ক্রিকেটের বরপুত্র বলা হয় তাঁকে। তাঁর মত বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান খুব কমই দেখেছে ক্রিকেট। নিজের দিনে যেকোনো বোলিংকে ছত্রখান করে দেয়ার সামর্থ্য তিনি রাখতেন। ওয়ার্ন হোক বা মুরালি, লি কিংবা শোয়েব- কেউই নিস্তার পাননি লারার আগ্রাসন থেকে। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের দখলে আছে দুর্দান্ত কিছু রেকর্ড। আজ প্রিয়লেখার পাতায় থাকছে ব্রায়ান চার্লস লারার সেরকমই কিছু রেকর্ডের কথা।
- লারার অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরি সিডনিতে। ইনিংসটিকে তিনি টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ২৭৭ পর্যন্ত। অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিতে সবচেয়ে বেশি রান করার তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছে লারার এই ইনিংসটি।
- প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৮ ইনিংসে ৭ সেঞ্চুরি পাওয়া পাওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান লারা। শুরুটা হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত ৩৭৫ দিয়ে, আর শেষ হয়েছিল অপরাজিত ৫০১ রানের ইনিংস দিয়ে।
- ম্যাথিউ হেইডেন তাঁর ৩৭৫ রানের রেকর্ড ভেঙে দেয়ার পর ২০০৪ সালে আবারও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০০ রানের ইনিংস খেলে হারানো রেকর্ড পুনরুদ্ধার করেন লারা। এই অমর ইনিংসটির মধ্য দিয়ে তিনি দুইটি ৩৫০+ রানের ইনিংস খেলা একমাত্র ব্যাটসম্যান হয়ে যান। এছাড়া ক্যারিয়ারে দুইটি কোয়াড্রুপল সেঞ্চুরি পাওয়া দ্বিতীয় ব্যাটসম্যানও হন লারা। আর দুইটি রেকর্ডই নিজের বগলদাবা করেছেন এমন ব্যাটসম্যান কেবল লারাই।
- সর্বোচ্চ ইনিংসের বিশ্বরেকর্ড দুইবার ভাঙা একমাত্র ব্যাটসম্যান লারা।
- লারাই একমাত্র ব্যাটসম্যান, যে কিনা একইসাথে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্কোর ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্কোরের মালিক।
- অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোরের মালিকও লারা (৪০০*)।
- এই ইনিংস দিয়েই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন বছরে ১০০০ টেস্ট রান করার বিরল রেকর্ডের মালিক হন লারা। তিনি অবশ্য প্রথম নন, তাঁর মাত্র ৫ দিন আগেই প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি করেছেন ম্যাথিউ হেইডেন।
- ইনিংস বিবেচনায় দ্রুততম ১০ ও ১১ হাজার রান করার রেকর্ড লারার। ১০ হাজার রানের রেকর্ডের ক্ষেত্রে টেন্ডুলকার সঙ্গী হিসেবে থাকলেও দ্রুততম ১১ হাজার রানের মালিক কেবলই লারা।
- ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরি তাঁর।
- ক্যারিয়ারে মোট ৯ টি টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, কেবল স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও কুমার সাঙ্গাকারারই তাঁর চেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি আছে।
- টেস্টে দুইটি ট্রিপল সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান তিনি। সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে দুইটি ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে মোট ৪ জন ব্যাটসম্যানের- স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ব্রায়ান লারা, বীরেন্দর শেবাগ ও ক্রিস গেইল।
- সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে অন্তত একটি করে টেস্ট সেঞ্চুরি আছে তাঁর। ২০০৫ সালে কেনসিংটন ওভালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে এই চক্র পূরণ করেন তিনি।
- এক সেশনে সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান ছিলেন লারা।
- লারার ক্যারিয়ারের উজ্জ্বলতম অধ্যায়গুলোর একটি ২০০১-০২ এর শ্রীলঙ্কা সফর। সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোয়াইটওয়াশ হলেও শ্রীলঙ্কান বোলারদের বিপক্ষে বলতে গেলে একাই লড়ে গেছেন লারা। ৩ ম্যাচের ৬ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটি সহ রান করেছেন মোট ৬৮৮, সর্বোচ্চ স্কোর ২২১। ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। ৩ ম্যাচের ৬ ইনিংসে ৭৫২ রান নিয়ে সবার উপরে আছেন ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচ। ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে এই রেকর্ড করেছিলেন তিনি। সিরিজে লারার গড় ছিল ১১৪.৬৭।
- ওই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোট রানের ৪২% রান একাই করেছিলেন লারা। ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য যা বিশ্বরেকর্ড।
- একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ডের মালিক লারা, টেস্ট ইতিহাসই যে ঘটনা দেখেছে আর মাত্র ৬ বার। লারা ছাড়া এই কীর্তি আছে গ্রেগ চ্যাপেল, সুনীল গাভাস্কার, গ্রাহাম গুচ, লরেন্স রো ও ডগ ওয়াল্টার্সের।
- টেস্টে পরাজিত দলের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড লারার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই সিরিজেই কলম্বো টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৫১ রান করেছিলেন লারা (২২১+১৩০), কিন্তু ম্যাচটা শ্রীলঙ্কাই জিতেছিল ১০ উইকেটে।
- এই কলম্বো টেস্টেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোট রানের ৫৩.৮৩% রান একাই করেছিলেন লারা (৬৫২ রানের মধ্যে ৩৫১ রান), যা কিনা বিশ্বরেকর্ড। আগের রেকর্ডটি ছিল সাউথ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান জিমি সিনক্লেয়ারের, ১৮৯৮-৯৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১.৮৮%।
- ১৬৪ ক্যাচ নিয়ে উইকেটকিপার ছাড়া আউটফিল্ডারদের মধ্যে ৮ম সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড লারার। ২১০ ক্যাচ নিয়ে সবার উপরে আছেন রাহুল দ্রাবিড়। ১৫৯ ক্যাচ নিয়ে লারাকে অবশ্য ভালই তাড়া করছেন অ্যালিস্টার কুক।