহ। কিন্তু গোল করতে পারেননি একটি থেকেও, কারণ লেফট ব্যাক থেকে বারবার ওঠা নামা করতে করতে এনার্জি হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। ওই ম্যাচের পর তুমুল কান্নাকাটি করেছিলেন সালাহ। শিশিনি তখন তাঁকে ২৫ মিশরীয় পাউন্ড দিয়ে বলেন, এবার থেকে তুমি উপরে খেলবে, দেখবে অনূর্ধ্ব ১৬ স্থানীয় লীগে তো বটেই, তুমি সর্বোচ্চ গোলদাতা হবে দেশব্যাপী হওয়া অনূর্ধ্ব ১৭ লীগেও। কোচের কথা সত্যি প্রমাণিত হতে সময় লাগেনি বেশি, পরের মৌসুমেই ৩৫ গোল করে কোচের কথার মর্যাদা রাখেন সালাহ।
বাসেলে সালাহ:
মূল দলের হয়ে মোটামুটি নিয়মিত হয়ে গিয়েছিলেন সালাহ, কিন্তু ২০১২ সালে পোর্ট সাইদ স্টেডিয়াম ট্র্যাজেডির পর লীগের বাকি অংশ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সুইস ক্লাব বাসেল তখন মিশর অনূর্ধ্ব ২৩ দলের সাথে এক প্রীতি ম্যাচ খেলে, শুধু দ্বিতীয়ার্ধে খেলেই জোড়া গোল করে দলকে ৪-৩ গোলে জেতান সালাহ। বাসেল এরপর সালাহকে এক সপ্তাহের অনুশীলনের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। ওই অনুশীলন সেশনে সালাহকে দেখে মুগ্ধ হয়ে চার বছরের চুক্তি করে নেয় সুইস ক্লাবটি।
সালাহর নিজেকে মেলে ধরার জন্য বাসেল ছিল একদম উপযুক্ত জায়গা। ইউরোপের অন্য লীগগুলোর মত সুইস লীগ এত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লীগে মোটামুটি নিয়মিত মুখ ছিল বাসেল। সালাহ তাই ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ে নিজেকে ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়ে গেলেন। সেন্ট জ্যাকব পার্কের দর্শকদের মুগ্ধ করলেন ২০১২-১৩ মৌসুমে ইউরোপা লীগে টটেনহামকে হারানো ম্যাচে, সালাহর গোলেই খেলা পেনাল্টিতে যাওয়ার পর স্পার্সদের হারিয়ে সেমিতে ওঠে বাসেল।
সেমিতে চেলসির মুখোমুখি হয় বাসেল। প্রথম লেগে অ্যাশলি কোল সালাহকে বোতলবন্দী করে রাখলেও দ্বিতীয় লেগে নিজের জাত চেনান সালাহ। কোলকে নাটমেগ করেন, গোলও করেন একটা। বাসেল হেরে গেলেও নিজের জাত চেনাতে ভুল করেননি সালাহ।
পরের চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ভাগ্যক্রমে আবারো চেলসির মুখোমুখি হয় বাসেল। শালকে, স্টুয়া বুখারেস্ট ও চেলসির সাথে একই গ্রুপে পড়ায় অনেকেই বাসেলের সম্ভাবনা নাকোচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বড় মঞ্চে সালাহ নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করলেন। সালাহ নৈপুণ্যে চেলসির সাথে হোম অ্যাওয়ে দুই ম্যাচেই জয় পায় বাসেল।
চেলসিতে সালাহর অপচয়:
গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ায় শীতকালীন দলবদলে ক্লাব ছাড়তে চান সালাহ। নিজেদের বিপক্ষে অমন পারফরম্যান্স দেখার পর সালাহকে দলে টানার সুযোগটা মিস করতে চায়নি ব্লুজরা, ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে নিয়ে আসে মিশরীয় ফুটবলারকে।
সালাহকে নিয়ে এলেও তাঁকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি চেলসি। সালাহর সামর্থ্য সম্পর্কে চেলসি জানত ঠিকই, কিন্তু তাঁকে সেরা একজন উইঙ্গারে পরিণত করতে যা যা করা দরকার, তা করতে পারেনি চেলসি। মৌসুমের বাকি সময়টায় ভালোই খেলেছিলেন সালাহ, আর্সেনালের বিপক্ষে লন্ডন ডার্বিতে ৬-০ গোলের জয়ে প্রথম গোলটাও করেছিলেন।
কিন্তু ২০১৪-১৫ মৌসুমে সালাহকে ব্যবহারে অনিচ্ছা দেখা যায় চেলসি বস মরিনহোর মধ্যে। ম্যানেজারকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে অতিরিক্ত চেষ্টা করা শুরু করে দেন সালাহ, কিন্তু কাজে আসেনি তা। সালাহর জায়গায় এলেন কুয়াদ্রাদো, সালাহ ধারে গেলেন ফিওরেন্টিনায়।
সিরি আতে সালাহ জাদু:
চেলসিতে যেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, সেটা ইতালিতে গিয়ে পুষিয়ে দিলেন সালাহ। ফিওরেন্টিনায় কুয়াদ্রাদো যতটা কার্যকরী ছিলেন, তার চেয়েও অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে উঠলেন সালাহ। কোপা ইতালিয়ার প্রথম লেগে জুভেন্টাসের বিপক্ষে করলেন দুই গোল। ওই ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে ইতালিয়ান প্রেসের মন জয় করে নিলেন সালাহ।
ফিওরেন্টিনা ভক্তদের খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ২৬ ম্যাচে ৯ গোল করা সালাহ, কিন্তু চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতায় ইতালিয়ান ক্লাবটিতে আর থাকা হয়নি তাঁর। দল বদলে চলে এলেন রোমায়। নতুন দলের হয়ে ফিওরেন্টিনার মাঠে খেলতে এলেন সালাহ, ভক্তরা তাঁকে খুব একটা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাননি। কিন্তু সালাহ তার জবাব দিলেন ফিওরেন্টিনারই মাঠে দারুণ এক গোল করে ফিওরেন্টিনার অপরাজিত থাকার যাত্রা থামিয়ে দিয়ে।
গোল তিনি নিয়মিতই করতেন, কিন্তু রোমায় এসে নিজেকে যেন নতুনভাবে আবিষ্কার করলেন। ২০১৫/১৬ মৌসুমে ৪২ ম্যাচে করলেন ১৫ গোল, পরের মৌসুমে ৪১ ম্যাচে ১৯ টি। নিজের পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ হলেন রোমার মৌসুম সেরা ফুটবলার। সিরি আ’র মত লীগে পারফর্ম করে নিজের ট্যাক্টিকাল দিকগুলোতেও অনেক উন্নতি এল সালাহর। এমন পারফরম্যান্সের পর সালাহকে নিয়ে টানাটানি হবে সেটা অনুমিতই ছিল। এবার সুযোগটা নিল লিভারপুল, দ্বিতীয়বার তাঁকে প্রিমিয়ার লীগে নিয়ে এসে।
আর লিভারপুলে এসে কি কি করেছেন এখনো পর্যন্ত, সেটা তো শুরুতেই বলা হল। সালাহর কাঁধে চেপেই দীর্ঘ ১৩ বছর পর ইউরোপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে লিভারপুল।
একদম সাধারণ অবস্থা থেকে উঠে এসেছেন বলেই কিনা, মিশরের ফুটবল আইকনে পরিণত হওয়ার পরেও মাটিতেই পা রেখে চলেছেন সালাহ। মিশরকে বিশ্বকাপে তোলা গোল করার পর মিশরের এক ব্যবসায়ী তাঁকে একটি বিলাবহুল ভিলা উপহার দিতে চেয়েছিলেন। সালাহ তার বদলে নিজ গ্রামের জন্য দান চেয়ে চেন ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। সালাহ মানুষটাই এমন, নিজের কথা না ভেবে সবসময় অপরের জন্যই ভেবেছেন যিনি। সালাহকে ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন তাঁর সাবেক কোচ শিশিনিও, ‘মিসরে অনেক ফুটবলার আছেন, একটু খ্যাতি পেলেই যারা বদলে যান। কিন্তু সালাহ ঠিক একই রকম আছে।’
সালাহকে হাতছানি দিচ্ছে যেসব রেকর্ড:
- ৩৮ ম্যাচের প্রিমিয়ার লীগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩১ গোলের রেকর্ড আছে ৩ জনের। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে অ্যালান শিয়ারার, ২০০৭-০৮ মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও ২০১৩-১৪ মৌসুমে লুইস সুয়ারেজ। এদের তিনজনকেই ছাপিয়ে গিয়ে রেকর্ডটা শুধু একার করে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ এখন সালাহর সামনে। লীগে ম্যাচ বাকি এখনো ছয়টা, মাত্র ৩ গোল করেই এককভাবে রেকর্ডের মালিক হয়ে যাবেন সালাহ।
- প্রিমিয়ার লীগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল প্লাস অ্যাসিস্টের রেকর্ডও হাতছানি দিচ্ছে সালাহকে। এই মৌসুমে এখনো পর্যন্ত লীগে ২৯ গোল ও ৯ অ্যাসিস্ট করেছেন সালাহ। ২০০২-০৩ মৌসুমে সর্বোচ্চ ৪৪ গোল প্লাস অ্যাসিস্ট (২৪ গোল, ২০ অ্যাসিস্ট) নিয়ে এই রেকর্ডের মালিক থিয়েরি অঁরি। গোল অ্যাসিস্ট মিলিয়ে আর ৭ বার স্কোরশীটে নাম উঠাতে পারলেই রেকর্ড করবেন সালাহ।
- লিভারপুলের ইতিহাসে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড করতে হলে সালাহকে করতে হবে আরও ১০ গোল। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ৪৭ গোল করেছিলেন ইয়ান রাশ।
দুর্দান্ত টিমম্যান সালাহ এরই মধ্যে হয়ে উঠেছেন লিভারপুল ও মিশরের প্রাণভোমরা, হয়তো বিশ্ব ফুটবলের পরবর্তী সেনসেশনও! নিজেকে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবেন কি না সেই প্রশ্ন আপাতত সময়ের হাতে তোলা থাক, এখন যে শুধুই সালাহ ম্যাজিক উপভোগ করার সময়!