হারিকিরি: সামুরাইদের সম্মান রক্ষার্থে আত্মহত্যার অদ্ভুত এক রীতি – Creative IT Blog
Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611
Home / ইতিহাস / হারিকিরি: সামুরাইদের সম্মান রক্ষার্থে আত্মহত্যার অদ্ভুত এক রীতি

হারিকিরি: সামুরাইদের সম্মান রক্ষার্থে আত্মহত্যার অদ্ভুত এক রীতি

১১৮০ সালের শুরুর দিকের কথা, জাপানে তখন চলছে প্রথম ব্যাটল অফ উজি বা উজি যুদ্ধের প্রথম পর্ব। সদ্য সিংহাসনে আরোহণ করা রাজকুমার মোচিহিতোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে তায়রারা। তায়রাদের প্রতিহত করতে মিনামোতো সেনাবাহিনীর সহায়তা নেন মোচিহিতো। শ’খানেক সৈন্য নিয়ে উজি নদী পার হয়ে নদীর উপরে নির্মিত সেতুটি তারা ধ্বংস করে দেন যাতে তায়রারা তাদের পিছু নিতে না পারে। কিন্তু তাদাৎসুনা নামে এক বীর যোদ্ধা তায়রাদের পক্ষে লড়ছিল। তার বাবা নিহত হয় রাজকুমার মোচিহিতোর বাবার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। তারই প্রতিশোধ নিতে ভিন্ন পথ ধরে রাজকুমারের সৈন্যদের প্রায় আটকে ফেলে তাদাৎসুনা ও তার দল।

পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে সামুরাই দল মিনামোতোর সৈন্যরা তৎক্ষণাৎ আত্মসম্মান রক্ষার্থে হারিকিরির পথ বেছে নেয়। তারা আত্মহত্যা করলেও রাজকুমার মোচিহিতো ঠিক বুঝতে পারছিলেন না এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিৎ। তার হতবিহ্বল অবস্থার কারণে খুব দ্রুতই ধরা পড়েন তিনি এবং তাদাৎসুনা তথা তায়রা সৈন্যদের হাতে নিহত হন। পরবর্তীতে তায়রা আর মিনামোতো দলের পারস্পারিক সংঘর্ষের কারণে জাপানের বিখ্যাত গেংপেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

জাপানের ইতিহাসে উজির যুদ্ধ ছিল হারিকিরির প্রথম উদাহরণ। কেউ কেউ এই রীতিটিকে বলেন হারাকিরি, কেউবা বলেন হারিকিরি। জাপানি ভাষা অনুসারে শব্দটি আসলে ‘সেপ্পুকু’। মূলত সামুরাইদের একটি প্রাচীন আত্মঘাতী প্রথা এটি। শত্রুদের হাতে ধরা পড়ার অপমান থেকে বাঁচতে বা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হওয়ার ভয় থাকলে আত্মহননের জন্য সেপ্পুকুর আশ্রয় নিতেন সামুরাইরা। ট্যান্টো নামক এক ধরনের ধারালো ছুরি তলপেটে ঢুকিয়ে বাম থেকে ডানে সমান্তরালে চিরে ফেলার পদ্ধতির নাম হারিকিরি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দর্শকদের সামনে রেখেই এ কাজ করতেন আত্মহননকারীরা। হারিকিরির পথ বেছে নেয়া সামুরাইদের বেশ সমাদর ছিল জাপানি সমাজে।

উজির যুদ্ধে তো মিনামোতোরা আকস্মিকভাবে হারিকিরির পথ বেছে নিতে বাধ্য হন, তবে পূর্বপরিকল্পিতভাবেও অনেকে হারিকিরি করতেন। বিশেষ করে শাসক পরিবর্তনের পর যদি কোনো সামুরাইকে তার পদমর্যাদা থেকে সরিয়ে দেয়া হতো, তবে এই অপমানের জবাব দিতে তিনি হারিকিরির আশ্রয় নিতেন। যদি কোনো সামুরাই আগে থেকে হারিকিরি করার সংকল্প নিতেন, তাকে ঘিরে বেশ এক ধরনের উৎসবের আমেজ তৈরি হতো। তার বাড়িতে বা আত্মাহুতি দেয়ার স্থানে জমায়েত হতো অসংখ্য মানুষ। পরিপাটি করে গোসল করানো হতো তাকে। খাওয়ানো হতো তার পছন্দের সব খাবার। তারপর একটি নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে দেয়া হতো তাকে, সামনে থাকত ট্যান্টো। অলিম্পিকে আমরা যেমন চিকন আর ধারালো র‍্যাপিয়ার নামক তরবারি নিয়ে অসিযুদ্ধ দেখি, ট্যান্টো দেখতে অনেকটা সেই র‍্যাপিয়ারের মতো ছিল। এই ট্যান্টো দিয়েই নিজের জীবনের ইতি টেনে দিতেন পরাজিত বা অপমানিত সামুরাই।

আবার অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর অপরাধের শাস্তি হিসেবেও হারিকিরির প্রচলন ছিল। সেক্ষেত্রে উপরের সবগুলো নিয়ম ঠিকমতো মানা হতো। তাছাড়া কাইশাকুনিন নামক একজন দক্ষ তলোয়ারবিদও সেখানে উপস্থিত থাকতেন, যার প্রধান কাজ অভিযুক্ত সামুরাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করা। সামুরাই যখন ট্যান্টো দিয়ে নিজের তলপেটে আঘাত করতেন, কাইশাকুনিন ঠিক একই সময়ে অন্য একটি তলোয়ার দিয়ে তার মাথায় এমনভাবে আঘাত করতেন যাতে ধড় থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেলেও সামান্য একটু সংযুক্ত অংশের সাহায্যে তা ঝুলতে থাকে। সামুরাইয়ের এই অবনত মাথা তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার প্রতীক বলে বিবেচিত হতো।

জাপানের নারীদের মধ্যেও প্রচলিত ছিল হারিকিরি। বিশেষত সামুরাইদের স্ত্রীরা সম্মান রক্ষার্থে, সম্ভ্রম বাঁচাতেও বেছে নেন হারিকিরি। ইংরেজিতে এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘জিগাই’। সামুরাই পরিবারের নারীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পরিবারের সম্মান। তাই সম্মানে বিন্দুমাত্র আঁচ আসার আগেই তারা গলায় ট্যান্টো দিয়ে এক পোঁচে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দিত। আত্মহননের পূর্বে তারা দড়ি দিয়ে পা বেঁধে নিত যাতে মৃত্যুর পরে সম্মানিত অবস্থায় তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বিশেষ করে, রাজাকে হত্যা করে ভিন্ন কোনো গোষ্ঠী যখন সাম্রাজ্য দখল করে নেয় তখন শুরুতেই পাশবিক লালসার শিকার হন নারীরা। এ কারণে তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেয়া হয় একটি বদ্ধমূল ধারণা – ‘শত্রুর হাতে লাঞ্চিত হওয়ার চেয়ে নিজ হাতে জীবন শেষ করে দেয়া অনেক সম্মানের’। কাজেই নব্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কুমতলবীরা যখন পৈশাচিক উল্লাসে অন্দরমহলে প্রবেশ করে, তখন তাদের চোখে পড়ে দরজার দিকে মুখ করে বসে থাকা নারীদেহ, মৃত নারীদেহ। প্রয়োজনবোধে দল বেঁধেও আত্মহত্যা করতেন নারীরা।

পরবর্তী বছরগুলোতে জাপানের রাজকর্মচারীদের মধ্যে হারিকিরি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আত্মাহুতির দিকে ঝুঁকে পড়েন প্রতিবাদী কিছু কর্মচারী। এখনকার দিনে সবকিছু নিয়ে যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠে যায়, তখন তো আর সেই সুবিধা ছিল না। কাজেই নিজেদের অধিকার আদায় করতে, কোনো একটি ইস্যুতে সর্বসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ করতে, দুর্নীতি দমনে- মোট কথা, মহান কোনো উদ্দেশ্য সাধনে হারিকিরি হয়ে ওঠে প্রতিবাদের পন্থা। ‘এনকার্টা’র তথ্যানুযায়ী, ১৮৬৮ সাল থেকে ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ১,৫০০ জাপানি স্বেচ্ছায় হারিকিরির পথ বেছে নেয়। এর মধ্যে অনেকগুলো আত্মহননের পেছনে কোনো কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার শুধুমাত্র ছুরি ব্যবহারের কারণে কিছু আত্মহননকে হারিকিরি নাম দিয়ে দেয়া হয়। আরেকদল কুচক্রী লোকজনকে সামুরাই স্টাইলে খুন করে হারিকিরির নাম দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি বেশ বেসামাল হয়ে উঠছিল। ব্যাপারটা দিন দিন সামুরাইদের রীতি থেকে পাগলামিতে পরিণত হচ্ছিল যেন। কাজেই জাপান সরকার একপ্রকার বাধ্য হয়ে ১৮৭৩ সালে হারিকিরি বা সেপ্পুকু আইনত নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।

জাপানের পপুলার কালচারে এখনো বেশ বীরত্বের সাথে উপস্থাপন করা হয় সেপ্পুকু এবং জিগাইকে। অনার সুইসাইড নাম্নী এই প্রক্রিয়াটিতে বিশেষত দাপটের সাথে রাজত্ব করে চলেছেন সামুরাই স্ত্রীরা। জাপানি সাহিত্য এবং সিনেমায় বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। এইজি ইয়োশিকাওয়ার ‘তাইকো’, ‘হিউম্যানিটি অ্যান্ড পেপার বেলুনস’, ‘রাশোমন’ প্রভৃতি গল্প-মুভিতে বলা হয়েছে হারিকিরির কথা। ১৯৭৫ সালে জেমস ক্ল্যাভেল তার ‘শাগুন’ নামক উপন্যাসে বেশ কয়েকবার এই আত্মহত্যা রীতির কথা উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে উপন্যাসটি অবলম্বনে নির্মিত টেলিভিশন সিরিজের ফলে পশ্চিমা বিশ্বে হারিকিরি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ‘দ্য লাস্ট সামুরাই’ মুভিতেও সেপ্পুকুর কথা উঠে এসেছে।

১৮৭৩ সালে জাপানে আইনের মাধ্যমে হারিকিরি বা সেপ্পুকু নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। সামুরাইদের দিন শেষ হয়ে গেলেও তাদের কিছু প্রথা এখনো মেনে চলতে পছন্দ করেন সাধারণ মানুষ। ১৯১২ সালে জাপানের বিখ্যাত রাজা মিইজির মৃত্যুর পর তার সেনাপ্রধান রাজার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হারিকিরির মাধ্যমে আত্মহনন করে। ১৯৯৯ সালে অফিসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর রাগ করে টোকিওতে হারিকিরির পথ বেছে নেন এক নির্বাহী অফিসার। এখন তো আর ট্যান্টো খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, তাই ফল কাটার ছুরি দিয়ে একই স্টাইলে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ আর গভীর ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসা নাড়িভুঁড়ির কারণে এ পদ্ধতিতে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। প্রায়শ্চিত্ত বা অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরূপ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই পদ্ধতিটি অমানবিকই বটে। প্রাচীনকালে সম্মান রক্ষার্থে এমন অনেক নায়কোচিত কাজ করতে দেখা যেত সামুরাইদের, এখন সেগুলোর প্র্যাকটিস না চালানোই ভালো।

About farzana tasnim

Check Also

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী নেতাদের নাম উঠলে একদম উপরের সারিতেই থাকবে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের নাম। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *